আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবাদের ব্যানার

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

জন্ম ও মৃত্যু সাল লিখতে লিখতে বিরক্তি ধরে গেছিল সুরুজ মিয়ার। আজিমপুর গোরস্থানের প্রধান গেটের ডান পাশেই তার দোকান। আলহাজ মোবারক আলী মিয়া, জন্ম ১৯৫৬, ২৩ শে আগষ্ট, মৃত্যু ২০০৮, ২৫শে ডিসেম্বর; মোসাম্মত জমিলা বানু, জন্ম ১৯৬০, ১লা মার্চ, মৃত্যু ২০০৮, ২৮শে নভেম্বর। এসবই লেখা। আগে বেশীরভাগ সময় জন্ম সাল লিখতে হতো ১৯৪০-৫০ এর মধ্যে।

এখন ১৯৫০-৬০ এর মধ্যে বেশী লিখতে হচ্ছে। সুরুজ মিয়া বলতে পারে এখন কোন দশকের প্রস্থানকাল চলছে। এই বয়সের বেশীরভাগ মানুষ মারা যায় শীতে। সুরুজ জানে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত দারুন ব্যবসা হবে। আলহাজ্ব, হাজী, সোমাম্মত, ডাক্তার, এডভোকেট, ব্যরিষ্টার এসব বানানের দিকে তার বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।

সবসময় সতর্ক থাকে, যেন কবর থেকে উঠে তাদের কষ্ট করে বলতে না হয়। মহা ঝামেলার কাজ। মানুষ মরে যাবার পরেও জায়গা দখল করে রাখে। এখন বোধহয় একটু শান্তি করা যাবে। বাহারী ব্যানার সাইনবোর্ড লেখার ধুম লেগেছে।

একঘন্টার মধ্যে লিখে দিতে হবে এমন বায়নাও থাকে। দাবী-দাওয়া বোধহয় বেশ উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। সুরুজের এসব হিসেব মেলানো আছে। এই বাহারী ব্যানারগুলো লেখার অর্ডার বেশী আসতে থাকে তখন জন্ম ও মৃত্যু সাল লেখায় একটা পরিবর্তন খেয়াল করে। ধাপ করে দুই দশক সামনে এগিয়ে আসে জন্ম সালগুলো।

যেমন কয়েক বৎসর আগে ব্যানার লেখার মৌসুমে যখন তার নিজ হাতে জন্ম-মৃত্যুর সাইনবোর্ড লেখার ফুরসত মিলছিলো না, সবচেয়ে বাজে সহচর যাকে দিয়ে সে বড় অক্ষরের মাঝখানের ফাকা অংশটা ভরাট করার কাজ দিয়েও উৎকণ্ঠত থাকে অক্ষর লেপ্টানোর আশংকায়, তাকে দিয়ে একেরপর এক সাইনবোর্ড লেখাচ্ছিল খেয়াল করে দেখেছে বেশীরভাগের জন্ম ১৯৭০-৮০র মধ্যে। তার কর্মচারী রবিউল এবারও উদগ্রীব। একক কাজের দায়িত্ব পাবার লোভে গোপন প্রতিভা দেখাতে বদ্ধ পরিকর। জিজ্ঞেস করে, ওস্তাদ, মৃতের ফলক লেখার কাম কবে পামু! সুরুজ মিয়া, প্রতিবাদ সভার স অক্ষরে লাল রঙের একটা আচড় দিয়ে বলে, পামু পামু! এই ব্যানারের পারেই দেখবি লাইন লাইগা যাবে! এবার ব্যবসার ভালো হাওয়া বইছে। যে ব্যানারগুলোতে বড় করে লেখা থাকে, প্রতিবাদ, শোক অথবা দাবীর কথা, সেগুলো লাকি।

ব্যানারগুলো নতুন ব্যানারের কাজ নিয়ে আসে। যেন আজকের লিখিত ব্যানার তার প্রচারণার হাতিয়ার। সুরুজের মাঝেমাঝে মনে হয়, তার লেখার মধ্যে এমন কিছু মাদকতা রয়েছে যা সে নিজেও জানে না। এই ব্যানারগুলো গর্জে ওঠে। যারা ব্যানার দেখে তারা সুরুজের লেখা নতুন ব্যানার পেতে হন্যে হয়ে ওঠে।

সুরুজের রক্ত গরম হয়ে ওঠে। কাজের উত্তেজনায়। মনযোগ দিয়ে লিখতে থাকে নির্ভুল শব্দে। ব্যানারের বৃহৎ বাক্য ও শব্দ তার কাছে জটিল লাগে। অথচ প্রতিটা অক্ষরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগ তার; এসব অক্ষরের মাঝে কেবল সম্ভাবনাই দেখে।

রবিউল জিজ্ঞেস করে, কেমনে ওস্তাদ! এই লেখার মধ্যে কি আছে? সুরুজের মনে হয় এই অক্ষরগুলো মিলিত হয়ে একটা আন্দোলন তোলে যার ফলাফল তার জন্য শুভ হয়ে ওঠে। এই মৌসুমী ব্যানার তাকে অনির্ধারিত সালের মৃত্যু ফলক লেখার বাণিজ্য দেয়। বলে, এই লেখাগুলা সব খুনী! বুঝছোস! এই ব্যানারগুলা মানুষ খুন করে! মানুষ না মরলে তুই লিখবি কি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।