আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থেমে গেল প্রতিবাদের কণ্ঠ

গত কিছুদিন ধরে অসুস্থ এই ফোক শিল্পী সোমবার নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন তার নাতি।

৯৪ বছরের জীবনের দীর্ঘ ছয়টি দশক পিট সিগার গানে গানে বিশ্বকে অস্ত্রমুক্ত করার, পৃথিবীর পরিবেশ আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রক্ষা করার, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা  করার দাবি জানিয়ে গেছেন।

এই অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখী হতে হয়েছে, তারপরও তিনি আবির্ভূত হয়েছেন তারুণ্যের ঘুম ভাঙানো এক শিল্পী হিসাবে।    

তার কণ্ঠে সংগীত বিশ্ব পেয়েছে ‘জাগো জোগো জাগো’, ‘আমার যদি একটা হাতুড়ি থাকত’ আর ‘ফুলগুলি কোথায় গেল’র মতো গান। বলা হয়, পিট সিগার, জোয়ান বায়েজসহ ওই সময়ের কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠের জাদুতেই ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানটি পুরো বিশ্বের প্রতিবাদী মানুষের জাতীয় সংগীতে পরিণত হয়।

 

১৯৯১ সালের ৩ মে ম্যানহাটনের এক প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান পরিবারে পিট সিগারের জন্ম। বাবা  চার্লস লুই সিগার নিজেও ছিলেন সংগীতজ্ঞ। মা কনস্ট্যান্স ডি ক্লিভার এডসন ছিলেন বেহালার শিক্ষক।

বাইবেলের শিক্ষা পিট সিগারের শিল্পী জীবনেও ছাঁপ রেখে গেছে; আমেরিকানদের জেগে ওঠার ডাক দিয়ে তিনি গেয়েছেন- ‘টার্ন, অ্যান্ড এ টাইম ফর এভরি পারপাস আন্ডার হেভেন, এ টাইম টু বিল্ড আপ, এ টাইম টু ব্রেক ডাউন…  আই সয়্যার, ইটস নট টু লেইট। ’

পিট সিগারের এই গান ১৯৬৫ সালে আমেরিকান টপ চার্টের শীর্ষে পৌঁছে যায়, পরে আরো অনেক শিল্পীর কণ্ঠে পায় নতুন নতুন মাত্রা।

 

 

১৯৪৮ সালে গানের দল ‘দ্য ওয়েভার্স’ গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রোতাদের মধ্যে পিট সিগারের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এরপর একনাগাড়ে ছয়দশক একেবারেই নিজস্ব ঢঙে গান শুনিয়ে গেছেন এই শিল্পী।

কিন্তু তার গানের প্রতিবাদী ভাষা সেই সময়ের শাসকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বামপন্থী অবস্থানের জন্য ১৯৫০-এর দশকে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে পিট সিগার হন নিষিদ্ধ।

এমনকি একবার মার্কিন সিনেটে দেশদ্রোহিতার অভিযোগও ওঠে এই শিল্পীর বিরুদ্ধে। তবে পরে আপিল করলে তুলে নেয়া হয় সেই অভিযোগ।  

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাঞ্জো আর গিটার বাজিয়ে চলতে থাকে পিট সিগারের শেকল ভাঙার গান। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আন্দেলন থেকে শুরু করে ২০১১ সালে ওয়ালস্ট্রিট দখল মুভমেন্টে- সব মিছিলেই শ্লোগান হয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে তার সংগীত।

পিট সিগারের বিশ্বাস ছিল, এই লড়াই চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে তার শিল্পী জীবনের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ।

প্রথম জীবনে শাসকের বাধার মুখে পড়তে হলেও পিট সিগারের এই লড়াই শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজের স্যালুটও পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার অভিষেক অনুষ্ঠান সামনে রেখে ২০০৯ সালে ওয়াশিংটনে বিশাল কনসার্টেও গান গেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভাষায়, “পিট সিগার ছিলেন একজন অপ্রচলিত ধারার শিল্পী, যিনি যেমন দেখতেন, সেই ভাষাতেই গেয়ে ওঠার সাহস রাখতেন। ”   

ফোক গানের জন্য ১৯৯৭ ও ২০০৮ সালে দুই দফা গ্র্যামি জিতেছে পিট সিগারের অ্যালবাম। তিনি সর্বশেষ গ্র্যামিটি পান ২০১০ সালে, শিশুদের জন্য সেরা গান ক্যাটাগরিতে, যখন তার বয়স ৮৯।

   

 

দীর্ঘ শিল্পীজীবনে বহু গায়ককে নিজের গায়কী ঢংয়ে প্রভাবিত করেছেন পিট সিগার। এমনকি এই ভারতীয় উপমহাদেশের গণসংগীত ও জীবনমুখী গানের শিল্পীরাও তার কাছে প্রেরণা নিয়েছেন।        

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শিল্পী কবীর সুমন বহুবার পিট সিগারের ঋণ স্বীকার করেছেন। কলকাতায় এক মঞ্চে গানও গেয়েছেন তারা।    

পিটের লেখা ‘হ্য়্যার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওআর্স গন’ গানটি বাংলার বিখ্যাত গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কণ্ঠে হয়েছে ‘ফুলগুলি কোথায় গেল’।

পিট সিগারের মৃত্যুতে এক টুইটে ব্রিটিশ গায়ক বিলি ব্র্যাগ বলেছেন,  “বিশ্বের যেখানেই মানুষ নিজেদের অধিকারের জন্য লড়বে, সেখানেই গাওয়া হবে পিট সিগারের গান। তার কণ্ঠে সবাই কণ্ঠ মেলাবে- আমরা করব জয়...। ”


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।