আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও একটা মেয়ে.......

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

সে আমার দুর সম্পর্কে বোন হয়। আমার চেয়ে বয়সে প্রায় ৪/৫ বছরের বড় হবে। ছোটবেলার অনেক সৃত্মি আছে, একসাথে খেলাধুলা করেছি অনেক। তার কিছু বিষয় আছে উল্লেখ করার মত।

সে ছিল খুবই সুন্দরী, খুবই মেধাবী একটি মেয়ে। বলতে গেলে সবদিক দিয়েই ছিল সবার উপরে। খুব ভালো গীটার বাজাতো। ন্যাশনাল কম্পিটিশনেও অনেক তার পুরষ্কার আছে। যাইহোক কোনদিক দিয়েই তার অপূর্ণতা ছিল না।

আমি দেখেছি, তার বাবা মাকে তার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে দিতে হয়রান হতে। যেহেতু সে ছিল সব দিক দিয়ে খুবই যোগ্য একজন পাত্রী তাই সব ছেলের মা বাবারা চাইত ওমন একটি বউ ঘরে তোলার জন্য। পুরো কলেজ ভার্সিটির জীবন তাকে অনেক প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আমি দেখেছি, বড্ড জেদী একটা মনোভাব তার ভিতরে। আর দেখেছি তার অহংকার।

অনেক যোগ্য ছেলেকেই সে যোগ্য মনে করতো না। আমাদের গার্জিয়ানরা তাকে অনেক বলেছে এই ব্যাপারটার জন্য। সে ছিল প্রচন্ড একগুঁয়ে। সে চায় রাজপূত্র। তার কল্পনার রাজপূত্র।

সেটা কেমন ছিল সেটা শুধু সেই-ই জানতো। কিন্তু হঠাৎ করেই সে একটি ছেলের প্রেমে পড়ে যায়, এবং বিয়েও করে। ছেলেটি তার প্রায় সমবয়সী। কিন্তু যোগ্যতা, পারিবারিক অবস্থান ইত্যাদি দিক দিয়ে তার অনেক অনেক নিচে। তখন সে তার পরিবার থেকে ডিটাষ্ট হয়ে পড়ে।

ছেলেটি এবং তার ছেলেটির মা যোগসাজশ করে মেয়েটির পরিবার থেকে তাদের পারিবারিক খরচ নিতো প্রতিমাসে জোড়পূর্বক। এভাবে বিয়েটা একসময়ে ভেঙ্গে যায়। সেই ছেলে শুনেছি এখন বিদেশে সেটেল্ড। যাই হোক। মেয়েটি প্রচন্ড শক পায়।

পারিবারিক ভাবে পরে আরো একটি ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। এরপর মারা যায় মেয়েটির বাবা মা। ঐ ছেলেটির সাথেও তার বিয়ে টিকে না। দুইএকবছর সংসার হয়। একটা ছেলে কোলে আসে।

মেয়েটি পাগল প্রায়। তার এত যোগ্যতা, আর তার তখনকার বর্তমান অবস্থা তাকে ধীরে ধীরে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাকে। এই মানসিক যন্ত্রনা থেকে সে কংকালসার দেহে পরিনত হয়। বাচ্চাটার এখন প্রায় সাত বছর বয়স। তার আচরনও অনেকটা তার মায়ের মত হয়ে যায়।

তাকে পূর্ণবাসনের অনেক চেষ্টা করা হয় তাত্মীয় স্বজনের দিক থেকে। কিন্তু কেউই তাকে মানাতে পারেনি। তার ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন অনেক চেষ্টা করেছে তাকে নরমাল জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য। অবশেষে তার পরিনতি হয়েছে, বন্দী জীবন। গতকাল অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে, বাসা থেকে আমার স্ত্রীর ফোন পেলাম, সে এসেছে আমার বাসায়।

পুরো ঢাকায় সিএনজি নিয়ে ঘুরেছে। বিল এসেছে অনেক টাকা। মোট ৭০০ টাকা দিয়ে সিএনজি ওয়ালাকে কোনমত বিদায় করা হয়। বাসায় গিয়ে আমি চোখের পানি লুকাতে পারিনি। তার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না।

কেউ যদি আমাকে না বলতো যে এই-ই সেই মেয়ে তাহলে কোনদিনও আমার ক্ষমতা ছিল না তাকে চেনার। তার বাচ্চাটা দেখলাম অসুস্থ। সেই মেয়েটিকে নিজের কাছে বসিয়ে খাইয়ে, গায়ে হাত দিয়ে আদর করলাম। সে শুধু কাঁদছে এবং দেখলাম সে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। সে একটা নিরাপদ আশ্রয় চায়, চায় স্নেহ, ভালবাসা।

তবে দেখলাম তার কিছু কথা অসংলগ্ন। অতিরিক্ত মানসিক প্রেসারে তার কিছুটা মতিভ্রম হয়েছে বুঝলাম। আমি প্রচন্ড শকড্ তার এই অবস্থা দেখে। কিছুই মিলাতে পারছি না। তার কি জীবন পাওয়ার কথা ছিল আর সে কি পেল!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.