আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শওকত পাগলা!

ক্লাস ১ থেকে ৯ পর্যন্ত আমার স্কুল পাল্টাতে হয়েছিল ৫ বার। এবং তা আমার আব্বুর জন্য। চ ব ক উচ্চ বিদ্যালয় তার মধ্যে একটা। এই স্কুলটাতে আমি ছিলাম মাত্র ১ বছর। কিন্তু এই সময়ে আমার অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে।

শওকত জাহান হচ্ছেন এই স্কুল এর ড্রইং টিচার। আমি অনেক স্যার দেখেছি কিন্তু উনার মত কাউকে দেখিনি। ক্লাস ৮ এ নতুন ক্লাস করার জন্য নতুন স্কুল এ যাই। আমি জানতাম না যে আজকে শওকত স্যারের ক্লাস আছে। ৩য় ঘন্টার সময় দেখলাম সবাই আঁকা আঁকিতে ব্যাস্ত।

জানতে পারলাম এখন শওকত স্যার এর ক্লাস। আমরা যেই এলাকাতে থাকতাম সেই পোর্ট কলোনীতে মাইরের জন্য উনি খুব বিখ্যাত ছিলেন। তাই আমার ভয় হয়। স্যার একটা প্রজাপ্রতি হোম ওয়ার্ক দিয়েছিলেন। আমার ফ্রেন্ড হিমু তারাতারি আমার খাতায় একটা প্রজাপ্রতি এঁকে দেয়।

হিমু খুব ভাল আঁকতে পারত তাই প্রজাপ্রতিটা অনেক সুন্দর হয়ে ছিল। স্যার যখন ক্লাস এ ঢুকলেন তখন ক্লাসে পিন পতন নিরবতা। প্রথম দেখায় বুজলাম উনি সাক্ষাৎ শয়তান। উনার হাতে তিনটা জালি বেত টেপ দিয়ে মোড়া। স্যার বললেনঃ সবার খাতা সামনে রাখ।

স্যার প্রথম বেঞ্ছ থেকে দেখা শূরু করলেন। আর যাদের ড্রইং সুন্দর হয় নাই তাদের উনার বেত দিয়ে মারা শূরু করলেন। আর মার খেয়ে ছেলেরা কই মাছের মত কাত্রাতে লাগলো। আমি এর আগে যে স্কুলে ছিলাম সেইখানে টিচাররা মারতেন না। তাই আমার ভয় আরও বেড়ে গেল।

উনি আমার খাতা দেখে বল্লেন,বইয়ের মত হয় নাই। বলেই শপাত শপাত করে দুইটা পিঠের উপর মারলেন। উফফ! কি ব্যাথা! সব ভয় মহুর্তে দূর হয়ে গিয়ে প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো। মনে হল একটা ঘুসি মেরে ব্যাটার নাক ফাটাই দেই। অনেক কষ্টে ইচ্ছাটাকে দমন করলাম।

স্কুল এর সবাই উনাকে ডাকতো শওকত পাগলা বলে। ড্রইং ক্লাস এর জন্য উনার থেকে বই আর রং কিনতে হতো। উনার একটা অদ্ভুত টাইপের মোটর সাইকেল ছিল। যে কেউ ওইটা দেখেই বলে দিতে পারত শওকত পাগলা আশেপাশে কোথাও আছে। উনার অনেক গুলো আর্ট স্কুল আছে।

শুনেছি ওই খানে নাকি উনি জলে ধোয়া তুলশি পাতা! একবার আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে স্কুলগুলোর একটা সাইনবোর্ডে জাহান নামাটা মুছে পাগলা লিখে দেই। আমাদের দেখাদেখি সবাই সাইনবোর্ডেগুলোতে শওকত পাগলা করে দেয়। উনি ক্লাসে এসে টেবিলের উপর বসতেন। আমাদেরকে উনি উনার মাসিক আর বার্ষিক আয় দেখাতেন। উনি এই পর্যন্ত কতগুলা পুরুস্কার পেয়েছেন তা বলতেন।

ক্লাসে দোয়া মাহফিল করতেন আর অন্য ধর্মের ছেলেদের অপমান করতেন। প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত লাগত কিন্তু আস্তে আস্তে কাউকে স্যার অপমান বা মারলে আমরা সবাইমিলে স্যারের পক্ষ নিয়ে নিলজ্জের মত হাসতাম। স্যারের মারার কিছু বৈশিস্ট্য আছে, উনি ছেলেদের মারতেন টেবিলের তলে ঢুকিয়ে বা ক্লাসের বাহিরে নিয়ে গিয়ে। উনি বেশিরভাগ সময় পেছনের অংশে মারতেন যাতে কাউকে দেখাতে না পারে। কাউকে মারার সময় উনার চেহারা পশুর মত দেখাত।

উনি ছেলেদের গোপন অঙ্গ চেপে ধরার মত অসভ্য কাজ ও করতেন। মারের সময় কোনো আওয়াজ করা যেত না কারন তাতে শাস্তি আরও বাড়তো। ৭-৮টা বেত ভাংগার পর যদি উনার রাগ কোমতো তাহলে উনি খান্ত হতেন। একবার আমাদের ক্লাসে আমরা পাশের বেঞ্চের স্টুডেন্টদের সাথে জগরা লেগে যাই। কোথা থেকে জানি শওকত স্যার উপস্তিত হন।

আমাদেরকে উনি দাঁড়াতে বলেন। আমাকে বললেনঃ তুই তো ভালা পোলা,ছিল্লাইতেছিলি কেন? স্কুলের কালচারাল প্রগ্রামে আমি যুক্তছিলাম বলে এর মদ্ধেই অনেক টিচারের পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম। স্যারও আমাকে ভাল ছেলে হিশাবে জানত। আমি বললামঃ স্যার আর হবে না,এই বারের মত মাফ করে দেন। সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় হল উনি বললেন ঠিক আছে! আমাদের সবাইকে উনি মাফ করে দিলেন।

আমরা তো পুরাই শক খেলাম! শওকত পাগলা মাফ ও করে!! সেই থেকে বুজলাম উনি মধ্যে সজন প্রিতিও আছে। স্কুলের ক্লাস ৯ আর ১০ এর ছেলেদের উনি নাকি আপনি করে ডাকেন। কারন হিসেবে জানতে পারলাম ক্লাস ৯ আর ১০ এর ছেলেরা নাকি উনাকে একবার স্কুলের ছাদ থেকে বাগান এর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল! উনার মুখে আপনি ডাক আমার শুনা হয়নি কারন ৯এ আমি অন্য স্কুলে চলে জাই। ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার কাহিনি কতটুকু সত্য জানি না, কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে ওই দিন আর বেশি দেরি নেই যখন উনাকে ছাত্ররা বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে খালের মধ্যে ফেলে দেবে! সুতরাং এখনই উচিত উনার মত সারা দেশে যেই সব শিক্ষক নামের মানসিক রোগি আছে তাদের হয় চিকিৎশা করা হোক না হলে পাগলাগারদে পাঠানো হোক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।