আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজা ২৪: অহঙ্কার- বিনাশ



যারা অহঙ্কারের প্রকাশ ও বিকাশ পর্ব পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ। আজ আমরা অহঙ্কারের শেষ পর্বে কিভাবে অহঙ্কারের বিনাশ করা যায় তা আলোচনা করবো। আসলে বিনাশ মানে কি? মানে শেষ হয়ে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়া । আমরা যদি আমাদের অহঙ্কারকে বিনাশ বা শেষ বা ত্যাগ না করতে পারি , তাহলে অহঙ্কারই আমাদেরকে বিনাশ করবে । সুতারং এটা একটা জরুরী কাজ আমরা বুঝতে পারছি।

আসলে আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেদের দিকে তাকাতে চাই না। আমরা নিজেদেরকে সবসময়ই পারফেক্ট ভাবতে পছন্দ করি। এটাও অহঙ্কারের একটি রূপ এবং আমাদের একটি বড় ভুল। আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই এবং ভুল ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে এগোই তাহলে আমাদের অনেক সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি । আসুন আমরা কিছু উপায় নিয়ে ভাবি যেভাবে আমরা আমাদের অহঙ্কারকে বিনাশ করতে পারি : ১।

অহঙ্কারের বিনাশ করতে হলে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সচেতন হতে হবে। সচেতনতা হচ্ছে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। সচেতনতা সৃষ্টির উপায় হচ্ছে আমাদের কি আছে না আছে তাই নিয়ে ভাবা । ২। আমাদের আচার আচরনগুলোকে লক্ষ্য করতে হবে ।

কোন কোন আচরন আমাদের অহঙ্কারের প্রতিফলন ঘটায় তা লক্ষ্য করতে হবে। আসুন তার একটা লিস্ট তৈরী করি। কোন কোন কথা আমাদের হামবড়া ভাব প্রকাশ করে তার একটা তালিকা তৈরী করি। এটা হচ্ছে নিজেকে জানার গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ। ৩।

ছোট ছোট আচরণগত পরিবর্তন বড় পরিবর্তনের সূচনা করে । যেমন: সালাম দেয়া । এটা একটা সুন্দর কাজ। আর প্রথমে সালাম দেয়ার ব্যপারে নবীজী (স) বলেছেন: সালামের সূচনাকারী অহঙ্কার থেকে মুক্ত। তাই বড় ছোট কোন ব্যাপার নয় আমাদেরকে সালামের প্রাকটিস একটা সুন্দর চেষ্টা হতে পারে অহঙ্কার থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে।

৪। বিশ্বের বড় বড় দাম্ভিক বা অহঙ্কারীদের পরিণাম স্মরণ আমাদের জন্য সাহায্যকারী হতে পারে। হিটলারের পরিণতি স্মরন করুন। আমাদের দেশের সাবেক জমিদারদের পরিণতি ও তাদের ফেলে যাওয়া ধ্বংসস্তুপের কথা স্মরন করুন । অহঙ্কারই মানুষকে হিটলারে পরিণত করে ।

৫। অহঙ্কারের বিপরীত হলো বিনয়। আমরা যত বিনয়ী হতে পারবো তত অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকতে পারবো । ৬। শোকরগোজার হওয়ার চেষ্টা করুন।

ধন্যবাদ জানাতে শিখুন স্রষ্টাকে ও মানুষকেও । ৭। যাকে দেখলে আপনার মনে বড় ভাব জাগৃত হয়, যার চেয়ে নিজেকে বড় মনে হয়, তাকে বা তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে চেষ্টা চালাতে হবে। বিনয়ী আচরণ করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। ৮।

পৃথিবীর প্রাত:স্মরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণ করুন। যারা পৃথিবীতে তাদের কল্যাণের স্বাক্ষর রেখে গেছেন,তারা সবাই অহঙ্কারমু্ক্ত ছিলেন। নবী রাসুলদের কেউ কখনো অহঙ্কার করেছিলেন এমন কোন ঘটনা খুজে পাবেন কি? আমাদের প্রিয় নবী (স) যখন বিজয়ীর বেশে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন , তখনও তার মতো বিনয়ী কেউ ছিলেন না । সবাইকে ক্ষমা করেছেন, এবং চরম শত্রুকেও বুকে তুলে নিয়েছিলেন। বিজয়ীর কোন অহঙ্কার তাকে স্পর্শ করতে পারেনি যা ইতিহাসে বিরল।

৯। সকল প্রাপ্তিতেই নিজেকে আলোকিত করুন এই ভেবে যে, আপনার এই প্রাপ্তি আপনাকে আরো দায়িত্ব দিয়েছে, আরো কর্মমুখী করার জন্যই এসেছে । এতে অহঙ্কারের কিছুই নেই । ১০। নিজেকে সবসময় কল্পনা করুন অহঙ্কারমুক্ত সদাচারী মানুষ হিসাবে।

আপনি যে সবার সেরা সেটা আপনার বিনয় প্রকাশ করবে, আপনার আচরনে প্রকাশ হবে। এমনিভাবে অহঙ্কারের বিনাশের জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি। কোরানে আল্লাহতাআলা অহঙ্কারের ব্যাপারে বলেছেন : --সে (ইবলিস) আপত্তি তুললো, অহঙ্কার করলো, কাজেই অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো। -সূরা আল-বাকারা: ৩৪ -- আমি আমার বাণী সমূহ থেকে তাদের ফিরিয়ে দেবো, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহঙ্কার করে । (আল-আরাফ :১৪৬) -- অহঙ্কার বশে মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ো না, আর ধৃষ্টতা সহকারে পৃথিবীতে পদচারণা করো না ।

নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না । --সূরা লোকমান :১৮ সুতারং আসুন আমরা অহঙ্কার থেকে নিজেদেরকে মু্ক্ত রাখি , অহঙ্কারের বিনাশ করি এবং ভালো মানুষ হিসাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলি । রমজান মাসে শুধু পানাহার বর্জন নয় , অহঙ্কারও বর্জন করি । আর সারাজীবন এই সাধনা অব্যাহত রাখি। ধন্যবাদ ।

আগামীকাল আবার দেখা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.