আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজা ২৩: অহঙ্কার - বিকাশ



গতকাল অহঙ্কারের প্রকাশ নিয়ে আলোচনা করছিলাম । আজ এর বিকাশ ও পরিণতি নিয়ে কিছু বলছি। মানুষের মধ্যে অহঙ্কারের শুরু কিন্তু ছোট ছোট ঘটনা বা প্রাপ্তি থেকে । মানবশিশু অহঙ্কার মুক্ত থাকে। যখন বড় হতে থাকে তখন তার মধ্যে আমিত্ববোধ জাগ্রত হয় ।

তার সাথে পারিপার্শ্বিকতা ক্রমশ তাকে অহঙ্কারী উদ্ধত করে তুলতে সাহায্য করে । ধরুন কোন বাবা মা আত্মীয়স্বজন একজন ভালো রেজাল্টকারী ছাত্রকে বললো- তুমি তো খুবই ভালো ছাত্র। সাবধান খারাপ ছাত্রদের বন্ধু বানাবে না। কাউকে নোট দেবে না.. ইত্যাদী ইত্যাদী । এখন ঐ ছেলের মনে একধরনের আমিত্ব জেগে উঠবে ।

সে ক্রমশ অন্যদের থেকে নিজেকে পৃথক করতে শিখবে এবং বড় হবে এক ধরনের হামবড়া ভাব নিয়ে। এটা একসময় অহঙ্কারের মহীরুহে পরিণত হবে। অতিরিক্ত প্রশংসা যশ খ্যাতি অহঙ্কারের জন্ম দেয়। ধরুন আমি লিখছি । আমার এই লেখাটা আপনাদের খুব পছন্দ হল এবং আপনারা এর ভূয়সী প্রশংসা করলেন।

আমি ভাবলাম –ভালোইতো লিখি। এই থেকে শুরু। আমি ভাবলাম এবং প্রকাশ করলাম , আমি হেন আমি তেন, আমি সেরা... ইত্যাদি। অহঙ্কারের বিকাশ শুরু হল এবং সাথে আমার পতন। কিছুটা খ্যাতিমান হয়ে উঠলে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অহঙ্কারী হয়ে ওঠে।

এবং অহঙ্কারী মানুষের খ্যাতি একসময় বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছু জন্ম দেয় না। এই বিড়ম্বনা নিজের ও আশেপাশের সবার জন্যই ক্ষতির কারন হয়। গরীবদের কাছে অহঙ্কার রূপ নেয় ক্ষোভ ও রাগ এ। তার প্রকাশ ঘটে গালিগালাজ ক্ষতিকারক কাজকারবার এবং ভাঙচুর জাতীয় কাজের মাধ্যমে। ধরুন কোথাও ভাঙচুর হচ্ছে, কয়েকজন লোক ভাবলো –তোমাদের সাথে তো পারি না , এবার তোমাদের গাড়ি বাড়ি ভাঙতে পারি আমরা , এই দেখো- এই ভেবে ক্ষতিকারক কাজে লিপ্ত হয়ে গেল।

নির্দেশ পালন না করার মাধ্যমে আমরা অহঙ্কারী হয়ে উঠতে পারি । ভালো লাগে না , তুমি যত বড়ই হও আমি তোমার নির্দেশ মানবো না, তুমি কি করবা কর। এটাও অহঙ্কারের প্রকাশ । আমার বিকল্প নেই , এই ভাব আমাদের মনে অহঙ্কারের মহীরুহ সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেই অহঙ্কার পতনের সুন্দর পথও হতে পারে।

দেখুন আমাদের বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের কথা । তাদের মনে হয়ত এই ভাব উদয় হয়েছে যে আমাকে দাম দেয়া হচ্ছে না । অথবা তারা হয়ত ভাবছেন তাদের কোন বিকল্প নেই । সেই অবস্থা আমাদের উভয় পক্ষের জন্য কত বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছে এখন ভাবুন। ধর্মকর্মও অনেক সময় অহঙ্কারের কারন হতে পারে ।

আমার ধর্ম অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর এই ভাবনা থেকে সকল রকমের ধর্মীয় সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এই ভাবনা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তারা অবশ্যই অহঙ্কারী। ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে তার ব্যবহারে ও সহনশীলতায়। এমনি ভাবে আমাদের অহঙ্কারের বিকাশ আমাদের জন্য নানান সমস্যার সৃষ্টি করে জীবনযাত্রায় ব্যঘাত ঘটাতে পারে। অহঙ্কারের কারনে আমরা কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হই : ১।

অহঙ্কার হিংসার জন্ম দেয়। সেই হিংসা আরো অনেক হিংসার পথ উন্মুক্ত করে। ২। অহঙ্কার একজনের মেধার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে । আমি অনেক কিছু হয়ে গেছি এই ভাব তাকে আর সামনে এগুতে দেয় না ।

৩। আল্লাহতাআলা কেন অহঙ্কারীদের জালিম বলেছেন, কারন অহঙ্কারীদের কারনে যে অশান্তির সৃষ্টি হয় তার নিজের মনে ও তার আশেপাশের মানুষের মনে তা জুলুমবাজদের সৃষ্ট অশান্তির সমান। ৪। অহঙ্কারের চূড়ান্ত পরিণতি পতন। মাত্রাতিরিক্ত অহঙ্কার মানুষের পতনের কারন হয়।

৫। অহঙ্কারীরা মানুষের ভালোবাসা বঞ্চিত হয় । কারন অহঙ্কারীদের কেউই পছন্দ করে না । এভাবে অহঙ্কার আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানে বলেছেন : --আল্লাহ দাম্ভিক উদ্ধতকে ভালোবাসেন না।

--সূরা আল হাদীদ:২৩ আসুন আমরা অহঙ্কারকে চিহ্নিত করি। তার বিকাশকে রোধ করি। এবং তারপরে তার বিনাশ সাধন করি । আজ এই পর্যন্তই থাকলো । আগামীকাল অহঙ্কারের বিনাশ নিয়ে আলোচনা হবে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.