আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হৃদরোগ পুলিশ ও আমাদের নন্দিত নরকে -৩



গত পর্বের পর তো ঝুম বৃষ্টির দিন। সাধারণত অফিসের যাবার টাইমে বৃষ্টি হলে আমি খুবই আহলাদিত হই। অফিসে ফোন করে বলা যায়, বৃষ্টিতে আটকে গেছি ভাই। অবশ্য অনেক সময় ফোন না করলেও চলে, পরদিন গিয়ে একটা গল্প ঝেড়ে দিলেই হল, বাসার সামনে গলা সমান পানি, রিকশা তো নাই, কোন নৌকাও পেলাম না। কিন্তু ঐদিন অফিসে যেতেই হবে, পেস্টিং।

যারা পত্রিকায় কাজ করেন, তাদের জন্য পেস্টিং একটা মাঝারি সাইজের কেয়ামতের দিন। তারপর দুপুরে একটা দরকারী মিটিং-এ আছে, মিটিং-এ না থাকলে, চাকরী থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তো বাস ফার্মগেট সিগন্যালে আটকা পড়ল। ঝাড়া বিশ মিনিট চলে গেল সিগন্যাল ছাড়ার নাম নাই। এমন পরিস্থিতিতে আমার বিরক্ত হওয়ার কথা, কিন্তু বিরক্ত হচ্ছি না।

এর প্রধান কারণ ভারত থেকে বয়ে আনা ফুড চার্ট আমি অক্ষরে অক্ষরে, দাড়ি সেমিকোলন সহ ফলো করছি। সিগারেট তো ছেড়েছি, মাংস বাদ, মাছে যেহেতু রুচি নাই, কাজেই সবজি আর সবজি। নিজেকে বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী মনে হচ্ছে। ডাক্তার সহজে উত্তেজিত হতে বারণ করেছেন, আমি কঠিনেও উত্তেজিত হচ্ছি না। এই যে, ট্রাফিক সিগন্যাল বিশ মিনিটের জায়গায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল, তাতেও আমার বিরক্ত লাগছে না।

কিন্তু বাসের অন্য সবাই তো আমার মতো ভেজিটেবলের ঘাস খায় না, তাদের মধ্যে সাহসী একজন বাসের জানালা দিয়ে মুখ বের করে দূরে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বললো। খুবই সাধারণ কথা। তার কথাটার মধ্যে দুটি জিনিস ছিল। একটা প্রশ্ন আর একটা প্রস্তাব। প্রশ্নটা হচ্ছে, রাস্তাটা ট্রাফিক পুলিশের বাপের কিনা? তা না হলে চল্লিশ মিনিট ধরে রাস্তাটা বন্ধ কেন? আর যে প্রস্তাবটা সে দিল সেটা একটু অবাস্তব এবং হালকা অশ্লীলও।

( নাইবা বল্লাম সেটা ) যদিও তার কথা ঐ পুলিশের কানে যায় নাই, কারণ রাস্তায় ব্যাপক হাউকাউ আর পুলিশটাও একটু দূরেই। ( আহা!!!! পুলিশের কানে গনগণের সব কথা যদি যেত- তাহলে তো কাজই হত। ) বাসের সবাই তার বীরত্বে মুগ্ধ। একটু পড়ে সিগন্যাল খুলে দেয়া হল। সবাই আনন্দে উদ্বেলিত, কিন্তু দুই তিনটা গাড়ি পার হতেই আবার রাস্তা বন্ধ।

শুরু হল হাউকাউ। এই হাউকায়ে এক ট্রাফিক পুলিশ লাঠি দিয়ে এগিয়ে এলেন শায়েস্তা করতে। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সন্মিলিত প্রতিবাদ। এরপর যে ঘটনা ঘটল, সেটা মোটামুটি অকল্পনীয়। দশ বারোজন পুলিশ বাসটা ঘিরে যেন মাটি ফুড়ে বের হল।

তাদের কয়েকজন বাসে উঠে সামনে থেকে ড্রাইভারসহ সবাইকে বাড়ি মারা শুরু করলো। প্রত্যেকের ভাগে গড়ে দুইটা তিনটি করে। বাকী পুলিশ যারা বাসে উঠার সুযোগ পাননি , তারা জানালা দিয়ে পিটানো শুরু করলেন। আমি ছিলাম একদম পিছনের সিটে, জানালার পাশে ... বেশ লম্বা বাস, সামনে থেকে পুলিশরা মেরে মেরে পেছনে আসছে, যাত্রীরা ভয়ে বাসের পেছনের দিকে একযোগে দৌড় দিয়েছে, বাসের হেলপার সহ, ঐ ব্যাটা বেরুতে পারেনি। এ সময় মনে হল, কিছু সমাজসেবা করি, তাদের আমার ভাগের মার থেকেও বাঁচা যাবে।

আমি দাঁড়িয়ে পুলিশদেরকে বল্লাম, ভাই মারবেন না, আমি একজন সাংবাদিক, আমার কথাটা একটু শোনেন। আমার কথায় ম্যাজিকের মতো কাজ হল। তারপরে একসঙ্গে অনেকগুলি ঘটনা ঘটল খুব দ্রুত। সব পুলিশ বজ্রাহত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, অন্যদের মারা বন্ধ করলো এবং তারপর ' ওইরে চুতমারানি সাংবাদিক' বলে, একযোগে সকল পুলিশ, যাদেরকে জনগণের বন্দু বলা হয়, সেই বন্ধু পুলিশভাইয়েরা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। লাথথি, ঘুষি, বাড়ি কোনটাই বাদ পড়লো না, একজন পুলিশ কিছুতেই আমার নাগাল পাচ্ছিলেন না, কেননা অন্যান্য পুলিশরা আমাকে ঘিরে পিটাচ্ছিল।

সে তখন- রাস্তায় যে বড় বড় ছাতা থাকে, সেটার লম্বা ডান্ডি খুলে এনে ...খুবই মোক্ষম একটা জায়গায়, বাম হাতের কনুইয়ে বাড়ি মারলো। আরও মিনিটখানেক মারলে, আমাকে আর ব্লগে লেখালেখি করতে হতো না। বুকে পেস মেকার লাগানোর ঝামেলা থেকেও বেঁচে যেতাম। মাইর শেষ করে তারা নেমে গেল। ড্রাইভারকে বাস ছেড়ে দিতে বললো, আমি মার খেয়ে সিটে কাত হয়ে পড়ে আছি।

বাসের যাত্রীরা ভয়ে অনেকে ফার্মগেটেও নামলো না। বাসের অন্য যাত্রীরা সব চুপচাপ, মাথা নিচু করে বসে আছে, কেউ আমার দিকে লজ্জায় তাকাচ্ছেও না। তারপর....... ল্যাব এইডে গেলাম। হাতে প্ল্যাস্টার করে দেয়া হল। পরদিন পত্রিকায় ( যুগান্তরের ব্যাক পেজে একটা খবর ছাপা হল) ।

ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারতো, সেটা হলনা। বলা যায়, ব্যাপারটা কেবল শুরু হল। ( আল্লাহর কসম আগামী পর্বে সমাপ্ত করবোই)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.