আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মফিজ ক্যানভাসার ১৯

১৯ ক্যানভাসিং ব্যবসায় প্রধান সম্পদ মুখের চাপা। যে কথার যাদুতে মানুষকে বশ করতে পারে না সে ক্যানভাসিং ব্যবসায় সফল হতে পারে না। আমি কথায় যাদুতে আজ বার বছর এই ব্যবসায় সফলভাবেই টিকে আছি। এ ব্যবসায় চতুর হতে হয়। ক্যানভাসার হিসেবে সারা দেশে আমার আলাদা একটা পরিচয় আছে।

অনেকে আমাকে মফিজ ক্যানভাসার বলেই জানে। আমি ডাঃ লুৎফর রহমান ও ডেল কর্নেগীর বই পড়ি। নিজের মধ্যে অন্যরকম এক শক্তি অনুভব করি এদের বই পড়ে। আমাকে ডেল কর্নেগীর বই পড়তে উপদেশ দিয়েছিল শ্রদ্বেয় ছত্তার মাস্টার। আজও তার কথা মনে পড়ে ।

লোকটা ঘুমের মধ্যে মারা গেছে। তার অভ্যাস ছিল খুব সকালে ঘুম থেকে জাগা । একদিন অনেক বেলা হলেও সে ঘুম থেকে জাগছে না। তার বৌ বললো, ‘আলতাফ তোর দাদা আজ ঘুম থেকে জাগছে না কেন দেখতো। ’ আলতাফ ঘুম থেকে জাগাতে গিয়ে দেখে তার দাদা বেঁচে নাই।

সে চেঁিচয়ে উঠলো, ‘দাদী , দাদা আর বেঁচে নেই। ’ তখনও তার এক হাতে ডাঃ লুৎফর রহমান ও পাশে ডেল কর্ণেগীর বই। একদিন একলোক হঠাৎ পথিমধ্যে হাটু গেড়ে আমার পায়ে কদমবুচি করে বললো, ‘ওস্তাদ আামকে একটু দোয়া করবেন। ’ আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে কিন্তু কিসের জন্য দোয়া ?’ ‘ওস্তাদ আমি আপনার মত একজন ক্যানভাসার হতে চাই। ’ আমি বললাম, ‘দোয়া করি বাবা, তুমি বড় ক্যানভাসার হও।

তবে মনে রাখবে, এই ব্যবসায় মুখের জোড় লাগে। বাংলাদেশের রাজনৈতিকদের মত মুখের জোড় না থাকলে এই ব্যবসায় সফল হতে পারবে না। ’ লোকটি বললো, ‘ওস্তাদ, আপনি দোয়া করলে সবই পারবো। ওস্তাদ যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলতে চাই। ‘ ‘কি বলবা, বল ?’ ‘ওস্তাদ আমি আপনার সাথে কয়েকদিন থেকে কাজ শিখতে চাই।

এই অধমকে যদি একটু সুযোগ দিতেন। ’ ‘তোমার নাম কি মিয়া ?’ ‘অধমের নাম আতাহার। আদর করে সবাই আতা বলে ডাকে। ’ ‘নামের বিকৃতিতে গুনাহ হয় এই হাদিস কি তোমার জানা নাই ?’ ‘ওস্তাদ, লেখা-পড়া করতে পারি নাই, জানবো কিভাবে ? জ্ঞান হওয়ার আগেই বাবা মারা গেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মা আবার বিয়ে বসেছে।

সৎ বাবা ( আমাদের ভাষায় সৎ বাবার ব্যবহার নাই, সৎ মা থাকলে সৎ বাবাও থাকা উচিত। ) কাজে লাগিয়ে দিয়েছে চায়ের দোকানে। তারপর থেকে এ দোকান ও দোকান। লেখা-পড়া কাকে বলে বুঝতাম না কিন্তু এখন বুঝি লেখা-পড়া কি জিনিস। ওস্তাদ, আপনি যদি আমাকে লেখা-পড়াও শিখাতেন।

একটু লেখতে-পড়তে পারলে মনে তৃপ্তি পেতাম। ’ এসব কথা শুনে আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে থাকো। খাবে-দাবে, সাথে যখন যা পারবো টাকা-পয়সাও দিব। ’ আতাহার এ কথা শুনে আবার আমার কদমবুচি করল। আজকে ক্যানভাসিং হবে সদরঘাটে।

সাধারণত সদরঘাটে উড়ন্ত মানুষ বেশী। লঞ্চে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে এখানে আসা। তাদের কাছে ঔষধ বিক্রি করা সহজ তবে তারা মূলা-মূলি বেশী করে। হাতেম আলীর সালসা বিক্রি হবে এখানে। আমি তার কাছে থেকে বিশ বোতল সালসা এনেছি।

আজকেই বিশ বোতল বিক্রি করতে হবে। বড় স্পিকারের সাউন্ড সিস্টেম সাথে এনেছি। স্পিকারের মাধ্যমে লেকচার দেওয়ার মজাই আলাদা। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক লোক জমানো যায়। আতাহার সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারে।

সে আমার লেকচারের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশি বাজায়। তার বাঁশির সুরের অনেকলোক জড়ো হলো। হেমিওয়ালানের বাঁশির সুরে শতশত ইদুঁর পাগল হয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আতœহুতি দিয়েছিল। বাঁশির সুরে মানুষও পাগল হয়ে অনেক কিছু করতে পারে। হঠাৎ গোঁফআলা একলোক এসে জিজ্ঞাসা করলো,‘এখানে লেকচার মারছিস টাকা দিয়েছিস ?’ আমি বললাম, ‘না, কিসের টাকা ?’ ‘এখানে বসলেই পাঁচশ টাকা দিতে হয়, জানিস না ?’ আমি বললাম, ‘না ভাই তাতো জানতাম না!’ ‘জানিস না এখনতো জানলি, পাঁচশ টাকা দেয় তারপর সারাদিন লেকচার মার।

’ আমি বললাম,‘বস এখানে বসবো না, উঠে যাব। ’ এই কিছিমের লোকদের বস বললে নরম হয়ে যায়। এ কথা শুনে সে বললো, ‘কথা না বাড়িয়ে পাঁচশ টাকা বের কর। দু’নম্বর মাল বেচোচ টাকা দিবি না! এখন না বসলেও টাকা দিতে হবে। ’ বুঝলাম ‘বস’ বলাতেও কাজ হয় নাই।

আমি নিরুপায়। আমি আবার বললাম, ‘ভাই, আমি এখানে বসবো না, টাকাও দিব না। ’ এ কথা শুনে লোকটি চেঁচিয়ে বললো, ‘খানকির পুত টাকা দিবি না ? টাকার পরিবর্তে বোতল নিয়ে গেলাম। ’ পাঁচজনে দশ বোতল সালসা নিয়ে গেল। এরা মুখ দিয়ে যা-তা বলতে পারে।

আতাহার আমাকে বললো, ‘ওস্তাদ, বাংলাদেশে কোথায়ও চান্দা ছাড়া কিছু হয় না, যা চায় দিয়ে দেন। ’ আমি চান্দা দিব না আবার লেকচার শুরু করলাম। ইতিমধ্যে সবলোক চলে গেছে আবার আস্তে আস্তে লোক জড়ো হচ্ছে। এবার কিছু মাল বিক্রি হলো। সালসা , মানিব্যাগ, বাতের মলম, পাথরের আংটি সব মিলিয়ে হাজার দুয়েক টাকা বিক্রি আসলো।

আবার পাচঁজন এসে হাজির। বোতল দশটা রেখে আমার পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একখানা নোট নিয়ে বললো, ‘চান্দাবাজ হতে পারি তবে যা বলি তাই করি। আরেকজন বললো, ব্যাটা ঈমান আছে আমাদের, চাইলে তোর সবটাকা নিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু নিলাম না। ’ আগের প্রশ্নের উত্তর: হ্যারি পটার ফাইনাল ( Harry Potter Final ) ( ১৬ কোটি ৯২ লক্ষ ডলার) প্রশ্নঃ উট পাখির একটা ডিম স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সিদ্ধ করতে কত সময় লাগে? উত্তর: আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।