আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুনর্জন্ম ......... (ফ্যান্টাসী ছোট গল্প)

সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।

১. মেয়েটা ছেলেটার থেকে বয়সে পনের বিশ দিনের মত বড়ই হবে, কিন্তু এই নিয়ে তার সে কি ভাব ! সুজোগ পেলেই ছেলেটাকে খোটা দিতে ভুলে না। ছেলেটাও কম যায় না।

সে বলে মাত্রতো পনের বিশ দিনের বড় আর এতেই এতো ভাব ? আর ভালোবাসায় বয়স কোন ব্যাপার না, তুমি তা জানো না ? তারপর ছেলেটাও একটু ভাব নিয়ে বলে, "আর আমিতো নিতান্তই দয়াপরবসত হয়ে তোমার সাথে আছি। " এইটা বলে ছেলেটা একটু বুক টান টান করে দাড়ায় । মেয়েটা একটু ভেংচি কেটে বলে কে বলেছে আমার সাথে পড়ে থাকতে, যাও না চলে দেখি কে তোমাকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসে ! ২. জন্মের পর থেকেই ওরা দুইজন যেন দুই দেহ এক আত্মা। পাশাপাশি বড় হয়েছে, এক জন আর এক জনকে ছাড়া বেঁচে থাকা যেন ভাবতেও পারে না। যদি কোনদিন ছেলেটার একটু খাবার কম পড়ে যায় মেয়েটা নিজে কম খেয়ে ছেলেটাকে খাওয়ায়।

ছেলেটা প্রথমে একটু না না করলেও পরে ঠিকই খেয়ে নেয়। ছেলেটা একটু পেটুকতো তাই। মেয়েটার কি যে ভালো লাগে এই খাওয়ার দৃশ্য দেখতে ! তার চোখ ভিজে যায়, সে আস্তে করে মাথাটা ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে যাতে ছেলেটার চোখে ধরা না পড়তে হয়। ছেলেটার কোনদিকে খেয়াল নেই, এক মনে খেয়ে যায়। খাওয়া শেষ হলে সে জিজ্ঞাস করে তুমি পেট ভরে খেয়েছো তো ? মেয়েটা বলে, আমার অল্পতেই হয়, তোমার মত আমি অত খাই খাই করি না।

ছেলেটা একটু লজ্জা পায়। দুপুর বেলায় যখন প্রখর রোদ উঠে তখন ছেলেটা নিজের দেহ দিয়ে মেয়েটাকে আড়াল করে রাখে আর মেয়েটা আরাম করে ঘুমায়। ইস ! কি সুন্দর লাগে তাকে যখন সে ঘুমায়, ঠিক যেন সে অন্য গ্রহের কেউ । ছেলেটা আলতো করে মেয়েটিকে ছুঁতে চাই, কিন্তু ছুতে গিয়েও আবার ফিরে আসে , যদি তার ঘুম ভেঙ্গে যায় ! ঐ দিকে দিন দিন তার গায়ের রং রোদে পুড়ে আরও কালচে সবুজ হয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু যায় আসে না, গায়ের রং দিয়ে সে কি করবে ? সে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে তারপরও মেয়েটার গায়ে একফোটা রোদ লাগতে দিবে না।

মেয়েদের গায়ের রং টাই আসল। ইস্ কি সুন্দর দিন দিন কাচা হলুদের মত হচ্ছে ওর গায়ে রং ! ছেলেটা শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ৩. পাড়ার কিছু বখাটে প্রায়ই এইদিক দিয়ে যায় আর মেয়েটার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকে আর নিজেরা নিজেরা কি কি যেন বলাবলি করে ! ভয়ে মেয়েটা গুটিশুটি মেরে যায়, ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। ছেলেটাও খুব সাহস করে বলে, "কোন ভয় নেই তোমার, যতক্ষন পর্যন্ত আমি আছি ততক্ষন ওরা তোমার কিছু করতে পারবেনা"। কিন্তু ছেলেটা জানে আসলে ও কত অসহায়।

ওর বুকটা হুহু করে উঠে। ৪. ছেলেটা বলে , "তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে, তোমার গা থেকে মন মাতানো কেমন একটা মৌ মৌ গন্ধ আসছে !" মেয়েটা একটু লজ্জা পায় তার পর বলে, "তুমিতো স্বার্থ ছাড়া কিছু বলো না, তো হঠাৎ আমার এত প্রশংসা ! কি ব্যাপার ?" আরে নাহঃ ! তুমি সবকিছুতেই আমার দোষ খুজ কেন ? আসলেই তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মেয়েটার গালে একটু গোলাপী আভা ফুটে উঠে, কিন্তু কিছু বলে না। ছেলেটাও চুপ থাকে কিছুক্ষন। অনেকক্ষন পর ছেলেটি বলে, "তোমাকে একটু ছুঁই ?" একটা ধমক দিয়ে মেয়েটা বলে, ও এই তাহলে তোমার মতলব, অসভ্য ! বেহায়া ! দেখছনা সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ? ছেলেটা একটু থতমত খেয়ে যায়।

মুখ ভার করে মেয়েটার পাশ থেকে একটু সরে আসে আর ভাবে, ও এত কঠোর কেন ? একটু ছুয়ে দিলে কি হয় ? মেয়েটা ভাবে, ও এখনও ছোয় না কেন ? এত বোকা কেন ও ? ইস্ এইভাবে ধমক না দিলেও পারতাম। ৫. হঠাৎ করে একদিন সেই বখাটেগুলো আবার হাজির। একজন বললো, "দেখ, মালটা মনে হয় পাঁকছে ?" ঐ কেউ একজন একটা বাঁশ নিয়ে আয় , জলদি ! সেই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন, বাঁশ দিয়ে বাড়ি মেরে মেয়ে আমটাকে গাছ থেকে ফেলে দেয় । মেয়ে আমটার গলা দিয়ে বেশি না, মাত্র দুই এক ফোঁটা সাদা রক্ত গড়িয়ে পড়ে। ঐ দিকে ছেলে আমটা চিৎকার করে যাচ্ছে গলা ফাটিয়ে।

কিন্তু কে শুনে তার ঐ কান্না ? ঐ অসভ্যগুলো চোখের সামনে তার প্রেয়সীর দেহ খুবলে খুবলে খেল ! তার কিছুই করার ছিলো না। অবশেষে তারা মেয়েটার কংকালটাকে একপাশে ছুড়ে ফেলে দিলো। দিন যায় রাত যায়, ছেলেটার কিচ্ছু ভালো লাগে না । আগের মতো খেতেও ভালো লাগে না। জীবন এখন তার কাছে খুব দীর্ঘ হয়।

তার এখন একটাই চাওয়া, "এ জনমে তো আর তার সাথে মিলন হলো না, পরজন্মে যেন তাকে পাই"। মৃত্যুই এখন তার একমাত্র কামনা । একদিন ভোরে সে ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার প্রেয়সীর কংকাল থেকে নতুন গাছ জন্মিয়েছে। এই দেখে ছেলেটা যে কি খুশি ! সে দুর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঐ গাছাটা দেখে আর প্রান ভরে তার গায়ের গন্ধ অনুভব করে। আহঃ আবার সেই মন মাতানো মৌ মৌ সৌরভ ! ৬. একদিন এক বৃদ্ধ এসে ঐ ছোট গাছটাও তুলে নিয়ে তার আম বাগানে নতুন করে লাগায়।

ছেলেটা আবার তার প্রেয়সীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, কিন্তু অতদিনে সে অনেক সহনশীল হতে শিখেছে, আগের মত এত কষ্ট পায় না, শুধুই দীর্ঘশ্বাস তার বুক চিড়ে বের হয়ে আসে। একদিন কোন এক ব্যাপারী এসে গাছের সব আমের সাথে তাকেও পেড়ে নিয়ে যায়। তার পর তার আর কিছু মনে নেই। শেষ অংশ: অনেক দিন পরে একটা ছোট আম গাছ পৃথিবী মাটি ফুড়ে বের হয়। আহঃ, কি সুন্দর বাতাস, কি মিষ্টি আলো।

সে নিজেকে কোন এক আম বাগানে দেখতে পায়। তার চারদিকে শত শত বিভিন্ন আম গাছ। হঠাৎ অতি চেনা একটা গন্ধ তার নাকে আসে, মন মাতানো মৌ মৌ গন্ধ। কিন্তু সে কিছুতেই স্মরন করতে পারে না এই গন্ধ সে আগে কোথায় পেয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।