আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুয়েটে আমার দেখা রাজনীতি - পর্ব ২

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

গত কিস্তি "বুয়েট স্মৃতিচারন" ( Click This Link) লেখার পর আজ মনে হচ্ছে লেখাটা আসলে অসম্পূর্ন রয়ে গেছে। অনেক টুকরো ঘটনার কিছুই সেখানে লেখা হয় নি। যা লিখেছি তার বাইরে রাজনীতি সংক্রান্ত আরো বহু ঘটনা আমার স্মৃতিকে আলো করে আছে। তার কিছু কিছু ঘটনা না বলাটা অন্যায় হয়ে যায়। বুয়েট স্মৃতিচারনের গত কিস্তিতে ছাত্র লীগকে আমাদের সময়ে বুয়েটের দুর্বলতম ছাত্র সংগঠন বলে উল্লেখ করেছিলাম।

এতে কোন ভুল আছে বলে মনে করি না। একমাত্র সংখ্যালঘু কিছু ছাত্র ব্যতীত সাধারন ছাত্রদের মাঝে লীগের কোন জনপ্রিয়তা কখনও দেখিনি। যে জনপ্রিয়তা ইউনিয়ন, ছাত্রদল, এমন কি জাসদের পর্যন্ত ছিল। তবে ছাত্র লীগের একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপের কথা স্মৃতিতে অম্লান। সে ঘটনা ছাত্রলীগকে লাইম লাইটে নিয়ে এসেছিলো।

তখন বুয়েটে কনভোকেশনের আয়োজন চলছে। স্মরনকালের প্রথম কনভোকেশন। বেশ বড় সড় আয়োজন। প্রেসিডেন্ট আসবেন। সবাইকে সার্টিফিকেট দেবেন।

এই কনভোকেশনের সময় প্রেসিডেন্টের বুয়েট সফরকে কেন্দ্র করে শুরু হল ক্যাম্পাসে ছাত্র লীগের প্রতিবাদ মিছিল, আন্দোলন। তাদের দাবী রাজাকার রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে প্রতিহত করতে হবে। নইলে কনভোকেশন করতে দেয়া হবে না। আমরা রুদ্ধ শ্বাসে অপেক্ষা করছি কি হয় দেখার জন্য। সত্যিই কি কনভোকেশন পন্ড হবে? না, তা হয় নি শেষ পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস আসেন নি। বুয়েট কতৃপক্ষের অনুরোধে কনভোকেশনে প্রধান অতিথি হন খালেদা জিয়া। বুয়েট কতৃপক্ষ কনভোকেশন নিয়ে কোন ঝামেলায় জড়াতে চান নি। আর এদিকে রাজাকার প্রেসিডেন্টকে প্রতিহত করার কৃতিত্ব দাবী করে ছাত্রলীগ বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা চালায়। সেসময়টা ক্যাম্পাসে লীগের বেশ তৎপরতা দেখা যায়।

আগেই বলেছি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতৃত্বই ইউকসুতে বেশী সংখ্যায় প্রতিনিধিত্ব করেছে। তবে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়ে স্ক্যান্ডাল একেবারে কম ছিল না। বিশেষত এক বি এন পি সাংসদের নামে স্ক্যান্ডাল শুনেছিলাম সে নাকি টেন্ডারের হিসাব মেলাতে পারছিল না। যার ফলে কতৃপক্ষ তার সার্টিফিকেট আটকে দেয়। পরে হিসাব মেলানোর পর তার ডিগ্রি দেয়া হয়।

এটা শুনে আমার বেশ অবাক লেগেছিল। উনাকে আমি দেখেছিলাম বেশ ভদ্র হিসেবে। এত ভদ্র একজনের বিরুদ্ধে কি করে এমন অভিযোগ উঠতে পারে? বুয়েটের শক্ত প্রশাসনের কারনে ভাংচুরের রাজনীতি খুব বেশী হতে পারে নি কখনই। তবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে। শিবিরের কিছু ছেলের বিছানা বই পোড়ানো হয়েছে।

যেটা বুয়েটের জন্য লজ্জাকর। সব সময় এসব ঘটনার সঠিক বিচার করা সম্ভব নয়। কিছু ঘটনা বিচারের বাইরে রয়ে যায়। আরো অনেক কিছুই মনে পড়ছে এখন। মনে পড়ছে বুয়েটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোর কথা।

ইউকসুর সার্থকতা এখানে। বেশ ভাল রকম প্রোগ্রাম করত ইউকসু। একবার কোন এক প্রোগ্রামে নূরুল উলা স্যার এসেছিলেন। প্রোগ্রামটা অবশ্য ইউকসুর ছিল কিনা তা মনে করতে পারছি না। তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং সেই অভিজ্ঞতার বলছিলেন।

তার এক ফাকে তিনি বুয়েটের পরিবেশের বেশ প্রশংসা করছিলেন। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পর যখন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে দালাল ধর দালাল মার দালাল খোজ এরকম অভিযান চলছে, তখন বুয়েট নাকি একদম শান্ত। বুয়েটে পাকিস্তানপন্থীরা কখনই মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের বিরক্ত করে নি, আবার উনারাও কখনও পাকিস্তানপন্থীদের উপর চড়াও হন নি। বুয়েটের এই পরিবেশ সব সময়ই চমৎকার, সমঝোতাপূর্ন। শেষ একটি স্মৃতি কথা দিয়ে ইতি টানছি আমার বুয়েট রাজনীতি বিষয়ক স্মৃতিচারন।

বুয়েটে শক্ত প্রশাসনের মাঝেও শিবির বিরোধিতা কিছু কম ছিল না। শিবিরকে কোন তৎপরতা চালাতে দিত না বামপন্থী ছাত্ররা। তো সেরকম একজন বামপন্থী ছেলে ছিল আবার আমার ক্লাশের। সে শিবির বিরোধিতার জন্য বিখ্যাত ছিল। তার ফলে শিবির কর্মীরা সবাই তাকে ভাল মত চিনত।

বুয়েট শেষে পরবর্তীতে ছেলেটার বিয়ে হয় আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর বোনের সাথে। সেই বান্ধবী আর তার বোনের ফ্যামিলি আবার মোল্লা টাইপ। জামাত ঘেষা হতে পারে, আমি ততটা জানি না। ঘটনাক্রমে একবার সেই বান্ধবীর বাসায় আবার ছেলেটির সাথে দেখা হয় আমার। দেখি সে পুরো অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।

অসম্ভব ধার্মিক হয়েছে। শিবিরের প্রতি পুরোনো বিরূপভাব তেমন একটা নেই। অনেক সহনশীল হয়েছে। এদিকে সেই আসরে আবার উপস্থিত ছিলেন তখনকার সময়ের বুয়েটের শিবিরের প্রেসিডেন্ট। তিনিও ভালই চিনতেন এই ছেলেকে।

আমি উনাকে জানালাম ছেলেটির অভাবনীয় পরিবর্তনের কথা। আমার মত উনিও খুব অবাক হয়েছিলেন। এরকম পরিবর্তন খুব অপ্রত্যাশিত। মানুষ যে কিভাবে বদলায় তা দেখলে হতভম্ব হতে হয়। মানুষ আল্লাহর এক অদ্ভূত সৃষ্টি।

আর লিখছি না। আজকের মত সমাপ্তি টানছি (এই লেখার মন্তব্য মডারেটেড) এই লেখাটি এখানে প্রকাশিত (Click This Link)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.