আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরন্তর – ৬ (বড় গল্প)

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

প্রথম পর্ব - Click This Link দ্বিতীয় পর্ব - Click This Link তৃতীয় পর্ব - Click This Link চতুর্থ পর্ব - Click This Link পঞ্চম পর্ব - Click This Link “ওহ নো। ওয়ারিদ। ” মনে মনে ভাবলো আকাশ। আকাশের দুইটা মোবাইল। একটা নিয়মিত ব্যবহার করে।

আরেকটা ফ্লিপিং সিম এর জন্য বরাদ্দ। যখন যাদের অফার থাকে, তাদের সিম ভরে কথা বলে। ডিজুসের অফার চলছে এখন। কিন্তু ফারিয়ার ওয়ারিদ। কি আর করা।

ডিজুসের সিমটা খুলে ওয়ারিদের সিম খুঁজতে বের করে ভরলো। ভাগ্যভালো, ক্রেডিট আছে। তাছাড়া রাতে কলরেটও অনেক কম। তবে ফ্রি না, এটাই সমস্যা। “হ্যালো”।

ওদিক থেকে ফারিয়া ধরলো। “বাহ। মেয়েটার গলার স্বরতো দারুন। ” মনে মনে ভাবলো আকাশ। কথা চলতে লাগলো।

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে প্রসঙ্গ বয়ফ্রেন্ডে নিয়ে আসলো আকাশ। “এত চমৎকার একটা মেয়ে তুমি, নিশ্চয় সিঙ্গেল না। ” “এসব সিঙ্গেল-ডাবলের কথা আর বলো না। আই এ্যাম পিসড্ অফ!” আকাশ মনে মনে হাসলো। এই উত্তরটা বহুবার বহু মেয়ের কাছ থেকে শুনেছে।

প্রতিবার ব্রেক-আপের পর তারা ‘পিসড্ অফ’ থাকে কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে ‘ইন এ রিলেশন’ অবস্থায় চলে যেতে তাদের সময় লাগেনা। আকাশ গলায় একটা সমবেদনা নিয়ে এসে বলল, “বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া, তাই না?” “না, না। এবার আর ঝগড়া না। এবার আমি সিরিয়াস। এই রিলেশন টেনে বেড়াতে পারবো না আর।

” “কেন, কি হয়েছে?” “হি ইজ সাচ এ্য…। বাদ দাও। ” “তুমি মনে হয় বেচারার উপর খুব রেগে আছো। ” আকাশ হাসতে হাসতে বলল। এটা হচ্ছে সদ্য ব্রেক আপ হওয়া মেয়েদের জন্য আকাশের প্রথম টনিক।

এর পর মেয়েটা তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের ব্যপারে একটার পর একটা অভিযোগ করে যাবে। আকাশ সব অভিযোগগুলোকে খন্ডন করে দেখিয়ে দিবে যে আসলে মেয়েটা ছেলেটার উপর অবিচার করছে। ছেলেটা হয়তো এতটা খারাপ না যতটা মেয়েটা ভাবছে। এক সময় মেয়েটা হয়তো বলবে, “এই তুমি ওর হয়ে ওকালতী করছো কেন? তুমি বন্ধু আমার নাকি ওর?” তখন আকাশ গম্ভির ভাবে বলবে সে আর দশটা সাধারন বন্ধুর মত স্বার্থপর হতে চায় না। সে চায় তার বন্ধু সুখি হোক।

এবং তার বন্ধুর সুখ মানেতো বন্ধুর বয়ফ্রেন্ড। এটা শোনার সাথে সাথে মেয়েটা গলতে শুরু করবে। গলায় হাজারো ন্যাকামো এনে বলবে, “ইউ আর সাচ এ্য সুইটি হানি। ” কিন্তু তার পরপরই আবার বয়ফ্রেন্ডের বদনাম শুরু করবে। আকাশ আরো দুয়েকটা বদনাম খন্ডানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবে।

তারপর বলবে, “হয়তো আমিই ভুল। তবে অনুরোধ করবো যা করার ভেবে করতে। ” এ অংশটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। সঠিক জায়গায় এটা বলতে হবে। আগে-পরে হয়ে গেলে ওষুধে ভালো কাজ নাও দিতে পারে।

তবে ঠিকঠাক বলতে পারলে এই পদ্ধতিতে নব্বই শতাংশ মেয়ে প্রথম কথা বলায় কাত হবে। তার পর ধীরে ধীরে বয় ফ্রেন্ডকে সরিয়ে হৃদয়ে কি করে জায়গা করে নিতে হয়, সেটা আকাশ খুব ভলো করেই জানে। আকাশ এটা ভেবেই পায় না মেয়েরা একই ফাঁদে বারবার কেন পা দেয়! আকাশ যখন বলল তুমি বেচারার উপর অনেক রেগে আছো, এটা শুনে ফারিয়া যেন আরো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। “তুমি জানো না রবিন, মানে আমার বয়ফ্রেন্ড কতটা মিন। সব শুনলে তুমিও আর এভাবে বলবে না।

” “কেন, কি করেছে? অফ কোর্স, যদি বলতে সমস্যা না থাকে। ” “আরে নাহ। সমস্যা কেন থাকবে। আমি গিয়েছি একটা বার্থ-ডে পার্টিতে। এটা শুনে, হি ওয়াজ শাউটিং লাইক হেল।

আমি কেন গেলাম! আরে, আমি কি তোর কাজের বুয়া নাকি যে কোথায় যাব তোর থেকে শুনে যাবো?” “নিশ্চয় কোন ছেলের বার্থ ডে ছিল। ” আগুনে ঘি দেয়ার জন্যই যেন আকাশ যুক্ত করলো। “হ্যা। ছেলেরই ছিল, তবে সে ছেলের বয়স দুই বছর। ” “তাহলে হয়তো কোন কারন আছে।

তাছাড়া রবিন নিশ্চয় তোমার খারাপটা চাইবে না। ” “খারাপ ভালো জানি না। তবে রবিন সবসময় আমার উপর কতৃত্ব করতে চায়। সে যেটা বলবে সেটাই হবে। ” “এমনও তো হতে পারে সে ভেবেছিল ওখানে গেলে তোমার কোন সমস্যা হতে পারে?” “আরে সমস্যা কিসের? আমার ফ্রেন্ডের ছেলের বার্থ ডে।

” তারপর ফারিয়া একটু থেমে বলল, “ঠিক ফ্রেন্ডের ছেলের না। ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ডের ছেলের। ” “মানে?” আকাশের ততক্ষনে বোঝা হয়ে গিয়েছে এখানেও একটা প্যাঁচ আছে। এই প্রজন্মের কারো জীবনে মনে হয় সোজা ঘটনা ঘটে না। ফারিয়া আমতা আমতা করে বলল, “আসলে আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের এক্স গার্লফ্রেন্ডের ছেলের বার্থ ডে ছিল।

” এক্স-এ ভরপুর জটিল সম্পর্কের জালটা ব্যবহার করে আকাশ যখন ফারিয়ার উপর ওর পরবর্তি ওষধ প্রয়োগ করতে যাবে, তখনই অন্য মোবাইলটা বেজে উঠলো। মনিকা ফোন করেছে। আকাশ দেখলো ফারিয়াকে এখনও পুরোপুরি মুঠোয় আনা হয়নি। কথায় বলে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্যা বেস্ট ইম্প্রেশন। সেই ফার্স্ট ইম্প্রেশনই এখনও ঠিক মত তৈরী হয়নি।

এখন মনিকার ফোন ধরা মানে ফারিয়া হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া। আবার ফোন না ধরা মানে মনিকা হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা। উভয় সঙ্কট বোধয় একেই বলে। তবে ছেলেটা যখন আকাশ। সমাধান বের করা কষ্টসাধ্য হলো না।

আকাশ ফারিয়াকে একটু অপেক্ষা করতে বলে প্রথমে মনিকার ফোনটা কেটে দিল। কিন্তু ভাব দেখালো সে ফোনটা উল্টা ধরলো। তার পর অন্য ফোনে যাতে ফারিয়া স্পষ্ট শুনতে পায় এভাবে বলল, “হ্যা মামা বলেন। … আমিতো ওদের জানিয়ে দিয়েছি। … ওরা পায়নি? সেকি? কেন?.... আচ্ছা আমি আবার জানিয়ে আপনাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে জানাচ্ছি।

” বলাইবাহুল্য, পুরোটাই ছিল আকাশের অভিনয় সংলাপ। অন্য ফোনে ফারিয়া শুনছে আকাশ জরুরী কোন বিষয়ে কথা বলছে মামার সাথে। তার পর মামার কাল্পনিক কলটা শেষ করে ফারিয়াকে বলল, “আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেয়া যাবে? মামার বাইং হাউজে একটা ফোন করেই আমি তোমাকে আবার কল দিচ্ছি। ” ফারিয়া রীতিমত গলে যেতে শুরু করলো। আহা, এত সমস্যার মধ্যেও ছেলেটা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।

তাই বিগলিত গলায় বলল, “আমার কোন সমস্যা নেই। তুমি ধীরে সুস্থে ফোন দাও। তার পর আমাকে করো। আমি জেগে আছি। ” আকাশ ফারিয়ার লাইনটা কেটে অন্য ফোন থেকে দ্রুত মনিকাকে কল দেয়।

ফোন ধরেই মনিকা সন্দেহের সুরে বলে, “তুমি কোথায় ছিলে? ফোন কাটার পর কল দিতে এত দেরী হলো কেন?” “আর বলো না। মামার বাইং হাউজে একটা সমস্যা হয়েছে। সেটার জন্য ল্যান্ডফোন থেকে আমি গত দুই ঘন্টা ধরে ফোন করছি বিভিন্ন জায়গায়। তোমার ফোন পেয়ে আমি মামাকে বললাম অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য ছাড়তে। ” মনিকার গলা নরম হয়ে আসলো।

বলল, “ওহ। আমি ভেবেছিলাম অন্য কারো সাথে কথা বলছো। ” আকাশ যেন খুব কষ্ট পেয়েছে এভাবে বলল, “এটা তুমি কি করে ভাবলে? আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না?” মনিকা তাড়াতাড়ি বলল, “না, না। তা কেন করবো না? করি বলেইতো এত ভালোবাসি তোমাকে। ” আকাশ হাসলো।

তার পর বললো, “মামার সমস্যাটা শেষ হতে কত সময় লাগবে বুঝতে পারছি না। তবে এক ঘন্টার মধ্যে শেষ না হলে, আমি উঠে চলে আসবো। আর আগে হলে, আগেই এসে তোমাকে কল দিব। ” “তুমি যাও। আমি অপেক্ষা করছি।

” তারপর গলায় রহস্য আর দুষ্টুমী এনে বলল, “তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো। আজকে তোমার জন্য স্পেশাল ট্রিট আছে!” আকাশ মনিকার ফোন রেখে দ্রুত ফারিয়াকে ফোন দিল। পরবর্তি এক ঘন্টা ফারিয়ার সাথে কথা বলে আবার ফিরে গেল মনিকার কাছে। এভাবে পালাবদলের মধ্য দিয়ে যখন আকাশের কথা বলা শেষ হলো, তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। শুধু আকাশ বা মনিকা নয়, এই প্রজন্মের একটা বড় অংশ এভাবে সারারাত ফোনে কথা বলে ভোরের দিকে ঘুমোতে যায়।

তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় সর্বশেষ কবে তারা সূর্য উঠতে দেখেছে, তারা মনে করে বলতে পারবে না। ধীরে ধীরে এ প্রজন্ম সূর্যদয়-বঞ্চিত প্রজন্মে পরিনত হচ্ছে। ২২ জুন ২০০৮ ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড। সপ্তম পর্ব - Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।