আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার গুহা

আমার মুখোশ . . . সবার মুখোশ

আমার গুহায় আমি বড়ই স্বাধীন। পাহাড়টা আরেক জনের। আমার বাপের। বয়স বেশীনা আমার গুহার। এই বছর আটেক হবে।

বাচ্চা কালে যখন মাঠে দৌড়াতাম, মাইর খাইতাম প্রচুর। বাইরেও, ভিতরেও। তখন শেয়ার্ড গুহা ছিল। আমি আর আমার ছোট্ট ভাই এর। একলা কান্দনের জায়গা ছিলনা ।

তাই পলাইতাম। কমলাপুর ইস্টিশনে। লোকাল প্লাটফমে বইয়া ট্রেনের আসা যাওয়া দেখতাম। ঘন্টার পর ঘন্টা। মাথা ঠান্ডা হইয়া যাইত।

কিছুকাল পর আব্বার দয়ায় একটা সাইকেল পাইলাম। আমার দু:খ আর কান্দনের সাথী হইল আমার সাইকেল। আবার ওই রেল লাইন। ওইটার পাশ দিয়া চালানো। শরীরকে কষ্ট দিয়া মাথাটা ঠান্ডা করা।

ফেল করতাম, মাইর খাইতাম, হা কইরা দুনিয়া দেখতাম। ভাবতাম শালার বাল খারাপ্ও হইতে পারলামনা, ভালোও হইতে পারলামনা। খারাপ হওয়ার ইচ্ছায় বিড়ি ধরলাম। চলতাছে এখনো। মেট্রিক আমলে গিয়া দোস্ত পাইলাম - একটা।

আকড়াইয়া ধরলাম। আমাগো তখন একটা গুহা হইল। কলোনীর পুরান একটা বাড়ির সিড়ি। বিড়ি খাইসি, হাসছি, কানছি আর সাইকেল চালাইছি। বষার মধ্যে কানতে কানতে প‌্যাডেল মারছি।

দোস্ত আমার চুপচাপ পিছে বইসা ছিল। ভাব করসে য্যান বোঝে নাই। ম্যক্সি কইরা কলেজ এ যাইতাম। লাইফের প্রথম প্রেমে পড়লাম। দুই দোস্তই।

আমার দোস্তের মন ভাংল আগে। স্বান্তনা দিতে গিয়া দেখতে পাইলাম ওর আরেকটা গুহা আছে, অর কান্দনের লাইগা। আমার অ্যাক্সেস নাই। আমার গুহায় একা থাকা শুরু হইল। জানলা দিয়া দুরের দুইটা বাড়ির ফাক দিয়া আকাশ দেখা যায়।

দেখতাম, বিড়ি খাইতাম, ফোলা গাল আরও ফুলাইয়া বইয়া থাকতাম। কত রাত্রি গেছে নিজের ভাগ্যরে অভিশাপ দিয়া। আমার দোস্ত দেশ ছাড়লো। একা হইলাম আবার। নিজের একটা আলদা দুনিয়া কল্পনা করতাম।

নেশার মত কষ্ট খাইতাম চুইষা। হাসতাম, এখনো হাসি। আমার ভুল ভাংগাইল আমার পরী । কিজানি কি দেখল আমার মধ্যে আল্লাই জানে। ৬ বছর ধইরা আমারে আনল লাইনে।

আমার গুহা হইল আমাগো আপন জায়গা। সপ্তায় একদিন আইলেও আমার পুরা পরিবারের রাংগানি খাইত আমার পরী। তার পরো আমার শার্টের কোনা মুঠঠি কইরা ধইরা রাখছে, ছাড়ে নাই। বহুত ক্যারফা করলাম। পরীরে বউ করলাম।

আমার টিনের ছদের গুহা। আমাগো ছোট্ট ভুবন। আমার সংগ্রামে পাওয়া চাকরি জীবনে কত বাধা আইছে, গুহায় ঢুইকা আমি শান্ত হইয়া গেছি। আমার পরীর বাপ চইলা গেছে ওইপার। আমি দেখিছি আমার পরীর কান্দন, আমার গুহায় ।

এখন আমার গুহায় আমি স্বাধীন না। হায়রে আপন গুহা। এখনও গুহাটা বাপের । নিজের না। শুনছিলাম, গুহা মানবরা প্রথম যখন গুহার বাইরে আসা শুরু করলো উন্নতি শুরু হইল তখন।

এখন আমার পরীও সকাল আটটা থেইকা রাত্রি আটটা খাটা শুরু করছে। আমার এত হাসন, কান্দন আর স্মৃতির গুহা টারে কাইল রাত্তির থেইকা গুডবাই বলা ধরছি। কংক্রীটের এই জংগলে আরেকটা গুহা কয় মাসের মধ্যেই খুজতে হইবো। আগে সবার মাঝে একলা একা ছিলাম। এখন সবার মাঝে দুইজন মিলা একা আছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।