আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলমান রিক্যাপ (১ম কিস্তি)

সাব্বির ভাইয়ের জন্য আরো দশ লাখ টাকা দরকার। মানবতার দিকে তাকিয়ে আছি।

লোকাল বাসে চেপে রোজ এই পথেই বাড়ি ফেরে অনন্ত। রাস্তার পাশের দোকানের সাইনবোর্ড, ফুটপাথে গজিয়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ বিপণী বিতান, মোড়ে মোড়ে বয়েসী বটগাছের মত দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল উচ্চতার হোর্ডিং, সবই খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে সে। গাধার খাটুনি শেষে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে ঝুলতে ঝুলতে যখন কোনমতে দৃষ্টিটুকু জানালার বাইরে মেলে দেয়ার সুযোগ হয়, সেটাকে কখনোই হাতছাড়া করতে চায়না অনন্ত।

নিজস্ব বিনোদনের একটা উপায়ও পেয়ে গেছে এতে। এখন মোটামুটি চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারে স্টপেজগুলোর আশেপাশে কী কী দোকান আছে, কোন ল্যাম্পপোস্টের নগ্ন দেহ আবৃত করে আছে যৌন মহৌষধের হ্যান্ডবিল, টুথপেস্ট আর সাবানের বিজ্ঞাপনে সুন্দরীরা কোথায় আকর্ণ হাসি হেসে তার দিকে মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে আছে। ক্রমেই ব্যাপরটা উপভোগ করতে শুরু করেছে অনন্ত। বাসের যাত্রীদের যথাসম্ভব কোনাচোখে আপাদমস্তক পড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এটা যেন একটা খেলা।

মুখ দেখেই যেমন জটাধারী সন্ন্যাসীরা ভূত-ভবিষ্যত বলে দিতে পারেন, তেমনি সাজপোশাক আর অভিব্যক্তি দেখে একটা মানুষের ভেতর পড়ে নেয়ার গোপন খেলা। এ খেলার ফলাফল নিয়ে কখনোই ভাবেনা সে। ফিরতি পথে বাসের এ কিছুটা সময় যেন তার দার্শনিকতা চর্চার মোক্ষম ক্ষণ। একেবারেই নিজের মত করে ভাবনাগুলোকে নেড়েচেড়ে এটার সাথে ওটা জোড়া দিয়ে, কখনো ইরেজার দিয়ে ঘষে ফেলার মত শিশুসুলভ এক্সপেরিমেন্ট চালাতে দারুণ লাগে। ঘামে জবজবে, উস্কুখুস্কু চুলের ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখে বড় মায়া হয় অনন্তের।

কল্পনা করে এদের পেশা বা প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা কেমন হতে পারে। যে লোকটা হাতলে ঝুলতে ঝুলতে অসহায় চোখে একটা খালি সিটের জন্য বাসের এমাথা ওমাথা চষে ফেলে - সে কি অফিসে খুব রাশভারি একজন কর্মচারি? কারণে অকারণে বেল টিপে সেই কি আর্দালি বেচারাকে দিনে শতবার লেফট রাইট করায়? ব্যক্তিত্বের ছাপ নাকি চেহারায় ধরা পড়ে। এক দু'টাকা নিয়ে যারা রোজ কন্ডাক্টরের সাথে খোঁচাখুঁচি করে মজা পায়, তাদের ব্যক্তিত্ব ঠিক কোন পর্যায়ে ফেলা যায়? গোবেচারা ধরণের লোকরা বেশ গুটিসুটি মেরে বসে, দাঁড়িয়ে যায়। আলগোছে শরীরটাকে আরো ভেতরে সেঁধিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। মধ্যবয়সী কিছু পুরুষের চোখ সর্বক্ষণ পাশে দাঁড়ানো মহিলা যাত্রীর বুকে অথবা কোমরের পেছন দিকটায় সেঁটে থাকে।

বুঝতে পারা মেয়েগুলা এই তেরছা দৃষ্টির আতপে আমসির মত শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে অনন্ত-র খুব ইচ্ছা হয় লোকটাকে চমকে দিয়ে বলে ওঠে, ভাই চোখটাকে রেহাই দিন। আর কত দেখবেন? চলবে.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।