আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা ইংলিশ প্যান্ট



একটা ইংলিশ প্যান্ট ছোটবেলায় আমার জন্য ঈদের বরাদ্দ থাকত একটা ইংলিশ হাফ প্যান্ট। গতবার অপরাধের চুড়ান্ত শাস্তি হিসেবে সে ঈদি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কারন আমি লম্বা সিঁড়ির মাথায় বসে পিছলা খেলায় ছিলাম দারুন ওস্তাদ। নতুন প্যান্ট পেয়ে আমার আতিশয্য আরও বেড়ে যেত ফলে নতুন প্যান্টের পেছন ছিঁড়তে বেশী সময় লাগত না। তাই গতবার পেয়েছিলাম বাংলা হাফ প্যান্ট।

কোমরে রাবার লাগানো পাতলা সুতি কাপড়ের তৈরী নীচের দিকে হ্যাংলা মত ছাড়া প্যান্টকে আমরা বলতাম বাংলা প্যান্ট আর মোটা কাপড়ের তৈরী দুই পকেট সমৃদ্ধ, সাথে প্লাস্টিকের বেল্ট পরার আংটা সহ প্যান্টগুলো হল সে সময়ের লোভনীয় ইংলিশ প্যান্ট। এক বছর পর আব্বা ইংলিশ প্যান্ট দেবার পুর্নঘোষনা দিলেন এবং সাথে করে বাজারে দর্জির দোকানে নিয়ে গেলেন। কাঠের অর্ধ ভাঙ্গা দোকানের মধ্যে একমাত্র সেলাই মেশিন। তার সামনে পাঞ্জাবী পরা দর্জি বকের মত লম্বা গলা বের করে বসে আছে। উঠে এসে আমার প্যান্টের মাপ নিলেন।

ফেরার সময় জানতে চাইলাম, কবে দিবেন? দর্জি বলল, ঈদের আগের দিন এসো। তখনো ঈদের এক সপ্তাহ বাকি। সকাল বেলা থেকে সময় আর কাটে না। দর্জি আমার প্যান্টটা করছে কিনা, ঈদের আগে দিবে কিনা কত রকম চিন্তা! শেষমেষ দোকানের আশপাশে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম। দর্জির পাশে বসে কাপড় সেলাই দেখতাম।

দর্জি হয়ত অনেকণ পর বলতেন, বাবা কিছু বলবা? কিছু বলতে পারতাম না। বাইরে এসে আবার ঘুর ঘুর করতাম। দ্বিতীয় দিনও একই অবস্থা দেখে দর্জি আমার সামনে প্যান্টের কাপড়টা কাটা আরম্ভ করল! আমি আনন্দে ছাগল ছানার মত ধিতিং ধিতিং নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে এলাম। আহা আজি আকাশে বাতাসে কি আনন্দ! তৃতীয় দিন গিয়ে বুকটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। যেটুকু কাটা অবস্থায় দেখে এসেছিলাম সেভাবেই পড়ে আছে! ঈদের আগে বিশেষ চুলকাটা ছিল বাধ্যতামুলক।

আব্বা সাথে করে সন্তোষ হেয়ার কাটিং এ নিয়ে যেতেন। মেইন রাস্তার ধারে গর্তের উপর দোকানের পাছায় বাঁশ দিয়ে কোন রকমে দাঁড় করানো ছিল সন্তোষ হেয়ার কাটিং। চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আব্বা নাপিতকে বলতেন, এমনভাবে ছেঁটে দাও যেন কোরবানী ঈদের আগে আর হাত দেয়া না লাগে। সন্তোষ আমার চুলের কোরবানী করত। মাথা নিচু করে আমি রাস্তার অপর পাশের লোকজনের কম রেটে চুল কাটা দেখতাম।

টুলের উপর নাপিত বসে আছে আর নাপিতের পায়ের ফাঁকে মাথা ঢুকিয়ে লোকজন চুল কাটছে। ঈদের সকাল। ঘন কুয়াশা ভেদ করে মা তেল পিঠা তৈরী করে। আব্বা সবাইকে গোসল সেরে নেয়ার তাগাদা দেন। নিয়মমত আতর ভেজা তুলা কানে গুজে দিই।

ইংলিশ প্যান্টের উপর পাঞ্জাবী আর বাটি ছাঁট চুলের উপর টুপি দিয়ে আব্বার সামনে দাঁড়ায়। হাতে ঈদি আট আনা তুলে দেন। দিনটা তখন আরও ঈদ ঈদ লাগে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.