আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তালাক ০১



মাঝে মাঝে তালাক সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর শুনে অবাক হতে হয়। কতিপয় মুর্খ আলেম যেভাবে ফতোয়া দিয়েছে তাতে তালাকের বৈধতা সম্পর্কে একটা প্রশ্নই তৈরি হয় মনে। তীরন্দাজের লেখায় পড়েছিলাম হাত তালি দিলে নাকি তালাক হয়ে যায়, এর পরে জানলাম স্বপ্নে তালাক বললেও নাকি তালাক হয়ে যায়, এবং নতুন জানলাম কেউ যদি বৈশাখী মেলায় যায় তাহলেও তার তালাক হয়ে যাবে। এইসব আলেমদের কি শাস্তি দেওয়া যায় সেটা বলা শক্ত। তবে নেপথ্যে কোনো না কোনো নারী দখলের রাজনীতি বিদ্যমান এখানে।

তালাক বৈধ করে দিলে একটা হিল্লা বিয়ের বন্দোবস্ত হয় এবং তালাকপ্রাপ্তা রমণীকে হিল্লা বিয়ে করবার মানুষের অভাব নেই। তবে আবু হুরায়রা বর্নিত একটি হাদিসে আছে, মুহাম্মদ বলেছেন আমার অনুসারীরা তাদের ভেতরের বদ চিন্তার কারণে পাপী হবে না যতক্ষণ না তারা সেই বদ চিন্তাকে কাজে পরিনত করছে। এবং কেউ যদি মনে মনে ভাবে বৌকে তালাক দিবে তবে সে তালাক কার্যকর হবে না। ( হাদিস বুখারী ৭ম খন্ড, ১৯৪ তম) যদি কোনো স্ত্রী যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যতিরকে স্বামীর কাছে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি চায় জান্নাতের সুগন্ধও তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। ( আবু দাউদ ২২১৮) ইসলামের শৈশবে তালাক পাওয়াটা খুবই সহজ ছিলো, তালাক দেওয়াটাও নিয়মিত একটা বিষয়ে পরিনত হয়েছিলো।

মুহাম্মদের সময় কালে এমন কি আবু বকরের পরে উমরের খিলাফতের প্রথম দুই বছরেও ৩ বার তালাক উচ্চারণকে একবার বলেই ধরা হতো। অর্থ্যাৎ এক সাথে ৩ বার তালাক বললেই সেটা মাত্র এক বার তালাকের ঘোষণা হিসেবে স্বীকৃত হতো। তবে সময় বদলালো, উমরের খিলাফতের তৃতীয় বৎসরে এসে এত বেশী মানুষ তালাকের পদ্ধী গ্রহন করা শুরু করলো যে বাধ্য হয়ে উমর ৩ তালাক উচ্চারণকেই তালাক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন। ( উৎস সাহীহ মুসলিম বই ০০৯ হাদিস ৩৪৯১, ৩৪ ৯২, ৩৪৯৩) তালাকের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত নারীর যৌন্সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ। Book 12, Number 2275: Narrated Abdullah ibn Abbas: Women who are divorced shall wait, keeping themselves apart, three monthly courses; and then said: And for such of your women as despair of menstruation, if ye doubt, their period (of waiting) shall be three months. This was abrogated from the former verse. Again he said: (O ye who believe, if ye wed believing women) and divorce them before ye have touched them, then there is no period that ye should reckon." তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো এতা সংশোধিত বিধান।

কোরান আল্লাহর বানী তবে সেটা জিব্রাঈল মারফত নীচে আসবার সময়ে সম্ভবত জিব্রাঈলের কম স্মরণশক্তির কারণেই ভুল হয়ে যেতো এবং এতে বারংবার সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতো। Book 12, Number 2300: Narrated Abdullah ibn Mas'ud: I can invoke the curse of Allah on anyone who wishes: The smaller surat an-Nisa (i.e. Surat at-Talaq) was revealed after the verse regarding the waiting period of four months and ten days had been revealed. উপরের হাদিসের সাথে নীচের হাদিসের পার্থক্যটা লক্ষণীয়। একটাতে বলা হচ্ছে অপেক্ষার সময়কাল ৪ মাস ১০ দিন, অন্যটাতে বলা হচ্ছে সেতা ৩ মাস । এক সাথে থাকতে না চাওয়া কিংবা মুহাম্মদের বিবি হতে রাজী না হওয়া এক মেয়ের কথা জানাই বনী জুয়ান গোত্রের মেয়ে উমাইমা বিনতে আন নুমাত বিন শাহরিলের বাসায়। মুহাম্মদ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো তুমি কি আমাকে তোমার হাত দিবে? তার পাল্টা জবাব ছিলো কোনো রাজকন্যা কি সাধারণ একটা মানুষের সাথে নিজের বিয়ের সম্মতি দিতে পারে? মুহাম্মদ অতঃপর তার শরীরে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করবার চেষ্টা করলেন।

মেয়েটা জানালো পরম করুনাময়ের দোহাই আমি তোমার কাছ থেকে নিস্কৃতি চাই। মুহাম্মদ বাইরে অপেক্ষারত আবু উসাইদকে বললেন তাকে তোমরা দুটো লিলেনের কাপড় দাও আর ওর গোত্রের কাছে ফেরত দিয়ে আসো। আবু উসাইদ এবং শাল এর ভাষ্য মতে মুহাম্মদ উমাইমা বিন শাহরিলকে বিবাহ করেছিলেন তবে উমাইমার তাকে পছন্দ হয় নি। তাই তাকে তার গোত্রের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো মুহাম্মদ। ( সূত্র সাহীহ বুখারি, ৭ম খন্ড হাদিস ১৮১, ১৮২) তালাকের একটা কারণ ছিলো স্বামীর অত্যাচার।

থাবিত ইবনে কায়েসের স্ত্রীর কারণটা মোটেও কম যুক্তিপূর্ণ ছিলো না। একবার থাবিত ইবনে কায়েস তাকে পিটিয়ে জখম করলো। পরদিন সকালেই তার স্ত্রী হাবিবা উপস্থিত হলো মুহাম্মদের দরজায়। বিস্তারিত বলে তালাকের দাবি করলো। থাবিত কে ডেকে আনা হলো, মুহাম্মদ বললেন হাবিবা তোমাকে থাবিত যা দিয়েছে সেটা তোমাকে ফেরত দিতে হবে- হাবিবা সম্মতি দিলো, এবং তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে গেলো।

( ৭ম খন্ডের ১৯৭ , ১৯৮, ১৯৯তম হাদিস) আবু দাউদ( ২২১৯) মুহাম্মদ তার ইদ্দতকালীন সময় নির্ধারণ করেছিলেন মাত্র ১টা ঋত্বস্রাবকালীন সময়। তবে তালাকের বিধান ছিলো প্রাথমিক অবস্থায় ৪ মাস ১০ দিন, পরে সেটা কমে ৩ মাস হয়। তবে মুহাম্মদ নিজের ধর্মের বিধান সব সময় মনে রাখবার মতো স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন না মোটেও। তাই একেকজনের জন্য একেক রকম বিধান জমা হয়েছে হাদিসের পাতায়, কারো ক্ষেত্রে সেটা ২ মাস, কারো ক্ষেত্রে এটা ছিলোই না। কারো ক্ষেত্রে এটা ৩ মাস, কখনও দাসীদের জন্য ২ মাসের যৌননিরত থাকবার নির্দেশ, কখনও সেই নির্দেশ ৩ মাসের।

তালাকের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় এক সাথে থাকতে ভালো না লাগা। যেমনটা ঘটেছিলো বারিরার বেলায়। তার দাস স্বামী তাকে মনে প্রাণে কামনা করলেও স্বামীর প্রতি বারিরার কোনো ভালোবাসাই অবশিষ্ট ছিলো না। ( হাদিস ২০৩,২০৪,২০৫,২০৬) মনের তাগিদ না থাকলে এক সাথে থাকলেই বা কি লাভ হবে? অবৈধ যৌনসম্পর্কের জন্য বিচ্ছেদ হয়েছিলো হিলাল বিন উমাইয়ার। একদিন রাতে বাসায় ফিরে সে দেখলো তার স্ত্রী অন্য একজনের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত।

পরদিন সকালে সে মুহাম্মদের কাছে গিয়ে বিচার দিলো। এবং মুহাম্মদ বিষয়টা ভীষণ অপছন্দ করায় কোরানের আয়াত নাজিল হলোঃ যারা তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনে তাদের যেকোনো একজনের সাক্ষ্যই গ্রহনযোগ্য হবে- অতঃপর চরম নাটকীয়তা হিলাল অভিযোগ করলো আমি তাকে ব্যাভিভচার করতে দেখেছি। তার স্ত্রী বললো নাহ হিলাল মিথ্যা বলছে। হিলাল পরপর ৪ বার স্ত্রীর ব্যভিচারের সাক্ষ্য দিলো। এবং অতঃপর মুহাম্মদ তাকে থামতে নির্দেশ দিলেন।

আল্লাহকে ভয় কর, পরকালে কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে । হিলাল বললো আল্লাহ আমাকে এ কাজের জন্য চাবুক পিটা করবারও নির্দেশ দিবেন না। আমি জানি আমি সত্য বলছি। যদি আমি মিথ্যা বলে থাকি তাহলে আমার উপরে খোদার লানত বর্ষিত হোক। অতঃপর হিলালের স্ত্রীর পালা, কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেও সাক্ষ্য দিলো হিলাল যা বলছে সেটা সর্বৈব মিথ্যা।

অতঃপর মুহাম্মদ নির্দেশ দিলেন হিলালের স্ত্রী বা তার সন্তানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যভিচারের অভিযোগ থাকবে না। তাদের বিচ্ছেদ হলো। যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তাকেই শাস্তি দেওয়া হবে। অতঃপর সেই মেয়ের সন্তান হলো, সেই সন্তানের চেহারা ছিলো হিলাল বর্ণিত কথিত অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারীর সাথে। তবে এটার সত্যতা প্রমাণিত হলেও মুহাম্মদ পরবর্তীতে সেই মেয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করে নি।

এর বিপরীতে অন্য চিত্রও আছে। যেহেতু কোনো এক সময়ে ঘোষিত হয়েছিলো মুসলীম নারীদের অন্য ধর্মের পুরুষের সাথে বিবাহ হারাম তাই অনেক ধর্মান্তরিত নারীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিলো এ কারণে। তাদের প্রাক্তন স্বামীদের বাদ দিয়ে তাদের নতুন বিয়েও হয়েছিলো। একজনের স্ত্রী পূর্বেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করবার কারণে তাদের ভেতরে বৈবাহিক সম্পর্ক রদ হয়ে যায়। সেই মেয়ের নতুন বিবাহ হয়, এবং এর পরে তার স্বামী এসে বললো আমি ইসলাম গ্রহন করেছি এবং আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই।

অতঃপর তাকে পুনরায় তার স্ত্রী ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।