আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নের নদী আজ ফেটে চৌঁচির!!!

জীবনকে দেখছি প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে, প্রতিটা বাঁক থেকে। ।

হাজারো ক্লান্তির পর একদিন দুপুরের ভাত ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আর দেখি এক বয়ে যাওয়া নদীর বুক চিরে প্রেয়সীকে নিয়ে একটা সরু পাঞ্চির পালে হাওয়া লাগি্যে উডে বেড়াচ্ছি দিগন্ত ছেদ করে... আমদের সুখযাত্রা দেখে অভিনন্দন জানাচ্ছে দুপাশে গড়ে উঠা জনবসতি। ভেসে যাচ্ছি গ্রামের পর গ্রাম...আর আমাদের চারটি চোখকে পুলকিত করছে গ্রাম্য নরনারীর হাসি কান্না মাখা দিনাতিপাত।

অবিরল বর্ণ মাখা কৃষান চলছে মাঠে আর কৃষানির কোল জুড়ে এঁটোবাসন। এক অফুরন্ত সুখ বুকে নিয়ে কাটছে তাদের দিনমান। ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ, দুচারটে গরু বাছুর, এ নিয়েই কেটে যায় তাদের পুরুষের পর পুরুষ। অভুতপুর্ব দৃশ্যালোক আর অনন্ত সুখের পালে এতটা বেশী দখিনা হাওয়া লেগেছে যে আমার প্রিয়ার মাথা মনের অজান্তেই হেলে পডল আমার কাঁদে, আমিও এলিয়ে দিলাম নিজদেহ। আমাদের সোনারতরী ভেসে জাচ্ছে অনন্তে... হঠাৎ এক মৃদু ধাক্কায় চেতনা ফিরে এল দুজনের।

এ আমরা কোথায় এ কোন মরুভুমিতে আমরা এসে পড়লাম!! এ কোন সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে আমাদের নিয়ে এল, এ কোন হাওয়া!? খরতাপে পুড়ে জাচ্ছে সমস্ত পৃথিবী, মানুষগুলো এ কী ধরনের পোশাক দিয়ে নিজেদের ঢেকে রেখেছে! সবাই যার যার মত নিজপ্রান বাঁচাতে অস্থির, কেউ কেউ আবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে । কোথায় যায় এই মুখোশ পরা অসহায় প্রানহীন লোকগুলো? দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি একটি বাচ্চা মেয়ে পেটের উপর হাতচেপে বসে কাঁদছে। তাকে মাথায় হাতদিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার? এরা সবাই এত অস্থির কেন, এদের কী হয়েছে? মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে থাকল, অবশ্য সে কিইবা বলবে যেখানে এক ২৫ বছরের যুবকই আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলনা! একটু একটু করে যতই এগুচ্ছি ততই নিপা আমার বাম হাতকে সাঁডাশির মত চেপে ধরছে,আমার বুকের ভেতরেও ভয় আর আতঙ্কের পাহাড় ধীরে ধীরে উঁচু হচ্ছে। ! একটু যেতেই এক বড়সড় মাঠে এসে পড়লাম...একি এখানে দেখি গুটিকয়েক লোক একদল লোককে চাবুকাঘাতে জর্জরিত করছে, রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে সমস্ত মাঠ। ।

অন্যদিকে আরেকদলকে দেখলাম দুদলে ভাগ হয়ে গালাগালিতে ব্যাস্ত, কেউ বলছে রাজাকার অন্যদল বলছে দালাল। দেখে কিছুই বুঝলামনা। ভয় আর আতঙ্ক ভরা মনে প্রশ্ন উঠল... প্রচন্ড তাপদাহে পোড়া নগরীতে হচ্ছে কী? কী হল এ মানুষগুলার, কেন এদের বাকরুদ্ধ? কে তাদের মুখে তালা দিল। ভাবলাম মাঠের ওই চাবুক ওয়ালাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করি আর তাই করলাম, কিন্তু কেউ কোন সদুত্তর দিলনা, আবারও বললাম, ভাই আমি স্বপ্নপুর থেকে মনের অজান্তে এখানে এসে পড়েছি, একটু কেউ কি বলবেন কেন আপনারা এদের মারছেন? কেন লোকেরা কিছু বলছেনা? কেন পথের ধারে ক্ষুদার্ত শিশু একা বসে নিরবে কাঁদে?? প্রশ্ন করতে করতে আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। এর মাঝে লোকটা প্রচন্ড হুংকারে আমাকে থামিয়ে শুধু বলল, জানিনা।

। তাহলে কে জানে?? চাবুক ওয়ালা প্রতাপশালী লোকদের যা জানার বাইরে, সে নির্বাক সত্যটা কে জানে? কোন শক্তির কাছে এর একাটা ভাল ঊত্তর পাব? ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নের ঘুর্নিঝড়ে আমি যখন রাস্তা দিয়ে উড়ে যাচ্ছি ঠিক তখনি একটি জল্পাই রঙের গাড়ি এসে সামনে দাড়াল, এক লাফে নেমে এল তিনজন, টেনে হেঁচড়ে তুলতে চাচ্ছে গাড়িতে। সে কী? এরা আমাকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে? আমি চিৎকার করছি আর আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদের হাত থেকে ছুটে আসতে...নিপা আমার বামহাত চেপে ধরে আছে আর প্রচন্ড চিৎকার করে কাঁদছে... ধস্তাধস্তির মাঝে প্রচন্ড ঘাম আর তৃষ্ণায় আমার ভাত ঘুমের সমাপ্তি ঘটল। সমস্ত বুক মনে হচ্ছিল খরায় চৌঁচির হওয়া একটা নদী যেখানে পুরো একটা বরষা লাগবে আবার পালের নৌকায় হাওয়া লাগাতে। ।

বিছানায় চোখবুজে ভাবতে লাগলাম কেন এই দুঃস্বপ্ন!!!! এরমধ্যেই সান্ধ্যচায়ের ডাক দিল নিপা...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.