আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তিম [ গল্প ]



[ খুনা খুনির গল্প যারা পড়েন না তারা না পড়লেই ভালো ] এক - বাম বুকে গুলিটা লাগলো । রিসাত তার দুই হাত দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরলো । তার সারা শরীর কুঁকড়ে আসছিল । আস্তে আস্তে বসে পড়লেন তিনি । হঠাৎ করে তার ঠোঁটের এক পাশে কিঞ্চিত হাসি দেখা গেলো ।

তা উক্ত জায়গায় উপস্থিত কারোরই চোখ ফাঁকি দিলো না । যেন সবাইকে দেখানোর জন্যই । রশিদ সাহেবের বুকের উপরে চাপানো পাথরটা সরে গেলো যেন আর মাথার উপরে থাকা পাহাড়টা যেন হঠাৎ করেই গলে পড়ে গেলো । শুধু তার নয় উক্ত এলাকার সবার মনে যেন আজ একটি শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো । দুই - পুরো নাম মোহাম্মাদ রিসাত উদ্দিন ।

গনিতের উপর পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন । একা থাকেন কাটাসুরের একটি বাড়ির এক তলায় এক রুমের বাসায় । স্কুলের ক্লাস শুরু হয় সকাল আঁটটায় । রিসাত বের হয় সাড়ে সাতটায় । হেঁটে হেঁটে যান ।

স্কুল লালমাটিয়ায় । নতুন নিয়োগ হওয়ায় এখন শুধু সিক্স , সেভেন আর ক্লাস এইটের গণিত ক্লাস নেন । পরবর্তীতে নাইন টেনের ক্লাস নিতে পারবেন বলে তাকে বলা হয়েছে । স্কুলে প্রত্যেক স্যারের একটা নাম দেয় ছাত্ররা । তারও একটা নাম আছে ।

তাকে ছাত্ররা ' সিদে ' নামে ডাকে । তার চরিত্র ' সাদাসিধে ' এই জন্য প্রথম অক্ষর আর শেষের অক্ষর নিয়ে শর্টকার্টে তাকে ' সিধে ' ডাকে । বিষয়টা রিসাত জানে । তবুও না জানার ভান করে থাকে । কারণ নামটা তার ভালো লেগেছে ।

অন্যান্য স্যারদের নাম বড়ই ভয়াবহ । তিন - একদিন ছুটির দিন বাসায় বসে পেপার পড়ছিলেন । পাশের বাসার দুলাল সাহেব রুমে আসলো । '' রিসাত সাহেব কি ব্যস্ত নাকি ? '' '' না । পেপার পড়ছিলাম আর কি ।

'' '' তা একটু সাহায্য করতে পারবেন ? '' '' কেমন সাহায্য বলেন ? পারলে করে দেই । '' '' তেমন কিছু না । কিছু মুরগি কিনে এনেছি । বুয়াটা আজকে আসে নি এখনও তো দুপুরে রাঁধবে । এখন একটা একটু জবাই করতে হবে ।

গিন্নি আবার রক্ত ভয় পায় । না হলে আপনাকে বিরক্ত করতে আসতাম না । '' '' বাজার থেকে কেটে আনলেই পারতেন । '' '' ওরা কীভাবে না কীভাবে কাটে । মনের ভিতর খুত খুত থেকেই যায় ।

এই জন্য বাসায় করি । কি পারবেন ? '' '' চলেন । '' '' ধন্যবাদ । '' মুরগি ধরার দায়িত্ব পড়লো রিসাত সাহেবের উপর । দুলাল সাহেব যখন ছুরি মুরগির গলার উপর দিয়ে চালিয়ে দিলেন ।

তখন মুরগির গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো । সাথে ছিল একটি ঘ্রাণ । রিসাত সাহেব রক্তের প্রবাহ দেখতে থাকলেন । আর এমন একটা ঘ্রাণ তিনি নাকে পেলেন যেটি এর আগে কোনদিন তিনি পান নি । ঐ ঘটনার পর তিনি প্রায়ই টাওন হলের বাজারে যেতেন যেখানে মুরগি , হাঁস জবাই করা হয় ।

ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া দেখতেন । আর সেই ঘ্রাণ নিতেন । এক পর্যায়ে এটি নেশা হয়ে গেলো । এই রকম দৃশ্য না দেখলে আর ঐ ঘ্রাণ না নিলে তিনি স্বাভাবিক থাকতে পারতেন না । আর একটা জিনিসের নেশা এক পর্যায়ে তার তেজ হারায় ।

রিসাত সাহেবের আর ঐ দৃশ্য আর ঐ ঘ্রাণে এক পর্যায়ে পুষালো না । তিনি এরপর থেকে রাতে বের হয়ে কারওয়ান বাজারে যেতেন । যেখানে শত শত গরু জবাই করা হয় । এতে তিনি শান্তি পেলেন । রক্তের পরিমাণ ঢের বেশি ।

আর আরেক ধরনের ঘ্রাণ তিনি পেতে লাগলেন । এ যেন আলাদা অনুভূতি । এই কারণে তার ক্লাস নেয়ার উপর কোন প্রভাব পড়তে লাগলো না । তিনি স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করতে লাগলেন । তবে এই নেশাও একদিন উবে গেলো ।

আরও নতুন কিছুর সন্ধানে মন ও শরীর উভয়ই আনচান হয়ে উঠলো । চার - খবরের কাগজ সকাল সাতটার দিকে দিয়ে যায় । চা খেতে খেতে খবরের কাগজের উপর চোখ বুলাতে থাকেন । সেদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় একটি লাশের ছবি দেখলেন । ছবিটা দেখে একটি চিন্তা তার মাথায় খেলো গেলো ।

চিন্তাটা আসতেই তিনি ঘাবড়ে গেলেন । চা পুরো না খেয়ে পেপার না গুছিয়ে কোন রকম দরজা তালা দিয়ে তিনি বের হয়ে গেলেন স্কুলের জন্য । এই দিন তিনি ঠিক মতো ক্লাস নিতে পারলেন না । স্কুলের হেডমাষ্টার রতন সাহেব তাকে বললেন ,'' ছুটি তো নেন না একদিনও । টানা ক্লাস করাতে করাতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন ।

এইবার একেবারে সাতদিনের ছুটি নেন । '' রিসাত সাহেবও সাই দিলেন । এরপর ছুটি চেয়েএকটি দরখাস্ত লিখে দিলেন । আর সাথে সাথেই অনুমদিত হয়ে গেলো । বাসায় এসে গোসল আর খাওয়া দাওয়া সেরে তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন ।

কিন্তু সকালের সেই চিন্তাটা তার মাথায় এসে ঘোরা ঘুরি করতে লাগলো । ভয় আর সেই কাজ করার প্রতি এক দ্বিমুখী আকর্ষণ অনুভব করলেন । প্রতিটাই প্রচুর প্রবল । এই অবস্থা আর সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তিনি আবার গোসল করার জন্য বাথরুমে গেলেন ।

অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলেন । এই চিন্তা থেকে কিন্তু তিনি মুক্তি পান নি । ক্লান্ত হয়ে এক পর্যায়ে ভেজা শরীর নিয়েই বিছানায় তিনি শুয়ে পড়লেন । ঘুম ভাঙল রাত এগারোটার দিকে । আবার সেই চিন্তা ।

'' এখন মানুষের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়ার দৃশ্য দেখার পালা । সেই রক্তের ঘ্রাণ দেয়ার পালা । '' এই চিন্তা থেকে একটুর জন্য হলেও মুক্তির জন্য তিনি ব্লেড দিয়ে নিজের আঙ্গুলের উপর কেটে ফেললেন , সেই ঘ্রাণ নিয়ে মাথাকে ঠান্ডা করার জন্য । অল্প সময়ের রসদ জোগাল সেটি । কারণ পরিমাণ কম ।

শরীর আর মানতে চাইল না । পশুর মতো আচরণ শুরু করলো । একটি ছুরি পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে দরজা বন্ধ করে রওনা হলেন । রাস্তায় রাস্তায় হাটতে লাগলেন । তার খোঁজ একজন মানুষ শুধু আর আশে পাশে কিছুই থাকবে না ।

কিন্তু যে জায়গায় কোন গাড়ি নেই সেই জায়গায় কোন মানুষই নেই আবার যে জায়গায় আছে দুটোই আছে । মিলছে না । হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন রাত একটা বাজে । দূরে একজনকে দেখতে পেলেন তখন তিনি । শরীর যেন অনেকদিন ধরে খুদার্ত ।

এমন আচরণ করে উঠলো । আশে পাশে তেমন কিছুই নেই । এই রকম সুযোগ আর হয়তো পাওয়া যাবে না । মানুষটা কাছে আসার পড়ে বুঝা গেলো লোকটা বেশ বয়স্কই । এতো রাতে রাস্তায় কি করছে ? এরপর রিসাত সাহেব চিন্তা করলেন তাতে তার কি ? তাকে আগে তার শরীর ঠাণ্ডা করতে হবে ।

রিসাত সাহেব দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে ফেলে দিলেন । শক্ত করে বাম হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরলেন আর ডান হাত দিয়ে ডান পকেটের ছুরিটা বের করে গলার উপর চালিয়ে দিলেন । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো । তিনি রক্ত দেখতে থাকলেন । কি সুন্দর রক্ত ।

কি তার ঘ্রাণ । অপূর্ব । অপূর্ব । এর থেকে সুন্দর আর কি হতে পারে ? তার শরীর ঠাণ্ডা হল । নিজের শরীরের নিয়ন্ত্রণ যেন বুঝে পেলেন ।

এরপর তিনি দেখতে পেলেন সেই লোকটি আর কেউ নন তার স্কুলের হেডমাস্টার রতন সাহেব । ................................................. [ ইংশাল্লাহ বাকিটুকু পরবর্তীতে দেয়া হবে ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।