আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়া

এটা আমার রাজত্ব অনেক দিন থেকে একটা কথা গোপন রেখেছি আমি। কার কাছে গোপন করেছি- আসলে নিজেরই টা অজানা। হয়তো নিজের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে। তবে আজ আর বলতে বাধা নেই। আমার মনে হয় জানা উচিত সবার।

সত্যিই জানা উচিত সবার। কারন গল্প টা তো আমার জীবনেরই একটা অংশ। এ থেকে হয়তো কেউ না কেউ সতর্ক হবেই... আমি রনি। ঢাকা কলেজ থেকে পাশ করে সদ্য চাকরি প্রাপ্ত একজন। আসলে জীবনে যা আশা করেছিলাম সবই পেয়েছি, কিন্তু একটা ব্যাপার কখনই ভাবিনি যা আমার জীবনে ঘটেছে অপ্রত্যাশিত ভাবে।

আজ নির্মোহ স্বীকারোক্তি করব তারই। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আরও উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ, একটা প্রতিষ্ঠান, যার নামটাই একজন নিরীহ গোবেচারা ছেলেকেও বাঘ বানিয়ে দেয়। সে ঢাকা কলেজের ছাত্র হয়ে আমিও বদলে গেলাম। ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করা ছেলে হয়ে গেল আড্ডাবাজ।

নিজের জন্মস্থানের বেশ কয়েকজন বড় ভাই ছিল কলেজে যারা আমাকে এই আড্ডার নেশা থেকে উদ্ধার করতে ধরিয়ে দিল টিউশনি। এমনিতেও গ্রামে পরিবারের অবস্থা অতটা সচ্ছল ছিলনা। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। একদিন শুভক্ষণ ঠিক করে বড়ভাই আমাকে নিয়ে গেল সেই বাসায় পরিচয় করিয়ে দিতে। এর আগে কখনও এ কাজ কয়রা হয়নি তাই কিছুটা আড়ষ্ট ছিলাম।

আড়ষ্টতা কেটে গেল যখন আমার ছাত্রী কে দেখলাম। আমার ছাত্রী কামনা, অসাধারন সুন্দরী। মায়া ভরা হরিনীর চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট দেখেই ‘হৈমন্তী’ গল্পের নায়কের মত মনে হল, ‘আমি পাইলাম’। আমাকে লুল প্রজাতির ভাবার দরকার নেই কারন এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম কাউকে ভাল লাগা। ভাল লাগা! উপমাটা বোধ হয় ঠিক হলনা।

এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম প্রেম। তাও তার প্রথম দর্শনে। পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ান আরম্ভ করলাম তাকে। সিটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ে। স্মার্ট, পড়াশোনা তেও ভাল।

সপ্তাহে ৩ দিন পরানর কথা থাকলেও বেশি যেতাম। কারন টা তো সবাই বুঝি। দেখতে দেখতে সময় কেটে যেতে লাগল। আমি পড়ানোর ফাকে ফাকে তাকে ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইতাম আমার মনের কথা। সে বুঝেও না বোঝার ভান করত (পরে জেনেছি)।

এভাবেই চলে যাচ্ছিল সময়... একদিন দুপুরে কলেজে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সব বন্ধুরা মিলে। হঠাৎ প্রধান ফটকে লক্ষ্য করলাম একটা জটলা। তারপর আচমকা শুরু হল ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া। ধাওয়া খেতে খেতে জানতে পারলাম সিটি কলেজের ছাত্র দের সাথে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ঝগড়া হয়েছে নারীঘটিত কারনে।

সেই নারী আবার ইডেন কলেজের। বোঝাই যাচ্ছে দুই প্রেমিক গ্রুপের ঝগড়া তখন রুপ নিয়েছে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যুদ্ধে। একসময় আমরা (ঢাকা কলেজিয়ান) পাল্টা ধাওয়া দিয়ে সিটি কলেজের ছাত্রদের তাদের ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে গেলাম। আমার বন্ধু সহ অনেকে ঢুকল সিটি কলেজে ভাংচুর এর জন্য। আমাকেও উত্তেজিত করল বাইরে থেকে ঢিল ছোড়ার জন্য।

আমিও ভাত্রিত্ব রক্ষার জন্য আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করতে লাগলাম। তখনও বুঝতে পারিনি আমি কি ভুল টাই না করছি??? বিকেলে চলে গেলাম টিউশনে। যেয়ে শুনি আমার ছাত্রী হাসপাতালে। দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে গেল আমার, যখন শুনলাম দুই কলেজের মারামারিতে সে আহত হয়েছে। হাসপাতালের ঠিকানা জেনে কালবিলম্ব না করে চলে গেলাম সেখানে।

ওর বাবা আমাকে জানাল ওর ডান চোখের জ্যোতি ৮০% কমে গেছে। অল্পের জন্য পুরোটা শেষ হয়ে যায়নি। সেদিন রাতে ঘুমুতে পারলামনা। পরদিন সকালে চলে গেলাম হাসপাতালে। কামনা তখন বিপদমুক্ত, অপারেশন শেষ।

ওর বেডের পাশে বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কি ঘটেছিল? ও বলল, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দোতালায় হঠাৎ বাইরে থেকে আশা একটা ঢিল ওর চোখে লেগেছিল। আমার বুক যেন খালি হয়ে গেল। এমন সময় ছাত্রী আমাকে অবাক করে আমাকে বলল, ‘স্যার, আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। আমি জানি আপনিও আমাকে করেন।

কিন্তু এখন তো আমার একটা চোখ নষ্ট, আপনি কি আমাকে এখনও ভালবাসবেন?’ তখন শুধু তার হাত ধরে নীরবে জানিয়েছিলাম, তার হাত কখনও ছাড়বনা। সত্যি ছাড়িওনি। তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি সামনে। সরাসরি যে কথা বলবার সাহস নেই তাই লিখেই জানাবো বলে ভেবেছিলাম। জানি সে আমাকে ক্ষমা করে দিবে, কিন্তু আমি হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা তার চোখের দিকে তাকিয়ে।

কারন ওই মায়া ভরা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমানোর জন্য দায়ী যে আমি নিজে............ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।