আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমানের ভাবনা

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

আজ কিংবা চৌদ্দ শত বছর আগে মানুষের মৌলিক চরিত্র তেমন প্রভেদ ছিলো না। এই প্রশ্নটাই মাঝে মাঝে মাথয় ঘাঁই মারে। মানুষের উৎকর্ষতা কি বেড়েছে এই সময়ের ভেতরে। উত্তরটা সবসময়ই ঋণাত্বক। সম্পদের বন্টন, খাদ্য আহরণ আর সঙ্গম এর বাইরে নৈতিকতার উপদেশ খুজতে মানুষ মুনি ঋষিদের দারস্থ হয় নি।

মুহাম্মদের কাছে পরামর্শের জন্য আগত অধিকাংশ মানুষের কাছেও এই সমস্যাগুলোই জীবনের প্রধান সমস্যা ছিলো, এখনও ধর্মবেত্তাদের কাছে একই ধাঁচের প্রশ্ন নিয়েই মানুষেরা আসে। অন্তত আমার সামান্য পঠনে তাই মনে হয়। আদর শিক্ষা, সহবত জ্ঞানের তুলনায় এই সম্পদ বন্টন, সঙ্গম এবং সঙ্গম তরিকা নিয়ে প্রশ্ন। খাদ্য সংগ্রহ এবং সম্পদ সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন এই হলো মানুষের মৌলিক চাওয়া পাওয়া। তাই মনে হয় মানুষের যৌনতা আর ক্ষুধাই সব।

সঙ্গম আর সম্পদের বন্টন এই নিয়ে মানুষের আলোচনার শেষ নেই। মানুষের বিছানায় এসে ইশ্বর কামকলা শিক্ষা দেন, সঙ্গমরীতির বৈধতা দিতে তিনি ঐশী বানী পাঠান। ইশ্বর মহান, তাই এই সঙ্গমকাতর জনতার দাবি তিনি ফেলতে পারেন না। মুহাম্মদের বয়ানের অধিকাংশের সাথেই কোনো না কোনো ভাবে মানুষের যৌনকাতরতাযুক্ত। কথাটা এমনি মনে আসলো না, আজকে দুপুরে ইসলামী অনুষ্ঠান দেখছিলাম, প্রশ্নোত্তর পর্বে যে দুটো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো একটা সম্পদের বাটোয়ারা, অন্যটা দাস প্রথা এবং খ্রীস্টানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কোনো মুসলীম পুরুষের জন্য বর্তমানে বৈধ কি না।

দাসপ্রথা নিয়ে সবচেয়ে দুঃখজনক যেটা দেখলাম, এমন কি ভারতে যখন ইবনে বতুতা দিল্লীর দরবারের প্রধান কাজী তখনও তার নিজের দাসী ছিলো ৩ জন। তার স্ত্রী ছিলো না, তবে প্রয়োজনও ছিলো না। এমন কি দাসীর সংখ্যায় কোনো বাধা ছিলো না। মুসলীম যে কেউ যেকোনো পরিমাণে দাসী রাখতে পারে, তাদের সাথে সঙ্গম বৈধ সুতরাং আশনাই এবং মৌজমাস্তির অভাব হবে না। মৃত্যুর আগে আগে মুহাম্মদের নিজের আওতায় ছিলো সম্ভবত ১২৫ জন দাসদাসী।

যাই হোক আসলে দাস-দাসীর সংখ্যা নিরুপণ নয় যে মাশায়ালা দিচ্ছিলো তার বক্তব্য শুনে একটু আশ্চর্য হলাম। মানুষের ধর্মবোধ মানুষকে পিশাচও করে দিতে পারে। বর্তমানের বাস্তবতায় পৃথিবীতে দাস নেই কোনো তবে অদুর ভবিষ্যতে এমন সময় আসতে পারে যখন মানুষ আবার মানুষকে দাস হিসবে প্রহন করবে তখনকার জন্য মুসলীমদের কাছে একটা নির্দেশনা থাকলো। অনলি গড নোস বেটার। মহিলার প্রশ্নটা আসবার আগে যাযাকুল্লাহ যাযাকুল্লাহ যাযাকুল্লাহ- আমি চিন্তিত ছিলাম আদতে এই শ্লোগানের পড়ে অন্য কিছু আসবে কি না, উত্তরদাতারও নিজের সংশয় ছিলো, তাই বললো, এইটাই কি সব না কি কোনো প্রশ্ন আছে।

মহিলার প্রশ্ন ছিলো যেহেতু খ্রীষ্টানেরা মুহাম্মদকে নবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তাই কোনো খ্রীষ্টানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হবে কি না? উত্তরে জানা গেলো কোনো হিন্দু কিংবা বৈদ্ধ কিংবা পৌত্তলিকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম, তবে পিপল অফ বুকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে। পিপল অফ বুকের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি কেনো দিয়েছেন এটা উত্তরদাতা জানেন না তবে ইশ্বর বলিয়াছেন তাই- তবে বঞ্চনার জায়গাটাও থাকলো- কেনো মেয়েরা বিয়ে করতে পারবে না, কেনো পুরুষেরাই এই অধিকার পেলো। সাদামাটা নয় বরং অনেক বেশী পুরুষতান্ত্রিক ভঙ্গি আর দৃঢ়তা ছিলো তার উত্তরে, সচারাচর দেখা যায় স্বামীকে অনুসরণ করে স্ত্রী, স্ত্রী স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বলেই পুরুষদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে পিপল অফ দ্যা বুককে বিয়ে করার। মেয়েরা এই সুযোগ বঞ্চিত এ কারণেই। আমি মুগ্ধ, তবে সমস্যা একটাই, মানুষের ধার্মান্তরিত হওয়া কিংবা মানুষের ভেতরের ভাবভালোবাসা তো ধর্মের হিসেব মানে না, এখানে সামাজিক প্রতিক্রিয়া আর সামাজিক চাহিদাও প্রধান।

আমাদের দেশে যদি কোনো মুসলিম মেয়ে হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতে চায় তবে হিন্দু ছেলে নিজের ধর্ম পালন করতে পারবে না তাই তাকে বাধ্য হয়ে মুসলিম হতে হবে, এমন পরিস্থিতি আমরা তৈরি করতে পারি নি এখনও- ফেরদৌসী মজুমদার- রামেন্দু মজুমদারের কথা উদাহরণ হিসেবে না এনেই বলছি- যেখানে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অক্ষুন্ণ রেখে তারা জীবন যাপন করবে- দাসি বিষয়ে অন্য একটা কথা মনে এলো- যদিও বিবাহ করা হারাম তবে পৌত্তলিক দাসীর সাথে সঙ্গম হারাম না, দাসের সাথেও সঙ্গম হারাম নয়- তবে এ নিয়ে কোনো মাশায়ালা নেই- সম্ভবত মুসলিম মেয়েরা দাসের সাথে সঙ্গমে তেমন আগ্রহী ছিলো না- খুঁজে দেখতে হবে এমন মুসলীম নারীদের ইতিহাস যারা নিজের আঁওতাভুক্ত দাসেদের সাথে সঙ্গম করেছে। যাই হোক এই অনুগমনের সমস্যার জন্যই বোধ হয় সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের স্ত্রীর বোমা হামলার অভিযোগে নাম উঠেছিলো এবং তিনি সাজাপ্রাপ্তা আসামী। সিদ্দিকুর রহমানের বৌ পর্দানশীন, তবে তাকে বোমাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করবার এই প্রথাটাকে আমার ধিকৃত মনে হয়েছে। আমি দুঃখিত এই সম্পূর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে যেখানে স্বামীর অপরাধের ভুক্তভোগী হতে হয় স্ত্রীকে এবং স্বামীর অপরাধে নির্যাতিত নারীর অধিকারের প্রতি আমাদের তথাকথিত সুশীলদের তেমন আগ্রহ নেই। সিনেমার উপাদান হয়ে কিংবা ঘটনার নাটকীয়তা বাড়াতে যতটা উপযুক্ত এ বিষয়টা ততটা সামাজিক সচেতনতা এখনও তৈরি হয় নি এ বিষয়ে, নারী অধিকার বিষয়ে সেমিনার করে পয়সা উড়ানোর বাইরে নারী নেতৃরা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন নি যেখানে নারী নিজের অবস্থান নিতে পারে।

যৌতুক বিরোধি কঠোর আইন আছে- তবে যৌতুক গ্রহনের প্রথা থেমে নেই- এখনও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে- আইন করা হয়েছে- আইনের প্রয়োগ শুরু করো, সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন এখন কেনো? ঘর সাজিয়ে দিবেন, কনে সাজিয়ে দিবেন যে মোড়কেই আসুক না কেনো এটা যৌতুকই- আমাদের ভেতরে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে জন্মজন্মান্তরের এবং অবিচ্ছেদ্য ভাববার ধারাটাতেই গলদ। একে অপরের অর্ধাঙ্গ দখল করে রেখেছে বলেই স্বামীর বাইরে স্ত্রীর আলাদা অস্তিত্ব স্বীকার করছে না সমাজ, এ কারণেই বিবাহিত নারীর একক পরিচয় নেই- গর্ভে সন্তান বহন থেকে শুরু করে স্বামীর কৃতকর্মের যাবতীয় বোঝাও তাকে উঠাতে হচ্ছে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.