আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের আলোকে দেখা একটি জাতির বিজয় । (পর্ব - ৫) ২৫ মার্চের ঘুমন্ত বাঙালী নিধন থেকে ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর সরকার হয়ে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়, গনহত্যা , যুদ্ধাপরাধ , ধর্ষণ ,লুটপাট

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরুচ্ছে - এই খবর সন্ধ্যার থেকেই ঢাকাসহ সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে সৈন্যদের অগ্রগতি থামানোর প্রস্তুতি চলছিলো। কিন্তু রক্তলুলোপ এক দল হয়েনার হাতে তখন বাঙালি জাতি। পাকিস্থানি সৈন্যরা রাতের আধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলসহ অন্যান্য হল, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, সংবাদপত্র অফিসগুলো ট্যাঙকের গোলায় গুড়িয়ে দেয়। হাজার হাজার লাশ পড়ে থাকলো রাস্তায়।

সকালে কিছু সময়ের জন্যে কার্ফু উঠানো হলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চললো। সেই রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্থানে পাঠানো হলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্রগ্রাম বেতার থেকে স্বাধীনতা ঘোষিত হলো। পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমনের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাঙালিরা নিজেদের তৈরী করলো পাণ্টা আক্রমনের জন্যে। সেই লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে গঠিত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার।

সেই সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সংঘঠিত হলো। ভারত আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে এই সরকার ধীরে ধীরে একটা বিজয়ের দিকে যুদ্ধটাকে নিয়ে গেল। এদিকে এক কোটি মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় গ্রহন, দেশে পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্বিচারে হত্যা আর অগ্নিসংযোগ আর মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে পাকিস্তানী শাসন অব্যহত রাখার প্রচেষ্টায় যোগ দিল কিছু কুলাঙ্গার বাঙালি। যারা মুলত ১৯৭০ এর নির্বাচনে পরাজিত মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলামী, পিডিপি, নেজামে ইসলামী দল থেকে এসে রাজাকার, আল-বদর, আল শামস আর শান্তিকমিটি তৈরী আর কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বাঙালি নিধন আর গনহত্যার দোসর হিসাবে আর্বিভূত হয়েছিলো। কিন্তু বাংলা মায়ের অদম সাহসী মুক্তিসেনারা তাদের সকল প্রতিরোধ চুরমার করে দিয়ে একের পর এক বিজয় অর্জন করে যখন পাকি হানাদার আর তাদের দেশী সহচরদের পরাজিত করে ফেলছিলো - তখন ইয়াহিয়া খান তার পরাজয়কে ভিন্ন রূপদানের লক্ষ্যে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।

এই পদক্ষেপ মুক্তিযুদ্ধকে একটা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায়। জন্ম হয় ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী। ভারত ৬ই ডিসেম্বর সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিলে পাকিস্থানী বাহিনী তখন কোন একটা দৈব সহায়তার আশায় দিনগুনতে থাকে। বলা হয় তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে মার্কিন সপ্তম নৌ বহর। কিন্তু তার আগেই সোভিয়েত ইউনিয়নের চাপে সেই নৌবহরের অগ্রযাত্রা রূদ্ধ হয়।

ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্যসহ পাকিস্থানী জেনারেল নিয়াজী রেসকোর্স ময়দানে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের প্রধান জগজিত সিং অরোরার কাছে আত্নসমর্পন করে। জন্ম হয় একটা স্বাধীন দেশের - যার নাম বাংলাদেশ। এই ৯ মাস ব্যাপী যুদ্ধে পাকিস্থানী বাহিনী আর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হয় ৩০ লক্ষ বাঙালি আর সম্ভ্রম হারায় ২ লক্ষ মা-বোন। সবচেয়ে জঘন্য ঘটনা ঘটায় ঘাতক আলবদর বাহিনী। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ১৪ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে বুদ্ধিহীন জাতি হিসাবে রূপান্তরিত করার একটা নীলনক্সার অংশ হিসাবে ঢাকায় অবস্থানরত বুদ্ধিজীবদের হত্যা করে - যা এখন বুদ্ধিজীবি দিবস হিসাবে পালিত হয়।

---- আগামী পর্ব - উপসংহার
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।