আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের আলোকে দেখা একটি জাতির বিজয় । (পর্ব -৪ ) নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাপঞ্জি - ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা । ৭ মার্চের ভাষন ,আলোচনার নামে কালক্ষেপন- আক্রান্ত বাঙালী জাতি।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
নির্বাচনের আগে ইয়াহিয়া খানকে মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলামী আর জামাতে ইসলামীর মতো দলগুলোর সন্মিলিত ভোটের কাছে আওয়ামীলীগের নিশ্চিত পরাজয় সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল ইয়াহিয়ার জন্যে বিরাট একটা বিপর্যয় হিসাবে দেখা দেয়। সকল বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আওয়ামীলীগ ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৭ টি সহ ১৬৯ টি আসন পেয়ে নিরন্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো - বামপন্থীদের একটা অংশ “ভোটের আগে ভাত” শ্লোগান দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যায়। নির্বাচনের আগে ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর উপকূল অঞ্চলে ঘঠে যাওয়া প্রবল জলোচ্ছাসে লক্ষ লক্ষ বাঙালির মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতিতে সরকারের নিরবতা এবং পশ্চিম পাকিস্থানীদের উদাসীনতা বাঙালিদের মধ্যে পাকিস্থানীদের বিরূপ মনোভাব সুস্পস্ঠ করে তোলে।

একদিকে আওয়ামীলীগের এই বিজয়কে আপাত মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে পাকিস্থানীরা গোপনে পূর্ব পাকিস্থানে সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্থানের নেতা ভুট্টো ক্ষমতার লোভে সরকারের সাথে গোপন সমঝোতা করে আর ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কালক্ষেপনের নীতি গ্রহন করে। মূলত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয়ের পরই পাকিস্থানী সরকার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা তৈরী করে। ১৯৭১ সালে জানুয়ারী থেকেই ঢাকায় অধিকহারে পাকিস্থানী সৈন্য পরিবহন শুরু হয়। এই বিষয়কে আরো বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আদমজী আর মিরপুরে বিহারী-বাঙালি দাঙ্গা লাগানো হয় - ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে কাশ্মীরে নামানো হয়।

এ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সৈন্য বেসামরিক পোশাকে পরিবহন করা হয়। এই বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল নেতারা সজাগ ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্র জনতা এই প্রতারনা বুঝতে পারছিলো এবং তাদের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এই সময় আসে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। শেখ মুজিবুর রহমান বিশাল জনসভা থেকে ঘোষনা দিলেন - “ এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম” কার্যত পূর্ব পাকিস্তানে তখন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সকল নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছিলো।

বাকী ছিলো একটি সুস্পস্ট ভাবে স্বাধীন দেশের ঘোষনা। ছাত্ররা নতুন দেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। ঘরে ঘরে নতুন পতাকা তৈরী হচ্ছে। অন্যদিকে ক্যান্টনমেন্টে চলছে বাঙালি নিধনের সকল পরিকল্পনার চুড়ান্ত রূপরেখা প্রনয়ন। এদিকে ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন ছুতায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ কয়েকবার পিছিয়ে ২৫শে মার্চ নির্ধারন করলো।

সমস্ত বাংলা তখন উত্তাল। প্রতিদিন পুলিশ আর সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। বাঙালিদের জন্যে সবচেয়ে হতাশার খবর এলো যখন বালুচের কসাই খ্যাত টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্থানের গভর্ণর করে আনা হলো। সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৪ শে মার্চ সন্ধ্যায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্যে স্থগিত ঘোষনা করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে। আর নেই রাতের মধ্যে ভাগে শুরু হয় পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর বাঙালি নিধন যজ্ঞ অভিযান “অপারেশ সার্চ লাইট ”।

--------------- পরের পর্ব: ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউন থেকে ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর সরকার হয়ে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়, গনহত্যা , যুদ্ধাপরাধ , ধর্ষণ ,লুটপাট।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।