আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের আলোকে দেখা একটি জাতির বিজয় । (পর্ব -২) বাঙালির পাকিস্থানী হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই ক্রমাগত বাঙালিদের কাছে এই শোষন আর বঞ্জনার কাহিনী সুস্পষ্ট হতে থাকে। যে দুইটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা বাঙালির পাকিস্থানী হওয়ার স্বপ্নভঙ্গের প্রধান কারন হিসাবে চিহ্নিত করা যায় - তা হলো - ১) মাতৃভাষার ভাষার উপর আঘাত ২) যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন। এই বিষয়ে এখন সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হবে। ১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী - পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৬ মাসের মাথায় প্রাদেশিক গনপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বিরোধীদলের সদস্য শ্রী ধীরন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজীর সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দানের জন্যে একটি প্রস্তাব আনেন। কিন্তু মুসলীমলীগের বাঙালী সদস্য খাজা নাজিমুদ্দিনসহ অবাঙালি সদস্যদের বিরোধীতার মুখে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়।

যদিও শ্রী দত্ত উনার প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনেন - কিন্ত্ত বাঙালিদের দাবীর প্রতি অনীহার বিষয়ে পশ্চিমারা ছিলো অনঢ়। এরপর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী ঘোষনা দিলেন - পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে উর্দুই পাকিস্তানে উপযুক্ত রাষ্ট্র ভাষা হবে। এর মধ্যে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্না ঢাকায় ঘোষনা করেন - ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’। শুরু হয় ছাত্র জনতার প্রতিরোধ। ফলশ্রুতিতে আসে ১৯৫২ সালের ২১এ ফেব্রুয়ারী - সরকারের সকল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছাত্র জনতা ভাষার অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে।

সরকারের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায় - রাজপথ রঞ্জিত হয় শহীদের রক্তে। ভাষার জন্যে বিশ্বের আর কোন জাতিকে রক্ত দিতে হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে - সেই একুশে ফেব্রুয়ারী এখন জাতিসংঘের ঘোষনায় আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। পরে ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তানের সরকার প্রদেশের ভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৬৫ সালে শাসনতন্ত্ররে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কিন্তু রাষ্ট হিসাবে পাকিস্তানের যতটুকু ক্ষতি হওয়া হয়েই গিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে এই ভাষার আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের বীজ বোপিত হলো পূর্ব বঙ্গের নরম পলিমাটিতে। আরেকটা বড় ঘটনা বাঙালিদের স্বপ্ন ভংগের কারন হিসাবে প্রাধান্য পাবো। তা হলো রাজনীতির ক্ষেত্রে পাকিস্থানী শাসকদের বাঙালিদের দমিয়ে রাখার প্রচেষ্ঠা। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্থানে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। সরকারী দল মুসলিম লীগের মোকাবেলায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো যুক্তফ্রন্ট গঠন করলো।

২১ দফার ভিত্তিতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ৩রা এপ্রিল শেরে বাংলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা এই সরকারকে মেনে নিতে পারলো না। এরা একের পর এক সমস্যা তৈরী করতে লাগলো। এই প্রক্রিয়ায় নব নিযুক্ত গর্ভনর ইসকান্দর মির্যা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেয় এবং কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। যুক্তফ্রন্টের অফিস তালাবদ্ধ করা হয় আর নেতাকর্মীদের উপর নেমে আসে নির্যাতন।

কঠোর সেন্সরশীপ আরোপ আর মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়। বাঙালিদের সর্বপ্রথম নিজের সরকারের শাসনের আশার আলো শুরুতেই নিভিয়ে দেওয়া হলো। এর পর সরকার গঠন আর শাসনের ক্ষেত্রের চলে একে পর এক ষড়যন্ত্রের খেলা - যার কোনটাই বাঙালি জাতি আশা আকাঙ্খার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন ছিলো না যা বলাই বাহুল্য মাত্র। ---------- পরের পর্বঃ স্বপ্নভঙ্গের প্রেক্ষিতে বাঙালির রাজনৈতিক স্বকীয়তা অর্জনের চিন্তাধারা, আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম এবং তার একাধিক ধারা (আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের জন্ম) -
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।