আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে আত্মত্যাগ... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

নবুয়তের তখন প্রাথমিক অবস্থা। মক্কায় ধীরে ধীরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ছিল। মক্কার অলিতে-গলিতে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এদিকে ইসলামের এ আলোকে নিভিয়ে ফেলার জন্য শত্রুরাও পাগলপারা হয়ে উঠল।

মুসলমানরা অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতা নিয়ে শত্রুদের সব অত্যাচার ও নিপীড়ন মোকাবেলা করার চেষ্টা করছিল। কুরাইশ কাফের ও মুশরিকদের অবিরাম নির্যাতনের মুখে মুসলমানদের টিকে থাকা কঠিন ছিল। কেননা, গোটা পরিবেশটাই ছিল শত্রুদের দখলে। সে সময় যে ক’জন ঈমানদার মানুষ ছিল তাদের একজন হচ্ছেন হযরত সুহাইব (রা)। সীমাহীন অত্যাচার ও অনাচার হয়েছে তার উপর।

তিনি অসম্ভব ধৈর্য এবং দৃঢ়তা নিয়ে এসব সহ্য করেছেন। সুহাইব (রা)-এর উপর অমানুষিক নিপীড়ন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-কেও শোকাভিভূত করে তুলল। তিনি হযরত সুহাইবের উপর কাফেরদের এ নির্যাতন সহ্য করতে পারলেন না। তাই সুহাইবকে তিনি একদিন কাছে ডাকলেন। মহানবী (স) তাকে মক্কা হতে হিযরত করার নির্দেশ দিলেন।

আল্লাহর নবীর নির্দেশ সুহাইব মান্য করলেন। স্বদেশের মায়া-মমতা ও আত্মীয়-স্বজনের ভালবাসা ছেড়ে সুহাইব (রা) একদিন হিজরতের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। যাবার সময় সুহাইব (রা) পরিধানের পোশাক ও আত্মরক্ষার জন্য সামান্য অস্ত্র সাথে নিলেন। হযরত সুহাইব দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন একথা কুরাইশদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। সংবাদ পেয়ে কুরাইশরা সুহাইবকে ধরার জন্য লোক পাঠাল।

যে করেই হোক সুহাইবকে ধরে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হল। খুঁজতে খুঁজতে একসময় সুহাইবের সন্ধান পেয়ে গেল কুরাইশরা। সুহাইব (রা) এতে মোটেও বিচলিত হলেন না। তিনি কুরাইশদের এ বাড়াবাড়ি রুখে দাঁড়ালেন। সুহাইব (রা) শত্রুদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের অবশ্যই জানা আছে যে, আমি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ।

আমার হাতে একটিও তীর থাকা পর্যন্ত কেউ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। তীর যদি ফুরিয়ে যায় তাহলে তরবারি ব্যবহার করব। তরবারি ভেংগে গেলে তোমরা আমার যা খুশি তাই করতে পারবে। এর চেয়ে বরং তোমরা আপষে আসো। মক্কায় আমার যা কিছু আছে তা তোমরা নিয়ে নাও আর আমাকে ছেড়ে দাও।

কুরাইশরা ঘাবড়ে গেল। তারা কোন ঝুঁকি না নিয়ে সুহাইবকে ছেড়ে দিল। তারা ভাবল ধন-সম্পদ যেহেতু পাওয়া গেছে, তাহলে সুহাইবকে বরং এদেশ থেকে চলে যেতে দেয়াই ভালো। মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে তিনি মদীনায় রওয়ানা হলেন। হিজরতের পর মহানবী (স) একদিন সুহাইবের সাক্ষাৎ পেলেন।

সাক্ষাতে মহানবী (স) সুহাইবের প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা প্রদর্শন করলেন। নবী করীম (স) সুহাইবকে বললেন, বড়ই লাভের ব্যবসা করলে সুহাইব। নবী (স) সত্যিই বলেছেন। সুহাইব (রা) অধিক মর্যাদার দাবীদার ছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগ ও সহনশীলতা তাঁকে উচ্চ মর্যাদার আসনে পৌঁছে দিয়েছিল।

তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় স্থানেই মর্যাদা পেলেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।