আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্য মিথ্যার লড়াই... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

রোমের বাদশাহ কায়সার। এক অহংকারী বাদশাহ ছিলেন তিনি। তার গর্ব ছিল জ্ঞান নিয়ে, বুদ্ধি নিয়ে। বাদশাহ নিজেকে বড়ই জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মনে করতেন।

শুধু তাই নয়। তার জ্ঞান ও বুদ্ধির বড়াই খুব বেড়ে গিয়েছিল। এজন্য তিনি মুসলমানদের কোন পাত্তাই দিতেন না। মুসলমানকে তিনি অজ্ঞ ও নির্বোধ বলে মনে করতেন। একদিন হঠাৎ তার মাথায় এক শখ চেপে বসল।

বুদ্ধি দিয়ে তিনি মুসলমানদের তাক লাগিয়ে দেয়ার কথা ভাবলেন। কায়সার বিষয়টি নিয়ে ভাবলেন। তারপর তা নিয়ে উজিরের সাথে শলা পরামর্শ করলেন। ঠিক করা হল উজির যাবেন বাগদাদে। বাগদাদ ছিল মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী।

সেখানে মুসলিম জ্ঞানী-গুণীদের সাথে বুদ্ধির লড়াই হবে। সব কিছু ঠিকঠাক করা হল। মুসলিম পণ্ডিতদের তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তাও পাকা করা হল। প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে মুসলিম বাদশাহ মনসুর রোমের বাদশাহকে কর দিতে বাধ্য হবেন তাও ঠিক করা হল।

যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। উজির বাগদাদে এলেন। খলিফা মনসুরের নিকট রোমের বাদশাহর প্রস্তাব পেশ করা হল। মুসলিম অধিপতি সে প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করলেন। সকল জ্ঞানী-গুণীকে বাদশাহর দরবারে ডাকা হল।

এদিকে দেশময় ছড়িয়ে পড়ল এ প্রতিযোগিতার কথা। তাই বাগদাদে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটল। সময় অনুযায়ী বুদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু হল। রোমের উজির উঁচু একটি আসনে গিয়ে বসলেন। অন্য সবাই নীচে বসেছেন।

উজির প্রথম প্রশ্ন করলেন। সবাই নীরব। কেউ তার জবাব দিল না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্ন করা হল। কোন সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারল না।

মুসলমানদের পরাজয় নিশ্চিত হতে চলল। লজ্জায় উজিরসহ বেশ আনন্দিত ও পুলকিত হল। খলিফা মনসুরের মুখ খুবই লাল হয়ে গেল। মুসলমানদের পরাজয় দেখে ক্ষোভ ও গ্লানিতে বাদশাহ হতাশ হলেন। গোটা সভা জুড়ে তখন পিন পতন নীরবতা।

এমন সময় সভার মধ্য হতে একজন উঠে দাঁড়ালেন। এতক্ষণ তিনি সভায় চুপচাপ বসেছিলেন। সবাই এখন নড়েচড়ে বসল। কে এ ব্যক্তি? তিনি হলেন বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত আবু হানিফা (রহ)। আবু হানিফা উজিরের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন।

তাই তিনি বাদশাহ মনসুরের অনুভূতি চাইলেন। আবু হানিফা প্রথমেই বললেন বসার উঁচু আসনটি প্রশ্নকর্তার নয়, এটি হচ্ছে উত্তরদাতার। খলিফা আবু হানিফার এ বক্তব্য সমর্থন করলেন। আর অমনি উজিরকে আসন ছেড়ে নীচে নেমে আসতে হল। আবু হানিফা আসনটিতে গিয়ে বসলেন।

এবার উজিরকে প্রশ্ন করতে বলা হল। উজির প্রশ্ন করছেন। আর জবাব দিচ্ছেন মহান পণ্ডিত আবু হানিফা। উজির : আল্লাহর আগে কে ছিলেন? আবু হানিফা : আপনি এক দুই তিন ইত্যাদি সংখ্যাগুলো নিশ্চয়ই জানেন। আমি প্রশ্ন করি, একের পূর্বে আর কোন সংখ্যা আছে কি? উজির : বারে, একের আগে কি আর কোন সংখ্যা থাকতে পারে? আবু হানিফা : তাহলেই বুঝুন, একের পূর্বে যেমন কোন সংখ্যা পাওয়া যাবে না, তেমনি এক ও অদ্বিতীয় যে আল্লাহ তার পূর্বেও আর কেউ থাকতে পারে না।

উজির : আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর মুখ এখন কোন্‌ দিকে? আবু হানিফা : উজির সাহেব, একটা জবাব দিনতো, একটা প্রদীপ জ্বেলে দিলে তার আলোর মুখ কোন্‌ দিকে থাকবে? উজির : উত্তর তো খুবই সোজা। একটা প্রদীপের আলোর মুখ চারিদিকে থাকে, এটাতো সবাই জানে। আবু হানিফা : একটা সামান্য প্রদীপের আলোর মুখ যদি চারিদিকে থাকতে পারে তাহলে যে আলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সে আল্লাহর মুখ কোন্‌দিকে তাতো বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। তিনিই তো আসল আলো বা নূর। তাই আল্লাহর মুখ সবদিকে থাকাই স্বাভাবিক।

উজির : আমার তৃতীয় ও শেষ প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ এখন কি করছেন? আবু হানিফা : আমার আল্লাহ এখন যা করছেন তার একটি হল তোমাকে এ উঁচু আসন হতে নামিয়ে আবু হানিফাকে সে আসনে উঠিয়ে বসিয়েছেন। আবু হানিফার তীক্ষ্ন ও বুদ্ধিসম্পন্ন জবাব শুনে উজিরের সব দম্ভ উলে গেল। লজ্জা ও অপমানে উজিরের মুখ একেবারে লাল হয়ে গেল। দু’চোখে তার পরাজয়ের গ্লানি স্পষ্ট হয়ে উঠল। রোমের বাদশাহর জ্ঞানের প্রাসাদ ভেংগে একাকার হয়ে গেল।

রোম জাতির গর্ব ও অহংকার লুটিয়ে পড়ল বাগদাদের মাটিতে। শাশ্বত ধর্ম ইসলামের জন্য সেটা ছিল এক গৌরবময় বিজয়। যুগে যুগে ইসলাম এভাবেই জয়ী হয়েছে। মিথ্যা সর্বদাই চরমভাবে পরাজিত হয়েছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.