আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যের হলো জয়..... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

মক্কার কুরাইশরা প্রথম থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা) কে ভীষণ কষ্ট দিতে লাগল। তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করলে তাঁর উপর নেমে এল সীমাহীন অত্যাচার। ক্রমেই বেড়ে চলল এ নিপীড়ন। নবীর (সা) অনুসারীরাও বাদ গেলেন না।

তারাও কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হলেন। সেই অত্যাচার ছিল নানা ধরনের। অনেকটা কঠিন, পাশবিক। এসব নির্যাতন সহ্য করা এক সময় কঠিন হয়ে পড়ল। এমন কঠিন সময় নবী (সা) তাঁর অনুসারীদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও।

কেননা, সেখানে এমন একজন ভাল বাদশাহ আছেন। তার রাজত্বে কারো উপর জুলুম হয় না। যতদিন না বিপদ কাটে ততদিন সেখানে কাটাও। নিশ্চয়ই কঠিন সময় একদিন শেষ হবে। ’ মহানবীর (সা) নির্দেশে ১১ জন পুরুষ এবং ৪ জন মহিলার একটি ছোট্ট দল গোপনে আবিসিনিয়ায় গমন করল।

এ খবর কুরাইশদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেল। তারা মুসলমানদের খোঁজে লোক পাঠাল। কিন্তু কাফেলাটি ততক্ষণে নাগালের বাইরে চলে গেল। কুরাইশ নেতারা তাতে বেশ মনক্ষুণ্ন হল। এবার তারা বেছে নিল ভিন্ন পথ।

কুরাইশরা মুল্যবান উপহার সামগ্রী নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাল আবিসিনিয়ায়। সম্রাটকে রাজী করিয়ে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই ছিল প্রতিনিধি দলের দায়িত্ব। দলের সদস্যরা ছিল খুবই চালাক। তারা প্রথমে আবিসিনিয়ার পাদ্রীদের নিকট গিয়ে ধর্ণা দিল।

পাদ্রীদের বুঝানো হল, মক্কা থেকে যে সব লোক এসেছে, তারা অত্যন্ত খারাপ লোক। তারা এক নতুন ধর্ম আবিষ্কার করেছে। আমরা এদেরকে সাবধান করায় তারা এখানে পালিয়ে এসেছে। এরা পলাতক আসামী। এদের আমরা ফিরিয়ে নিতে এসেছি।

আমাদের এ কাজে বাদশাহর নিকট সুপারিশ করা প্রয়োজন। বুঝিয়ে শুনিয়ে পাদ্রীদের রাজী করানো হল। এবার তারা বাদশাহর দরবারে গিয়ে হাজির হল। বাদশাহর নিকট তাদের আর্জি পেশ করল। সম্রাট মুসলমানদের ডেকে পাঠালেন।

বাদশাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন ‘তোমরা নাকি নতুন এক ধর্ম আবিষ্কার করেছো? বল, কি তোমাদের সেই ধর্ম? মুসলমানদের দলে ছিলেন হযরত জাফর তাইবা। তিনি ছিলেন আবু তালিবের পুত্র। হযরত আলীর (রা) আপন ভাই। তাকেই নেতা নির্বাচিত করা হল। জাফর বাদশাহকে জানালেন, ‘হে সম্রাট! আমরা অজ্ঞতা ও মিথ্যার মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম।

এক খোদাকে ভুলে গিয়ে অসংখ্য মূর্তির পূজা করতাম। মরা জীব-জন্তুর মাংস এবং অন্যান্য অপবিত্র জিনিস খেতাম। জুয়া, চুরি, লুটতরাজ ইত্যাদি পাপাচারে লিপ্ত ছিলাম। দয়া, সততা ও মহত্ত্ব কোনটাই আমাদের মধ্যে ছিল না। আমাদের মধ্যে যারা সবল তারা দুর্বলের উপর জুলুম করতাম।

আমরা ছিলাম বর্বর ও পশুর মত। পরে আল্লাহ দয়া করে আমাদের নিকট একজন নবী পাঠালেন। তিনি অত্যন্ত সত্যবাদী, খোদাভীরু, চরিত্রবান ও ন্যায়বান। শত্রু-মিত্র সবাই তাঁর খুব প্রশংসা করে। তিনি আমাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছেন।

তিনি এক আল্লাহকেই মেনে চলার কথা বলেছেন। তিনি মূর্তিপূজা, জুলুম ও নিপীড়ন ত্যাগ করতে বলেছেন। নারীকে সম্মান ও অসহায়কে সাহায্য করার কথা বলেছেন। আমরা এ রাসূল (সা) এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। তার কথায় সব ধরনের অসৎ কাজ আমরা ত্যাগ করেছি।

আমরা পবিত্র জীবন-যাপন করছি। এসব কথা বলে হযরত জাফর তাইবা খানিকটা থামলেন। সম্রাট খুব মনযোগ দিয়ে শুনছেন তার কথা। তারপর তিনি আবার বলতে শুরু করলেন, ‘আমরা মহানবীর (সা) আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছি। হে সম্রাট! আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি এবং তার আদেশ পালন করি।

এখন আমরা ন্যায় ও সত্যের পথে জীবন যাপন শুরু করেছি। এ কারণেই আমরা দেশবাসীর ক্রোধের শিকার হয়েছি। তারা চায় আমরা আমাদের নতুন জীবন পরিবর্তন করে ফেলি। পুনরায় পাপাচারে লিপ্ত হই। তারা আমাদেরকে মূর্তি পূজায় ফিরে যেতে চাপ দিচ্ছে।

তাদের কথা অস্বীকার করায় তারা আমাদের উপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। তাদের নিপীড়ন অত্যন্ত কঠিন। ফলে আমরা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আপনার মত ন্যায়বান শাসকের দেশে চলে এসেছি। মহানুভবতার জন্য আপনি সুপরিচিত।

আপনার সুবিচার আমরা চাই। জাফর তাইবার দীর্ঘ বক্তব্য শুনছিলেন সম্রাট নাজ্জাশী। হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য সম্রাটকে স্পর্শ করল। তিনি অভিভূত হলেন। তারপর নাজ্জাশী বললেন, ‘বেশ! তোমাদের নবীর কালাম আমাকে পড়ে শোনাও।

’ হযরত তাইবা সূরা মরিয়মের কিছু অংশ পড়লেন। নাজ্জাশী এ আয়াতগুলো শুনে খুবই মুগ্ধ হলেন। আয়াতের মর্মবাণী তার হৃদয়ে প্রচণ্ড ঝড় তুলল। তার মন বিগলিত হয়ে গেল। তার বুক ফেটে নেমে এল অশ্রু।

তিনি বললেন, “খোদার কসম! এ কালাম আর ইঞ্জিল কিতাব একই প্রদীপের আলোকরশ্মি। ” এ কালাম নির্ঘাত সত্য। কুরাইশ প্রতিনিধিরা সম্রাটের কথা শুনে তো হতবাক। সম্রাট এবার প্রতিনিধিদের উপঢৌকন ফেরত দিলেন। তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমি খোদাকে ঘুষ দিয়ে এ সাম্রাজ্যের ক্ষমতা লাভ করিনি।

তাই ঘুষ নিয়ে তার বান্দাদের উপর জুলুম করতে পারব না। আমার আশ্রিত মানুষকে তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারিনা। নাজ্জাশীর কথা শুনে কুরাইশ প্রতিনিধিরা খুবই নাখোশ হল। প্রতিনিধিদের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। তারা সেদিনকার মত বাদশাহর দরবার ত্যাগ করল।

পরের দিনের ঘটনা। কুরাইশরা এবার নতুন এক কৌশল আঁটল। তারা সম্রাটের দরবারে গিয়ে বলল ‘এ লোকেরা হযরত ঈসা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে। তারা জানত যে মুসলমানরা ঈসাকে (আ) মরিয়মের পুত্র বলে মনে করে না। একথা নাজ্জাশীর কানে গেলে তিনি রাগ করবেন।

এতে মুসলমানরা বিপদে পড়বে। কুরাইশদের এই কথা শুনে নাজ্জাশী মুসলমানদের পুনরায় ডাকলেন। এবার মুসলমানরা একটু ঘাবড়ে গেল। কিন্তু হযরত জাফর তাইবার মনোবল ছিল খুবই বলিষ্ঠ। তিনি মনকে শক্ত করলেন।

অতঃপর বাদশাহর দরবারে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাইবা বললেন, “হে সম্রাট! আমাদের নবী (সা) বলেছেন, হযরত ঈসা (আ) আল্লাহর পুত্র নন, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসূল। কুমারী মরিয়মের (আ) নিকট তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। ’ তার বেশি কিছু নয়। একথা শুনে নাজ্জাশী একটি সরু ঘাস হাতে তুলে নিলেন।

তা দেখিয়ে বললেন, খোদার কসম, তুমি যা কিছু বললে ঈসা (আ) এ ঘাসের সমান, তার চেয়ে বেশি কিছু নন। কুরাইশরা এবার হতচকিত হয়ে গেল। তাদের দ্বিতীয় দফা প্রয়াসও ব্যর্থ হলো। তারা বেশ লজ্জা পেল। নাজ্জাশী হযরত জাফর তাইবা এবং তার সংগীদের প্রশংসা করলেন।

তিনি তাদের আবিসিনিয়ায় বসবাস করার অনুমতি দিলেন। ফলে সত্যের বিজয় হল। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র হল পরাজিত। কুচক্রী কুরাইশরা দুঃখ ভরা মন নিয়ে আবিসিনিয়া ছেড়ে মক্কায় ফিরে গেল।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।