আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সারাটা শহর জুড়ে তুমি নেই ...



সারাটা শহর জুড়ে তুমি নেই। সারাটা শহর জুড়ে কোথাও তোমার কোন খোঁজ নেই। আকাশ, অরণ্য অথবা সাগর -- কেউ একজনও জানেনা কোন খোঁজ। সারাটা শহর হাতড়ে হাতড়ে আমি হারানো এক মানুষ খুঁজে চলি। এমন বিরাট শহরে দেখো একজনও শুভাকাংখী নেই- এমন বিরাট শহরে এমন একজনও নেই- একান্ত আপন হয়ে জানাবে একবার কিভাবে কাটছে তোমার- এতোসব সন্ধ্যা সাবলীল! সারাটা শহর আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলি- সারাটা শহর সহস্রবার উল্টো-পাল্টা করে দেখি কোথাও অজান্তেই গোপন রয়েছে কিনা তোমাকে স্পর্শের জ্যোতির্ময় যাদু-মায়া- তোমাকে অনুভবের অনবদ্য কোন ক্ল্যাসিক ম্যাজিক।

দেখি এমন কোন রহস্যময় সুড়ঙ্গ, এমন কোন অজানা পথ আছে কিনা- যেখানে আমার পাথর হয়ে যাওয়া কষ্টগুলো রেখে দিলে গলতে গলতে সেগুলো সব দীর্ঘশ্বাস হয়ে পৌঁছে যেতে পারে- রাতারাতি, তোমার কাছে। অথচ দেখো- সারাটা শহর জুড়ে একজনও শুভাকাংখী সমব্যথী নেই, একজনও নেই- আমার চাওয়াটুকু বুঝে - একটি গোলাপ রেখে আসবে খুব ভোরে শীতার্ত তোমার জানালায়। যেন সবাই বিমুখ আজ খুব। যেন বিরাট এই শহরে শুধু তোমার কথা তুললেই সকল মানুষ মুখ ভার করে নত হয়ে থাকে- যেন আমাকে একটিবার তোমার কথা বলে দিলেই ভীষণ এক গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে পৃথিবীতে- যেন একবার তোমাকে দেখতে চাওয়া মানে আমি ভুল করে চেয়ে ফেলেছি- সেই প্রবল ভয়াবহ নিষিদ্ধ এক চাওয়া- যার অপরাধে পৃথিবীশুদ্ধ সব ‌ভালবাসা উপড়ে ফেলা হবে বিশুদ্ধ শেকড় থেকে-রাতারাতি। এতোটা নির্মমতার পরেও দেখো- নিঃশব্দেই বেঁচে থাকি- এতোটা অসহায়ত্বের পরেও দেখো- প্রতিবার- অনিঃশেষ আকুলতায় তোমাকে দেখার প্রত্যাশায়, পুনরায় চোখ খুলি ।

অন্ততঃ একজন আমি জানি কী অপার অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছি চেনা পথ- স্বপ্ন আর আনন্দের মুগ্ধ পৃথিবী থেকে-চিরতরে ! কী বিশাল ভুলের মুহুর্তে, তুচ্ছ করেছি এক আস্থায় বাড়িয়ে দেওয়া হাত ভয়াবহ, ক্ষমাহীণ, অনিঃশেষ নীরবতায়। কেউ না জানুক, অন্ততঃ একজন আমি জানি কিভাবে মৃত্যু হয়েছে খুব যত্নে গড়া এক কবিতার, অর্বাচীন কবির আনাড়ী অদূরদর্শী এক হাতে ! নিশ্চিত জানি, নিজ হাতে নিজস্ব প্রেম হত্যার বিরাট লজ্জায় সেদিন পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল। সেদিন শহরের শীতলক্ষ্যার বুকে কোন কপোত ওড়েনি, সেদিন লজ্জায় রমনার পার্কের বেঞ্চিতে কোন যুগল বসেনি সেদিন পৃথিবীর সকল কবির সমস্ত প্রেমের কবিতা ক্রোক করা হয়েছিল পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্য সংগ্রহ থেকে। সে বিপুল অবিশ্বাস্য ঘটনা- সূর্য্য সহসা বিশ্বাসই করেনি। সে বিপুল নির্লজ্জ সরে যাওয়া দেখে- চাঁদতো লজ্জায় দিশেহারা ! তারপরেও দেখো স্তব্ধ গহীণে কোন আকাশ কাঁদেনি।

তারপরেও দেখো- ছেড়ে গেছি অবলীলায় প্রিয় সেই প্রাঙ্গন, নির্দ্ধিধায়। এই ছেড়ে যাওয়া- কি প্রবল এক ছেড়ে যাওয়া দেখো ! একটি পথও আর আমাকে এসে বলেনা, এই পথে হেঁটে গেলে আবার তোমার সাথে দেখা হবে ! একটি মানুষও আমাকে এসে বলেনা, একবার তাঁর সাথে দেখা হয়েছে হঠাৎ। একবার অন্যরকম হেসে সে জানতে চেয়েছে-- কেমন কাটায় দিন, সেই এক অথর্ব মানুষ? কি প্রবল ছেড়ে যাওয়া দেখো ! আমি শহরের মিনার দেখে প্রার্থনায় নতজানু হই শহর আমাকে বলেনা- কোনখানে আমার শব্দগুলো রেখে দিলে- বিষন্ন ভায়োলিন হয়ে একদিন পৌঁছে যাবে- তোমার দরোজায়। সারাটা শহর জুড়ে তুমি নেই ! যেন শহর-নিঃস হয়ে গেছে খুব এই এক তুমি ছাড়া ! তোমাকে অন্বেষণের এই অনন্ত বিষাদ অতঃপর- তোমার কি জানা হবে কোনদিন ? তুমি কি সত্যিই জানতে পারবে কোনদিন তোমার দৃঢ়তার কাছে হেরে গেছি সেই কবে? কেন আজ- তোমার নীরবতার কাছে এতো বেশী নতজানু? তোমাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে শহরের বুকে ঝরে গেছে কতোসব অমূল্য রাত্রি আমার ! শিশিরকণায় ভিজে কতোবার অপেক্ষার সকাল হয়েছে সুদীর্ঘ- সন্তাপী অনুতাপে তুমি কি জানবে কোনদিন? একবার ভুলের পাথর সরিয়ে- তুমি কি আসবে ফের প্রিয় পরিচিত শহর, আর তার অনবদ্য সঙ্গতায় ? আমি অনুভব করি তোমার আলোর রেখা-আজো অবিরাম অনন্তর চারপাশে ঘোরে- আমি অনুভব করি-তোমার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে আজো সঙ্গোপনে শীতের শিউলি ছোঁয়- সকালের পবিত্র শিশির। আমি বিশ্বাস করি-তোমার বিদীর্ণ চীৎকারে অতঃপর একদিন- মধ্যরাত্রিতে জেগে ওঠবে- এ সমগ্র শহর- তোমার আর্ত চীৎকারে -ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে শহরের নিঃস-নীল, বেদনার্ত নীরবতা।

সারাটা শহর জুড়ে তুমি নেই! অথচ সেইদিন- লাল নীল আলোর ঝরনায় একটি ক্ষমার গোলাপ হাতে সারা শহরেই-নিদারুণ ছড়িয়ে পড়বে তুমি। অপার আনন্দ চোখে শহর দেখবে-অপলক আমার অন্তহীণ অবিরাম অপেক্ষার চারপাশে কী প্রবল ভয়াবহ- ছুটে আসা- সহস্র সহস্র সব তুমি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.