আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উইকিতে কেন লিখি?

অর্থবহ কিছু করতে চাই

আগের পোস্টে লিখেছিলাম উইকিতে আমার সূচনা নিয়ে। উইকিতে আগমনের পর বিভিন্নজনের একটা চেষ্টা দেখলাম অন্যদের উইকিতে টানবার। ফলে আমি নিজেও আংশিক এতে অংশ গ্রহণে আগ্রহী হই। প্রথমে এমন কয়েকজনকে টার্গেট করি যাদের নেট আছে। তাদের আহ্ববান জানাবার আগে তাদের বাংলা ইউনিকোড ও ফোনেটিক টাইপিং এর ব্যাপরটা বুঝাই।

সবাই বাংলাতে চ্যাটিং-এ খুব আগ্রহ দেখায়। দ্বিতীয় ধাপে তাদের বললাম, উইকির কথা। দেখলাম ইংরেজী উইকির কথা প্রায় সবাই কম বেশি জানে। কিন্তু, বাংলা উইকি তাদের কাছে অপরিচিত। দু’একজনকে বোঝালাম, কিন্তু প্রথম যে প্রশ্নের সমুক্ষিণ হলাম তা হল, “লাভ কি?”।

এ প্রশ্নের কোন পরিস্কার উত্তর ছিল না আমার কাছে। কারন, উইকিতে সময় দিয়ে বর্তমানের কর্মব্যস্ত মানুষের কি পার্থিব বা ব্যক্তিগত লাভ হতে পারে তা আমি ভেবেদেখি নি। একটা পর্যায়ে মনে হল, অন্যকে বোঝাবার আগে আমার নিজের কাছেই পরিস্কার হতে হবে আমি নিজে উইকিতে কেন সময় দেই? কি পাই? কেন লিখি? এ জন্যই এই পোস্ট। প্রথম যখন ইংরেজী উইকির খবর পাই, তখন দেখলাম গুগল তার খোজাখুজির ফলাফলে উইকিকে প্রাধান্য দেয়। তখন, ইংরেজী উইকিতে বাংলাদেশ অণুজীব বিজ্ঞান সমিতি নিয়ে একটা নিবন্ধ লিখলাম।

কিছুদিনের মাঝেই দেখলাম, গুগলে প্রথমেই বিএসএমকে পাওয়া যাচ্ছে। এক পর্যায়ে অভ্র চিনলাম, সেখান থেকে ইয়াহুতে বাংলা উইকি গ্রুপের সাথে পরিচয় ও সদস্য হওয়া। সে গ্রুপ থেকেই বাংলা উইকির সাথে পথচলা। প্রথমেই গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাতায়। সেখানে আমার ঢাবিতে আমার “অণুজীব বিজ্ঞান” বিভায় নিয়ে লিখলাম, এটাই শুরু।

বলতে বাঁধা নেই, প্রথম শুরু করেছিলাম এক প্রকার প্রচারের উদ্দেশ্যে। যেহেতু, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ ও সেই সাথে বিষয়টিও বাংলাদেশের অনেকের কাছেই অপরিচিত এবং অনেকেই এই সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে। আমি চাইছিলাম, অনলাইনে ব্যাপারটা বাংলায় তুলে ধরা দায়িত্ব নিজে নিতে এবং এর জন্য বাংলা উইকি আমার কাছে সবথেকে ভাল মাধ্যম বলে মনে হয়েছিল। ঢাবিতে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে লিখতে গিয়ে শুরু করলাম অণুজীব বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে লেখা। লিংক দিতে গিয়ে দেখা গেল, বাংলা উইকিতে জীববিজ্ঞান বিষয়ক কিছুই নেই।

প্রথমে নিজের নিবন্ধের লাল লিংক গুলো নীল করবার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলাম। এরপর, চলতেই থাকলাম চলতেই থাকলাম। চলতে চলতে ডুবে গেলাম। লেখা পড়ে হয়ত কারও কারও মনে হতে পারে, বাংলা উইকিতে আমি হয়ত আহামরি কিছু করে ফেলছি। কিন্তু, সত্য হল অনেকের কাজের সামনে, আমি একজন নিতান্তই তুচ্ছ উইকিপেডিয়ান।

যদিও, বলতে বাঁধা নেই, আমি একজন যথেষ্ট সক্রিয় ডিইউ উইকিপেডিয়ান। সময়ের সাথে আজ প্রায় এক বছর পর উইকিতে আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে সময় দেই। এখন, কাজ করি বাংলা ভাষায় আমার আগ্রহের বিষয়গুলোকে অনলাইনে তুলে ধরতে । যদিও বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গঠন মূলক ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি, কিন্তু বিশ্বাস করি একদিন অনেকেই অনলাইনে বাংলায় সার্চ করবেন। অন্তত্য, কিছু আদৌও পাওয়া যায় কিনা তা দেখবার জন্য।

সে তথ্য না পেয়ে ইনশাল্লাহ্‌ তার হতাশ হতে হবে না। তার মনে হবে না, অনলাইন দুনিয়ায় তার নিজের বাংলা ভাষা সম্পূর্ণ অচল। নিজের জানা বিষয় অনলাইনে তুলে ধরবার থেকে, আমার অধিক আগ্রহ সেটাকে বাংলায় তুলে ধরার। সেজন্য, ইংরেজী উইকিতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যদিও, অনেকেই আমার সাথে ভিন্নমত পোষন করে দু’একটা উপদেশ ছুড়ে দেবেন।

তবুও আমি শুধু বাংলাভাষার জন্যই উইকিতে লিখিব। একটা সময় উইকিতে প্রবেশদ্বার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছিল। তার সারমর্ম ছিল এই যে, আমি উইকির বিশ্বকোষীয় চরিত্রের বিপরীতে গিয়ে, একে শুধু বাঙালির বাংলাভাষার বিশ্বকোষ মনে করছি। কারন, প্রবেশদ্বার আমি এমন ভাবে সাজাতাম যেন, এটা শুধু বাঙালির বিশ্বকোষ। স্বীকার করছি, এটা আমার একটা দোষ।

রাগিব ভাই। তার সামহোয়ারইনের একটা পোস্টে লিখেছেন, “নানা লোকে নানা কারনে উইকিতে লিখে”। আমিও না হয় ঐ এক কারনে লিখি, হোক না সেটা খানিকটা দোষের। এখন, প্রশ্ন হল, বাংলাভাষার জন্য লিখে আমার ব্যক্তিগত লাভ কি? না পাব টাকাপয়সা, না পাব নামধাম!! আমার উত্তর হবে, “হয়ত খানিকটা সস্তি, খানিকটা আনন্দ”। এই মুহুর্তে দেশ, জাতি বা ভাষার জন্য নিজেকে তৈরি করা ভিন্ন আর কিছু করার নেই আমার (হয়ত আছে, কিন্তু আমি তা জানি না, আমার আগ্রহ নেই অথবা যোগ্যতা নেই)।

উইকিতে কিছু সময় দিয়ে আমি এটা ভেবে সস্তি পাব যে উইকি নামক মহাযজ্ঞে বাংলাভাষাভাষীদের সাথী হয়ে, বাংলা ভাষার জন্য কিছুটা হলেও দায়িত্ব পালন করতে পারছি।  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।