আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে খুশি দেশবাসী ॥ এ ধারা অব্যাহত থাকুক



বাংলাদেশে এই প্রথম মাথাপিছু আয় এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৯২৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৪৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করল। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই বড় উদাহরণ। গত চার বছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩৬৮ ডলার।

বাংলাদেশ যে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই লক্ষণ। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তাখাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমরা গত কয়েক বছর ধরে ভালো করছি। তারই ইতিবাচক ফল হচ্ছে মাথাপিছু আয়ের এই উন্নতি। ’ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা খুব দ্রুত গতিতে বাড়তে পারেনি।

স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪২ বছর সময়ের মধ্যে ৩৪ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫০০ ডলার। আর গত ছয় বছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় মাত্র ৫২৩ ডলারে। আর ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪ ডলারে। গত ছয় বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

এ কর্মসূচির কারণেই উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরাসরি উপকারভোগীদের মাথাপিছু আয় ১৪ দশমিক ৫ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি যারা এ কর্মসূচিভুক্ত নয়, তাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে ৮ শতাংশ হারে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির উপকারভোগী নারীদের আর্থিক সক্ষমতার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। অভাবগ্রস্ত দরিদ্র শিশুদের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়েছে, তবে পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে দুগ্ধজাত এবং আমিষজাত খাদ্যের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বড় অবদান রেখেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের ওপর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাজমান ঝুঁকিসমূহ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির প্রভাবে মৌসুমী অভাব কমেছে, যার ফলে দিনে তিনবার খাদ্যগ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে। আর্থিক ও অন্যান্য সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ সংগ্রহ, যেমন ভূমি মালিকানা ও গবাদি পশু পালনে মিশ্র পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দরিদ্রের মধ্যে ভূমিহীনতা থেকে উত্তরণ দৃশ্যমান না হলেও আর্থিক সক্ষমতার কারণে ভূমিবন্ধক নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারপ্রতি ভূমিবন্ধকের গড় সক্ষমতা ১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে পরিবারপ্রতি গবাদি পশুর গড় সংখ্যা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশবাসীর পাশাপাশি আমরাও প্রত্যাশা করি উন্নয়নের ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত থাকুক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।