আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদাসীর পিচকিকালের উস্তাদ গুজরান খা-শেষ পর্ব! গুরু তুমার এমুন বানী দিয়াছো আমায়, পুলিশে দেখলে রাস্তার মোড়ে ক্রুশফায়ারে দিবার চায়! আমারে বাচাও!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

গতপর্বের পর! ১৯৮৪ সালে ফরিদপুরে বন্যা হইছিলো, মাগার বন্যার পানি শহরে উঠবার সাহস পায় নাই। সারা বছর ইন্দুর হইয়া বইয়া চলা কুমার নদী বর্ষাকালে তার যৌবন ফিরা পাইয়া খালি মাস্তানী দেখায়। সেই সময় আমার চকে যাওন আর ছোট কাকার আকাম কুকাম সাময়িক বন্ধ ছিলো। মাগার হের হাত খালি নিষপিশ করতো কিছু একটা করনের লাগি।

একবার তার কয়েক বন্ধু মিল্যা গেলো নৌকা ভ্রমনে। তো চরকমলাপুরের ঘাটে আসার সময় তার বন্ধু সাউন্ড দিলো তার নাকি বড়সর নিম্নচাপে ধরছে। কাকা তারে ঝাড়ি দিয়া কইলো," টাইম পাওনাই, ক্যান ছোট ডা ধরাইতে পারলা না?" মাগার চাপ যে কারো জিগায়া আসে না সেইটা তারে কে বুঝাইবো। যাই হোউক সকলে মিল্যা ডিসিশন নিলো ঝোপ দেইখা পাড়ে ভিড়াইবো নৌকা। জায়গামতো নৌকাখান ভিড়াইয়া যেই না থামাইছে উক্ত চাপ সর্বস্ব বন্ধু দিলো একখান ঝাপ পাড়ের দিকে।

মাগার লুঙ্গীর টানে বেশী দূর আগাইতে না পাইড়া সে পইড়া গেলো নদীতে। আর পায় কে? কুমার নদী তারে পেয়ার কইরা দিলো টান। আমার কাকাজান তার পেয়ারের বন্ধুরে বাচাইতে ফিল্মের হিরুর মতো দিলো ঝাপ, তারে দেইখা নৌকার সবতে ঝাপ। খালি নৌকা একলা রওনা দিলো ভবের হাটে। যখন তারা ঘাটে উঠলো তখন দেখা গেলো ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের লুঙ্গী নাই, মানে কুমার নদী হজম কইরা ফেলাইছে।

যাই হোউক সেই আনন্দে মাখা বর্ষা ঘেরা দিনে তারা যখন নিজেদের লুঙ্গী হারানের তালে ছিলো আমি তখন বাসায় বইসা উদাস হইয়া আকাশের দিকে চাইয়া থাকতাম। হাটতাম উদাস মনে, কারন আকাশে কি সুন্দর ফুলকপি, বাধাকপি, আইসক্রিম সাইজ সাদা মেঘ। মাঝে মাঝে ভুলে চকে যাইতাম গা। গিয়া দেখতাম গাছের নীচে গুজরান খা বইসা রইছে। সে গান গাইতো, আমি সেই সুরে হারাইয়া যাইতাম, মাগার কৈ যাইতাম জানি না! একদিন সে আমারে কয়,"কিরে উষনিশ, বাড়ী কই?" আমি তার উত্তরের ধারে কাছে না গিয়া জিগাইতাম,"আপনের লুঙ্গী পিছন দিয়া ছিড়া ক্যান?" সে তখন ইতস্তত ভাবে ঠিক কইরা কইতো," তোর নাম কি?" -আপনে দাত মাজেন না ক্যান? -ঐ ব্যাটা যেইটা জিগাই সেইটার উত্তর দে! -আপনে কালকা রাইতে ডাব গাছের ডাব গুলান যে চুরি করছেন, গাছের মালিকরে কি জানাইছেন? সে এই কথা শুইনা আমারে দিলো ভো দাবড় আর আমি পড়িমড়ি কইরা দৌড়।

মাগার আমি পুচকি আর গাট্টাগুট্টা থাকনের কারনে সে আমারে ধইরা ফেলায়। আমি ফিক কইরা হাইসা দেই। তখন সে একটা কথা কয়," এই দুনিয়ায় একটা জিনিসের লিগা কুরবান হওন যায়, জান দেওন যায়, সেইখানে কোনো পাপ নাই। মানুষের হাসি! যা জান বইখসা দিলাম!" আমি দেখলাম সে আমারে ছাইড়া দিলো। আমি তার পিছ পিছ সেইদিন থিকা আইক্কা আঠার মতো লাগনের ডিসিশন নিলাম।

আমি তারে যতই দেখতাম ততই অবাক হইতাম। বর্ষা শেষে সে একদিন কইলো সে আর সরিষা ক্ষেতে কাম করবো না। আমি তারে জিগাইলাম,"আপনেরে ভাত দিবো কেডা?" -মানুষ হইছি, ভাতের চিন্তা নাই, যে বানাইছে সেই দিবো মাগার চেস্টা করোন চাই। আমার চেস্টা উপকার করা, সেইটা দিয়া পেট চালনা। আমার কথাটা মনে ধরলো।

মনে হইলো ডীপ থটের কথা:এইটা বুঝনের মাথা আল্লাহ তখনও আমার মাথায় দেয় নাই!একদিন দেখি পাড়ার রেদওয়ান ভাই চকের এক কোনায় বসে কাদছিলো চুপি চুপি। আমি তার কাছে গিয়া তার চোখের জল গুলা দেখলাম। কি সুন্দর তার চেহারা!যখন তার থুতনী দিয়ে ফোটা ফোটা জল পড়তাছিলো তখন আমি এক দুই তিন কইরা গুনতাছিলাম। ৩৭ ফুটা গুননের সময় সে হাইসা দিলো আমার দিকে। এই পাড়ায় এক জন লোকের হাসি যদি টিকিট কাইটা দেখতে হয়, সেইটা হইলো তার হাসি।

মনে হইতো আমি যদি টার মতন হাসতে পারতাম! সে আমারে কোলে তুইলা নিলো। আমি জিগাইলাম,"কান্দো ক্যান?" -আমার কপাল। -তাইলে আমারে চকে নিয়া চলো। সে আমারে চকে নিয়া গেলো। গিয়া দেখি গুজরান খা ঝিমাইতেছে গাছের সাথে হেলান দিয়া।

রেদওয়ান ভাই তার কাছে গিয়া বসলো। সে চোখ খুইলা বললো,"কিরে ব্যাটা, পোলামানুষ হইয়া কান্দোস ক্যান?" -আমার মনের দুঃখে! -দুঃখ কাঠাল গাছের শুকনা পাতা। কিছুক্ষন লাইগা থাকে, তারপর মাটিতে পইড়া যায়। আবার ঐজায়গায় হাসে নতুন পাতা। আর ঐ শুকনা পাতা সবাই লাগায় কাজে আগুনে পুড়াইয়া।

-আমার নিজেরই এখন আগুনে পুড়তে হইবো। মন চায় একটা কিডনী বিক্রী কইরা দেই। দুইদিন ধইরা চুলায় আগুন জ্বলে না। বাসার সবাই না খাওয়া,হাতে কোনো টিউশনিও নাই। -নে মুড়ি খা! দেখি উনি তার ঝোলা থিকা এক পলিথিন মুড়ি আর এক আখি টুকরা গুড় আগাইয়া দিলো।

-শোন পাগল, খাওন নিয়া কখনো কানবি না, এই দুনিয়া শুধু খাওন আর হাসির লিগা। কথা দিলাম মাত্র ৫ দিন, তারপর তোর হাতে আসবো উইড়া একটা পাখি অচিন! আমি তার কথা শুনলাম, কি সুন্দর কথা! তার কথা শুইনা রেদওয়ান ভাইও হাইসা দিলো। তার হাসি দেইখা আমি পুচকি মানুষ আমিও মুড়ীতে ভাগ বসাইলাম। মাগার খাইতে বড় কস্ট কারন আমার দাতে পোকা! একদিন সকালে উঠলাম, খুব টয়লেটে ধরছে। মাগার টয়লেটে দেখি লাইন ধরছে সবাই।

একজন ঢুকছে ভিতরে, বাইরে দেখি ছোটকাকা লাইনে একটা কাকের দিকে ইটা(ইট শুরকির টুকরা) নিয়া নীরিখ করতাছে। পিছনে দোকানের কর্মচারী। উল্লেখ্য তীতুমীর মার্কেটে আমাদের বেশ কিছু দোকান আছে যার জন্য প্রচুর কর্মচারী আমাদের বাসায় থাকতো। তারা সবাই ফ্যামিলির সদস্য হয়েই থাকতো। আমি ছোটকাকারে একটা ডাক দিয়া কইলাম,"কাকাজান ভিতরে কেডা?জোরছে চাপছে!" -তাই নি?লও, মল্লিকবাড়ী যাই।

মল্লিক বাড়ি আমাগো প্রতিবেশী। তাগো বাসায় গেলাম টাট্টি করতে। আইসা দেখি রেদোওয়ান ভাই বইসা রইছে সাথে তার মা। আমি চাচীরে দেইখা দিলাম দিনের প্রথম সালাম। রেদোওয়ান ভাই কোলে তুইলা নিলো, হাতে একটা লেমনচুশ ধরাইয়া দিলো।

আমি কইলাম,"বাজারে সিগারেট চুইংগাম বাইর হইছে। আমারে একটা কিন্যা দাও। " আমার আম্মাজান দিলো কইস্যা ধমক! আমারে রেদোয়ান ভাই কইলো,"এই শোন, পরশুদিন আমার বাসায় তুমার সারাদিন দাওয়াত। " -আপনের ভাইয়ের কি আবার মুসলামানি হইবো নাকি?(উনার বাসায় লাস্ট দাওয়াত ছিলো তার ছোট ভাইয়ের খতনার অনুষ্ঠান) সবাই আমার কথা শুইনা হাইসা দিলো। পরে জানতে পারলাম উনার বিবাহ ঠিক হইছে, কন্যা থাকে আমেরিকা আর বাপের বাড়ী ঢাকায়।

তাগো দেশের বাড়ী নাকি নোয়াখালি, রেদোয়ান ভাইগো ধারে কাছেই। মাইয়াটার বয়স মনে হয় বেশী। আমি শুক্রবারদিন গেলাম দাওয়াত খাইতে, দেখি মহাহুলস্হল। কি জোড়ে জোড়ে হিন্দি গান অমিতাভের "পেয়ার দে, পেয়ার দে" অথবা "রোতে রোতে হাসনাই তো"। মেলা মানুষ।

হঠাত দেখলাম প্যান্ডেলের নীচে গুজরান খা দই চাটতাছে। তখন মনে পড়লো আজকে রেদোয়ান ভাইএর ৫ম দিন। ঐ ঘটনার কিছু দিন পরই আমারে একদিন আম্মাজান ভোর বেলা ঘুম থিকা উঠাইয়া দিলো। কইলো,"দাদার সাথে স্কুলে যাও। আজকা তুমার ভর্তি।

" আমি আকাশ থিকা পড়লাম, আমি ঘুমের জ্বালায় এক চক্ষু খুলতে পারতাছিলাম না। কোনোমতে মুখে চোখে পানি দেওয়াইয়া আব্বাজান পায়ে হাটাইয়া নিয়া গেলো বায়তুল মোকাদ্দেম ইনস্টিউট-সেমি মাদ্রাসা। পাশে দাদাজান হাটতাছিলো। রাস্তা থিকা দাদাজান কিনলো তার নেশার সাদা প্যাকেটের ৫৫৫ সিগারেটের একখান প্যাকেট। স্কুলে হেডমাস্টারের সামনে বসাইয়া রাখলো আমারে।

স্যার জিগাইলো এর নাম কি? আমি কইলাম," আমার নাম রনি। " -পুরা নাম? আমি টাস্কি খাইলাম, এইটা আবার কি? এমন সময় আব্বাজান দাদারে বইলা বসলো,"আব্বা, আপনেই একটা নাম দেন। " দাদাজান বললো,"আলি আহাম্মদ নামটা দেন। খলিফাগো নামে নাম। " নামের এমুন বেহাল দশা দেইখা দাদারে কইলাম,"আমার নাম পছন্দ হয় নাই।

" এই কথা বইলা শেষ করতে পারিনাই, আমার বাপে দিলো মুখে একখান চিপ। আমি চুপ হইয়া গেলাম। ঐ নাম দেওনের দুইদিন পর্যন্ত আমি কারো লগে কথা কই নাই, তয় খাওন দাওন টিভি দেখা সমানে চালাইয়া গেছিলাম। পরে দেখি আমার রাগেরে থোড়াই কেয়ার করে না দেইখা আমি যে রাগ করছিলাম সেইটা নিজেই ভুইলা গেলাম। বিকাল বেলা চকে গেলাম ঘুরতে।

গিয়া দেখি ওস্তাদ নাই- গুজরান খা তার জায়গায় নাই। তার বাড়ীর দিকে গেলাম, এক মহিলা দেইখা কইলো সে দুইদিন ধইরা নাই, আর আইবো না মনে হয়! আমার মনটা ভাইঙ্গা গেলো। মনে হইলো রেদোয়ান ভাই জানবো। তার কাছে গেলাম, সে তখন ভাবীরে নিয়া চকে ঘুরতে বাইর হইতেছিলো। আমি তারে কইলাম,"গুজরান চাচা কই?" ভাবীজান আমারে দেইখা গাল টিপলো,"আরে এই পিচ্চিটা কে?"রেদোয়ান ভাই পরিচয় করাইয়া দিলো, দেখি ভাবীজান কোলে নিতে চাইলো, মাগার আমার ওয়েট বেশী দেইখা সেই রিস্কে গেলো না।

রেদোওয়ান ভাই কইলো, তারে নাকি লাস্ট দেখছিলো গত পরশুদিন। ১০ টা টাকা চাইতে আসছিলো। বলতেছিলো পেটে নাকি ব্যাথা। তারে ২০ টাকা দিলে সে ঐটা নিয়া চইলা যায়। ব্যাস এই হইলো গুজরান খার গল্প।

আমার ওস্তাদে আর ফিরা আসে নাই। তারে নিয়া লেখতে বসলেই আমার হাত গুলান কাপে। তবুও আজকা কোনোমতে লেখলাম। তারে মাঝে মাঝেই আমি স্বপ্ন দেখি। আমার যে এখন তারে খুব দরকার! রেদোয়ান ভাই ও আর এলাকায় আসেননি।

তার মাকে সে নিয়ে গিয়েছিলো ৯১ এর দিকে, পরে ৯৬ এর দিকে উনি মারা যান। যতদূর জানি ০৩ এর দিকে উনি একবার লাস্ট এসেছিলেন একটা গাড়ী নিয়ে। আমি তখন চট্টগ্রামে টাইম মেশিন নিয়া চিন্তায় ব্যস্ত ছিলাম। আসলে অতীত এভাবেই হারিয়ে যায়, শুধু কিছু বোকারা আশায় থাকে টাইম মেশিন বানিয়ে অতীতে চলে যেতে! গুরু তুমি কই?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.