আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন তসলিমা, মূল্যবোধের অস্বচ্ছতা, একটি সাক্ষাত্কার ও আমার বাংলাদেশ : একটি নির্মোহ পর্যালোচনার চেষ্টা

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

(ইতিমধ্যেই ব্লগে তসলিমাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম এ নিয়ে লিখবোনা, কিন্তু লেখা সম্ভবতঃ সংক্রামক) তসলিমা নাসরিন, বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একজন লেখক। তবে সেই আলোড়ন এর কারণ যতটা না তার লেখনীর কারণে তারচেয়ে বেশী তাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার কারনে যেখানে তসলিমা সহযোগী হিসাবে পেয়েছেন দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠিকে। একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করার ফলে বিভিন্ন সময়ে যে সব ঘটনার উদ্ভব হয়েছে তাতে লাভবান হয়েছে উভয়পক্ষ কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তসলিমার তার অ-পরিপক্ক লেখায় (নির্বাচিত কলাম বাদে) সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিপক্ষে নারীদের কথা বলতে চেয়েছেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আক্রমণ করেছেন ধর্মকে বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে, সম্ভবতঃ ইসলাম ধর্মাবলম্বী একটি সমাজে তার জন্ম বলে।

কিন্তু এই লেখাগুলির মধ্যে সময়ে সময়ে উঠে এসেছে চূড়ান্ত রকমের স্ববিরোধিতা এবং সুবিধাবাদিতা। আর আমাদের মৌলবাদী গোষ্ঠী এই লেখাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে তাকে রসদ জুগিয়েছেন, তাকে খ্যাতির শিখরে তুলেছেন। আসলে এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে তসলিমা ব্যবহার করছেন তার পিআর (পাবলিক রিলেশন) এজেন্ট হিসাবে। এইসবের ফলশ্রুতিতেই প্রায় এক দশক আগে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান তাসলিমা। প্রবাসে থেকেও তসলিমা জন্ম দিয়েছেন একের পর এক নানা ঘটনার যার ফলে সবসময়ই লাইমলাইটের আলোটা তার উপরে ধরে রাখতে পেরেছেন।

তার অনেক বক্তব্য সরাসরি দেশের স্বার্থবিরোধী হলেও প্রতিক্রিয়াশীল মহলের অতি-প্রতিক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক মনে হয়েছে। আর বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি হয়েছে এমন একটি দেশ হিসাবে যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ তসলিমা বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে থাকার চেষ্টা করছেন, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, বাংলাদেশে আসতে চান না। তসলিমার এই উদ্যোগেও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের নাম বাংলাদেশ। তবে নিশ্চিত যে তিনি বাংলাদেশে আসতে চাইলেও মৌলবাদী গোষ্ঠী যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাতেও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের নাম বাংলাদেশই থাকবে।

হায়রে আমার বাংলাদেশ, একেবারে শাখের কড়াতে আটকে গেছে!! বাংলাদেশের ভাবমূর্তির এই অবস্থাটির পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি তসলিমার একজন পাঠক। বুঝতে চেষ্টা করেছি তিনি ঠিক কি মেসেজটা দিতে চান। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই অনেক ক্ষেত্রেই তার বইতে কোন সু-নির্দিষ্ট মেসেজ খুজে পাইনি। তসলিমাকে নিয়ে অনেক লেখা পড়েছি যার প্রায় সবগুলির অবস্থানই বিপরীতমুখী মেরুতে।

তাই তাসলিমার নিজের কন্ঠে তার সত্যিকারের মূল্যবোধ জানার আগ্রহ ছিল। কিন্তু সি এন এন এর সাথে তসলিমার এই সাক্ষাত্কার দেখে আমি আবারও হতাশ হলাম। এই সাক্ষাত্কারটির ভিডিওটি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি । একজন তসলিমা যাকে নিয়ে এত আলোড়ন তিনি আসলে কি বলতে চান সেটা তিনিই বুঝতে পারছেননা!!! যে জিনিসটি নিয়ে তার প্রায় সব লেখাই আবর্তিত সেই ধর্ম বিরোধিতা, সামজের পুরুষতান্ত্রিকতা, নারীর যৌন স্বাধীনতা এবং সতীত্ব নিয়ে তার হাস্যকর রকমের জ্ঞানের স্বল্পতা দেখে কষ্ট লাগলো যে তার জন্য বাংলাদেশকে এত বদনাম সইতে হচ্ছে?? খারাপ লাগলো যখন তিনি সত (honest) শব্দটিকে পুরুষবাচক শব্দ হিসাবে দেখিয়ে এর নারীবাচক শব্দ হিসাবে উপস্থাপন করলেন সতী (chaste কে। অথচ দুটি যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ব্যাপার সেটি স্বীকার করলেননা।

তার অর্থে সততা honesty এবং সতীত্ব chastity একই অর্থ বহন করে। একজন লেখক তার লেখার মুল বিষয়ের ক্ষেত্রে এতটা অস্বচ্ছ থাকেন কিভাবে? যাহোক এই ক্ষতির খেলা আর চলা উচিত নয়, দেশের স্বার্থেই এবং দেশের মানুষের স্বার্থেই। এই সরকারের উচিত তসলিমার সাথে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি যদি নাও আসতে চান তবুও তাকে আনার ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ নেয়া। সকল লেখকেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং তসলিমাকে ফিরিয়ে এনে আমরা সেই পথে যাত্রা শুরু করতে পারি।

আর দোহাই তসলিমা বিরোধিদের (বিশেষ করে মৌলবাদী চক্রকে), অনর্থক বিরোধিতা করবেননা, অতীতে আপনাদের অনেক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তসলিমার অনেক উপকার করেছেন, এবার না হয় একটু দেশের উপকার করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.