আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলের কাছে লিখা একজন জুয়েলগর্ভা মায়ের চিঠি

অচেনাকে চেনার আর অজানাকে জানার এক দুর্নিবার চেষ্টায় ছুটে চলেছি জীবন পথে......।

এটি আমার আগের একটি পোস্ট, "সেই ছেলেটির" ফলো আপ- "প্রিয় ছেলে আমার, কেমন আছিস সেটা জানতে চাই না। আমরা কেমন আছি সেটাও তোকে আর বলে দিতে হবে না জানি। আমি তো দেখি তুই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রডের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছিস, প্রান হারিয়েছিস। আমি তো দেখি তোর মধ্যে শহীদ হওয়ার সব বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহ তো বলেছেন, শহীদরা কখনো মরেনা, ওরা আমাদের মধ্যেই বেঁচে থাকে, সব দেখে- শুধু আমরাই ওদের দেখিনা। তুই কি আমাদের দেখিস? আমাকে নাহয় দেখিস, আমার অন্তরের গহীনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন কি দেখিস? আমার চোখের ক্রমাগত ঝরতে থাকা অশ্রুবিন্দু গুলো কি তুইই কখনও কখনও তোর অদৃশ্য হাতে মুছে দিস?হবে হয়ত! নাহয় মাঝে মাঝে আমি এত সান্ত্বনা, মনের বল, কোথায় পাই? তুই কি সেদিন সব দেখেছিলি?তোর জন্য হাজার হাজার মানুষ একসাথে প্রানপন চেষ্টা করল, অনেক অনেক ব্যাগ রক্ত-সব যোগাড় হয়ে গেল, তবুও তুই এই নিষ্ঠুর পৃথিবী ছেড়ে এভাবে চলে গেলি-স্রষ্টার নৈকট্য লাভের আকর্ষনটাই তোর কাছে বড় হয়ে গিয়েছিল, না? আচ্ছা ,তুই কি সেদিন শুনেছিলি, আমি যখন তোকে শেষ বারের মত বিদায় দিচ্ছিলাম তখন আল্লাহর বাণী দিয়ে তোকে তারঁ হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেদিন জানিনাত, কে আমার মুখে এতো সব আয়াত এনে দিয়েছিল! তুই চলে যাওয়ার সময় তোকে যে কাজ দিয়েছিলাম সেটা করেছিলি? বলেছিলাম আগে গিয়েই তোর বাবাকে সালাম দিবি, তোর দাদাকে সালাম দিবি। দিয়েছিস? উনারা কি বল্ল, আমরা কখনো শুনতে পাব? তুই কি দেখেছিলি, সেদিন তুই চলে যাওয়ার পর, আমি প্রথমেই আল্লাহর কাছে দুরাকাত শুকরিয়ার নামাজ পড়ে দিয়েছি-তিনি যে আমায় শহীদের মা হওয়ার মর্যাদা দিয়েছেন! এতো সম্মান, এতো মর্যাদা কি সত্যিই আমার প্রাপ্য ?সেই সুখেই কি আমার চোখের জল শুকাতে চায়না? তোর স্মৃতি গুলো বারবার মনে পড়ে যায়, আমি তো চাই কষ্টগুলো সব ভুলে থাকতে, স্রষ্টার প্রশংসায় সিজদায় অবনত হয়ে থাকতে, কিন্তু পারি কই? আমি যে মা! মা হওয়া যে কি নিদারূন কষ্টের, আজ বুঝি- ঠিক যেমনটি বুঝেছিলাম মা হওয়ার অপার্থিব সেই আনন্দ, প্রথম তোর কান্না শুনে। আমার বড় মেয়েটা বড় বুঝের হয়েছে- ও খালি আমাকে মনে করিয়ে দেয়, তোর দাদির কথা।

তিনি তো মা, স্ত্রী, দাদি! - হারিয়েছেন উনার স্বামীকে, ছেলেকে, মেয়ের জামাইকে, (বাবা মা তো বটেই), এখন এই বুড়া বয়সে এসে প্রিয় নাতিকেও। উনি তো বেঁচে আছেন! আসলে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলেই আমাদের বেঁচে থাকা রে। কারও সাধ্যি নেই এক মুহূর্ত কারো জীবন টিকিয়ে রাখা। তুই চলে যাওয়ার পর শুনি তুই নাকি এই ঈদে বাড়ি গিয়ে এবার সবার কাছে ঘুরে এসেছিস? কি, তুই কি বুঝে গিয়েছিলি, এদের ভাগ্যে আর তোর আতিথেয়তা করার সুযোগ হবেনা? যাদের বাসায় আমারো অনেক দিন যাওয়া হয়না, ভুলে গিয়েছি যাওয়ার পথ-তারাও এসে বলছে, তুই নাকি এবার গিয়ে ঈদের নাস্তা খেয়ে এসেছিস! তুই কি জানিস, যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে তোকে আমার এত্তো সুন্দর দেখাচ্ছিল- আমি তোর দিকে তাকাতে পারিনি, পাছে মায়ের নজর পড়ে! কি? তোর মধ্যে কি শাহাদাতের চেহারা চলে এসেছিল? আহহ! তুই তো এভাবে চলে গেলি, এই শুভ্র চেহারা নিয়ে, রক্তাক্ত শরীর নিয়ে, আগুনতি মানুষের ভালবাসা নিয়ে- আমরা কিভাবে যাব??? এই, তুই আমাদের -আমার, তোর ভাইবোনদের, সবার জন্য সুপারিশ করবি তো?? ওরা বলছে তোর হত্যাকারিদের বিচার দাবি করবে , সভা সমিতি করবে। করেছেও কি কি জানি।

পত্রিকাতে নাকি অনেক দিন এসেছে- তাদের ধরা পড়ার খবর, রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের খবর-আমি তো আর সেসব পড়তে পারিনা। একটু চেষ্টা করছি এই কয়দিন- মাথাটা খালি হালকা মনে হয় রে। আমি তো জানি এইসবি শুধু প্রহসন। আমার তো ভুলে যাওয়ার জো নেই, এই পৃথিবীটাই শুধু প্রহসন। এখানে বিচারের বাণী আমার চেয়েও বেশী অশ্রু ফেলে প্রতিদিন।

টাকা কিংবা পেশির জোরে ওরাও হয়ত একদিন ছাড়া পেয়ে যাবে- আর যদি নাও পায়, কিইবা ওদের বিচার হবে-হয়ত জেলে পচবে এক কুড়ি বছর-এতে কি সত্যিকারের বিচার হবে? আমার কলিজার টুকরা, কিংবা আমার চোখের এতো সমুদ্র জল,- এর কি কিছুই ফিরে পাব? আমি তোর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন আমি শ্রেষ্ঠ বিচারকের কাছেই তোর হত্যার বিচার চেয়েছি। তিনি এর বিচার করবেন, আমি জানি। আমি শুধু চাই আর কারো কলিজার টুকরা যাতে এভাবে হারিয়ে না যায়, আর কোনো মাকে যাতে এভাবে বেঁচে থাকতে না হয়। তুই এই চিঠি পাবি কিনা জানিনা, তোকে বলার অনেক কথার কিছুই তো বলা হল না- আজ চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে- পরে আর কোনদিন যদি লিখতে বসতে পারি তো অবশ্যই লিখব। তোর সাথেই তো আমার নিত্য কথা বলা.........।

আমি জানি তুই ভাল আছিস, থাকবি। তোরই, মা। "


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।