আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন ফিকাহঃ ইউসুফ আল কারদাওয়ী

দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে

বস্তুত আমাদের দরকার এমন এক নতুন ফিকাহ যাতে করে আমরা আল্লাহ যাদেরকে সমঝদার লোক বলে বর্ণনা করেছেন তাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি। এখানে ফিকাহ বলতে ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত ফিকাহ বলা হয়নি। ........ আল কুরআনের বেশ কয়েকটি মাদানী সূরায় ফিকাহ শব্দটি বহু ইশ্বরবাদী ও মুনাফিকদের বোধশক্তি না থাকার অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। সূরা আল আনফালের ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল ও ঈমানদারদের সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যক্তি থাকে, তবে তাঁরা দুইশ'র উপরে জয়লাভ করবে, আর তোমাদের মধ্যে যদি একশ ব্যক্তি থাকে, তবে এক হাজার অবিশ্বাসীর উপর জয়লাভ করবে, এ কারণে যে তারা এমন লোক যারা বোঝে না। এখানে অবিশ্বাসীদের জ্ঞান না থাকার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর অপরিবর্তনীয় বিধিবিধান এবং পালাক্রমে সকল লোককে কিভাবে তিনি বিভিন্ন রকম সৌভাগ্যের দিন প্রদান করেন সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে।

সূরা তওবার ৮৭নং আয়াতে আল্লাহপাক মুনাফিকদের নিন্দা করে বলেছেনঃ এরা অন্তঃপুরবাসিনী মহিলাদের সাথে থাকতে তৃপ্তি বোধ করল এবং তাদের অন্তরের উপর মোহর লাগানো হলো, যাতে তার উপলব্ধি না করে। এখানে উপলব্ধি অর্থ হচ্ছে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা এবং দ্বীন রক্ষার উপলব্ধির জীবন, ইজ্জত, সম্পত্তি ও সামগ্রিক অর্থে সমাজকে রক্ষার জন্যে সচেষ্ট থাকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা। এসব কাজ যেকোন ব্যক্তিগত স্বার্থ - তা যতই জরুরি হোক তার চেয়েও অগ্রাধিকার পাবে। একই সূরার ১২৭ নং আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা (যাদের বোধশক্তির অভাব রয়েছে) এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে বলছেনঃ আর যখন কোন সূরা নাযিল করা, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকাতে থাকে; (এবং বলে যে) তোমাদেরকে কি কেউ দেখে না? অতঃপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের অন্তরগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, কারণ তারা হচ্ছে নির্বোধ সমাজ মাত্র।

এসব নির্বোধ লোক ভুলে যায় যে, কোন মানুষ দেখার আগেই আল্লাহ তাদেরকে দেখতে পান। আসলেই তারা তাদের ফিকাহ এবং তাদের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সূরা আল হাশরের ১৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের লক্ষ করে মুরাফিকদের সম্পর্কে বলেছেনঃ নিশ্চয় তাদের অন্তরে আল্লাহর অপেক্ষা তোমাদের ভয় অধিক, এটি একারণে যে তারা বুঝতে পারে না। সূরা আল মুনাফিকুনের ৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলছেনঃ এটি একারণে যে- তারা ঈমান এনেছে, অতঃপর কাফের হয়েছে। তাই তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে, অতএব তারা বুঝতে পারছে না।

একই সূরার ৭ নং আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ তারাই বলে, আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে যারা রয়েছে তাদের জন্যে কিছুই ব্যয় করো না, যতক্ষণ না তারা তাকে পরিত্যাগ করে। অথচ আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদরাজি আল্লাহরই অধিকারে আছে, কিন্তু মোনাফিকরা বোঝে না। এতে দেখা যায়, 'সে সব লোক যারা বোঝে না'- এ মুনাফিকদের সম্পর্কেই কুরআনের একটি বিরাট অংশ জুড়ে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ, মুনাফিকদের ধারণা তার বুদ্ধিমান। তাই তারা পক্ষাবলম্বন না করে সুবিধাবাদী অবস্থান নেয়, দ্বিমুখী নীতি নিয়ে আল্লাহ ও ঈমানদারদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে।

বিশ্বাসীদের সঙ্গে মিলিত হলে তারা বলে, আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু যখন তাদের দুষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একত্রিত হয় তখন তারা বলে, আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ বহু আয়াতে তাদের রহস্য, দ্বিধা এবং ধোঁকাবাজি প্রকাশ করে দিয়েছেন। সূরা আল বাকারার ৯ নং আয়াতে বলেনঃ তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারদের সাথে ধোঁকাবাজি করে বলে মনে করে, বস্তুত তারা নিজেদের সাথেই ধোঁকাবাজি করে এবং তারা তা অনুধাবন করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ ও মানুষের সামনে তাদের মুনাফিকী ধরা পড়েছে।

ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনকে তারা হারিয়েছে এবং নিশ্চিতই তারা দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে নিক্ষিপ্ত হবে। এর চেয়ে মর্মান্তিক পরিনতি আর কি হতে পারে? সূতরাং, এ বর্ণনানুযায়ী, কারো মধ্যে মুনাফিকীর লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে নিঃসন্দেহে বুঝতে হবে তার মধ্যে ন্যূনতম পরিমাণ বোধশক্তি নেই। (সংক্ষেপিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.