আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীরব নিথর রাতের ভ্রমন কথা



মানুষকে শক্ত কোন রশি দিয়ে বেঁধে রাখা যায়না। মানুষকে বাঁধতে হয় ভালবাসা দিয়ে হৃদয়ের অদৃশ্য বন্ধন দিয়ে। মানুষ ভালবাসার বন্ধনকে অগ্রায্য করতে পারেনা। একসময় মানুষ ভালবাসার বন্ধনের কারণে নিজেকে পারধীন মনে করে। এই পরাধীনের কারণে মানুষ অপেক্ষায় থাকে, স্বপ্নের জ্বাল বুনে, কল্পনার রাজ্য গড়ে তুলে কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সময় কারো জন্যে অপেক্ষায় থাকে না।

বিজ্ঞান সব সময় বর্তমান সময়কে মূল্যায়ন করে। অতীতের সময় বা কল্পনার রাজ্য নিয়ে বিজ্ঞানের কোন মাথা ব্যাঁথা নেই। অথচ মানুষ ..........। মানুষ সব সময় বিজ্ঞানকে অনুসরণ করলেও অনেক সময় অথীতের জাবর কাটে। কল্পনা করে স্বপ্ন দেখে দেখে সুখের রাজত্ব গড়ে তূলে বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে।

মানুষের জীবনের সমস্থ পটভূমিতে বিজ্ঞানকে আকড়ে ধরা কি খুব জরুরী? মানুষের জীবনের অনেক বিষয় আছে যা বিজ্ঞান অবিজ্ঞান বুঝে না। বুঝে কিছু ভাল লাগা, কিছু আবেগ, কিছু কল্পনা...। এই নিয়েই মানুষের জীবন। ভূমিকাটা মনে হয় একটু দীর্ঘ হয়ে গেলো। আর একটু ভূমিকার প্রয়োজন বোধ করছি।

আমার পরিচিতি সবাইকে সব সময় একটা কথা বলি, আমার জীবনের কিছু সুন্দর মনের মানুষ পেয়েছি। যাদেরকে আমি ভালবাসি, তাদেরকে আমি কল্পনা করি। নিজ যোগ্যতায় যেহেতো তাদের আমি পাইনি, তাই এক সময় তাদের মধ্যে অনেকেরই নীরবে চলে যাওয়া দেখেছি। তাদের ফেরানোর চেষ্টা করিনি, ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাইনি। তার কোন প্রয়োজন নেই।

তারা আমার বন্ধন অগ্রায্য করলেও আমি তা করতে পারিনা। তারা আমার হৃদয়ে ছিল এবং থাকবে সব সময়। অনেক দিন ধরে বন্ধুদের নেটওয়ার্ক থেকে আমি বিচ্ছিন্ন। নিজের একাকিত্ব জীবনে আর জড়াতে চাইনা। নিজের মন্দ সময় গুলোতে ওদের একটু সহানুভূতিতে আমার মনে হয় করুণা।

তাই আমার নীরব জলের দৃষ্টি গোচর করিনা। কি লাভ হবে? আমার পুরাতন কাহিনী , তোর চাঁদ এ কাজটা কোন মানসিকতায় করলো? নিজের কাহিনী পকেটে রাখার ইচ্ছা আমার নেই। আমার কর্ম ব্যাস্ততা, রাত জেগে জেগে চোখের নিচের অংশ কালি করে ফেলার কাহানী বলে বেড়ানোর মধ্যে কোন অহমিকা নেই। তাই নিজের কাহানীকে মাটি চাপা দিয়ে নিজেই পথ চলি। ঈদের দিন বন্ধু নাজিরুল হক ফোন করলো।

কোথায় আছো? আমি আসছি। বললাম রাত বারটার পর আস। জিরো আওয়ারে বের হবো। ঈদের দিনের সৌন্দর্য নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাঁথা নেই। আমার মাথা ব্যাঁথা রাতের সৌন্দর্য নিয়ে।

রাত বারটার পূর্বেই বন্ধুদয় নাজুরুল ও নূর হাজির হল। ঈদের কোলা কোলী থুক্কু গালে গাল স্পর্শ করে বললাম, মাবরুক আলফ মাবরুক, কুল্লু আনতুম বি খাইর, ঈদ মোবারক। শুরু হল আমাদের রাত্রী ভ্রমন। গাড়ি চলছে....কোথায় যাবো জানি না। নাজুকে (নাজিরুল হক) বললাম শহর থেকে দূড়ে নিয়ে যাও।

যেখানে সোডিয়ামের আলো থাকবে না। দু চোখ ঝাপসা ঞয়ে যাবে। নাজুকে অনেক দিন পর দেখলাম। বেশ শুকিয়ে গেছে। নাজুর সোজা ঝাপটা উত্তর, “রাখো তোমার শরীর, চুল পরে যাচ্ছে, পাত্রী কপালে থাকবে না” আমি মজা করে বললাম, পাত্রী কপালে থাকবে কেমনে? সে তো থাকবে তোমার মনে।

অনেক্ষন গাড়ি চললো। রিয়াদের এক প্রান্তে চলে এলাম। নাজু টানা ব্রীজ (বাংলাদেশীদের দেয়া নাম) নামের ব্রীজের কাছে গাড়ি থামালো। নামলাম, ছবি তুললাম। তেমন আহামরি বলে মনে হল না।

এক পাশে আলো ঝল মল করছে, অন্য পাশে নিরব নিথর মরুভূমি। নাজুকে বললাম চলো আরো দূরে কোথাও যাই। আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। গন্তব্য কারো জানা নেই। নিজেকে কেমন যেন কবি কবি লাগছে।

হঠাৎ নাজু বললো ইলো আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। আমি তো আনন্দে আত্বহারা। চমৎকার তো............। অজানা গন্তব্যে চলতেই তো আনন্দ। হঠাৎ মনে হলো মানুষের জীবনটাও কি অচেনা গন্তব্যের মত নয়? ভবিষ্যৎ সম্মন্ধে মানুষের কোন ধারনা নেই, তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে।

সুন্দর বিকেলের মিষ্টি হাসি দেখার জন্য হাজার বছর বাচঁতে চায়। নীল পদ্ম সংগ্রহ করতে চায়। অথচ জীবন অনিশ্চত গন্তব্য। কি সাংঘাতিক! আধা ঘন্টা পর নাজু বড় রাস্তা পেল। সাইন বোর্ড পড়ে পড়ে চলতে লাগলো।

(নাজু মাশাল্লাহ, যের যবর বিহীন আরবী শব্দ ভাল করেই রপ্ত করেছে) রাত তখন তিনটা বাজে। ক্ষিধায় পেট চুচু করছে। এদিকে নাজুর গাড়ি কার্বন ড্রাই অক্সাইডে (সিগারেটের ধোয়ায়) ভরে ফেলেছি। অবেশেষে রাত সারে তিনটার সময় হারফি থেকে কিছু কিনে খেলাম। নাজু আমার বাসায় আমাকে নামিয়ে দিল।

সেদিনের মত ঘুরা ঘুরির অবসান হল। ছবি পরিচিতি: সেদির তূলা ছবি। বা থেকে আমি, নূর, নাজু ও সেই ব্রীজ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।