আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিটিং উইথ মি. নারায়ণ (পর্ব ৩)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

নারায়ণের ভ্রাতুষ্পুত্র আমাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা একটি অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলেন। বোঝা গেল, সেখানে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী কেউ একজন বসে আছেন। কক্ষটির অন্য পাশে সাদা আলোর ছটা দেখা গেল এবং সেটি দরজা বেয়ে ব্যালকনি পর্যন্ত চলে গেছে। জায়গাটা মধ্য দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল। হালকা নীল শার্ট এবং একটি সাদা ভেশটি পরিহিত একজন বৃদ্ধকে আমি দেখতে পেলাম।

তার পেছনে পটিড প্ল্যান্টের স্তূপ ব্যালকনির দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে গেছে। আজো আমি দৃশ্যগুলোকে এতোই প্রাণবন্তভাবে স্মরণ করতে পারি যেন এটি আমার চোখে স্থায়ীভাবে লেগে আছে। তিনি আমাকে দেখে নিলেন এবং আমি এক পা এগিয়ে গেলাম। ‘আপনি নিশ্চয়ই মি. নারায়ণ?’ তিনি সম্মতিতে মাথা হেলানোসহ ব্যালকনিতে একটি খালি চেয়ার দেখালেন। নিজে অন্য একটি চেয়ারে বসলেন।

তার চামড়ায় ভাজ পড়লেও তার চেহারা খুব সহজেই যুবক বয়সের প্রতিচ্ছবিকে ফুটিয়ে তোলে। এখন আমরা কি বিষয়ে আলাপ করতে পারি? যেহেতু ইন্টারভিউর বিষয়টি প্রশ্নের বাইরে ছিল। ভালো আলোচনার প্রধান বিষয় পটিড প্ল্যান্টস। তিনি আমাকে জানালেন, তিনি তার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান ব্যালকনির ফুলগুলোর সঙ্গে। এখানে খুবই ঠান্ডা, তোমার কি মনে হয়? আমি এখানে বসি এবং পৃথিবীতে কি ঘটে যাচ্ছে তার খোজখবর রাখি।

তিনি সংবাদপত্রের একটি স্তূপের দিকে দেখালেন। এগুলো পড়তেই আমার সারা দিন লাগে। কিন্তু যখন থেকে আমি লেখালেখি বন্ধ করেছি, তারপর এটি কোনো বিষয় নয়। আমি তেমন বাইরে যাই না। হাড়গোড়গুলো খুবই ভঙ্গুর হয়ে গেছে।

আমার মতো একজন বৃদ্ধ লোকের জন্য ছোট্ট একটি দুর্ঘটনাই বড় কাল হয়ে দাড়াতে পারে। তিনি আর কোনো ইন্টারভিউ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেননি টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির পর। টাইম ম্যাগাজিনের একজন ফটোগ্রাফার তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শহর জুড়ে ঘুরে নিয়ে বেড়ায় এবং অবশেষে চেন্নাইয়ের বিচে তার ছবি তোলে। এরপর সর্দিগর্মি কাটিয়ে উঠতে হাসপাতালে ১০ দিন কাটাতে হয়েছিল। অথচ ম্যাগাজিনটি তার একটি ছোট ছবি ব্যবহার করেছিল, একদম ডাকটিকেট আকারের মতো।

এ নিয়ে তিনি খুবই হতাশ হয়েছিলেন। আমি তাকে আবার প্রতিশ্রুতি দিলাম যে আমি তার ইন্টারভিউ নেয়ার চেষ্টা করছি না। তিনি তার শ্রবণ যন্ত্রটি ঠিক করে নিলেন এবং বললেন, এই জিনিসটির সঙ্গেই সমস্যা। হয়তো আমি কিছুই শুনছি না আবার আমি যতোটুকু শুনতে চাইছি তার চেয়ে জোরে শুনে ফেলছি। আমি আগে যা বলেছিলাম তাই আবার বললাম।

আমি আপনার কথা শুনেছি। তিনি দ্রুত কর্মচঞ্চল হয়ে উত্তর দিলেন। সেই সঙ্গে হাসলেন। আমি কেন তার সঙ্গে এতো বেশি দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেছি এবং আমি ইনডিয়াতে অনেক পথ ঘুরে এসেছি। এতে তিনি খুবই আশ্চর্য হলেন।

আমি আপনার সব বই পড়েছি। আমি বলতে চাচ্ছি... যদি আপনার শ্রদ্ধাভাজন কোনো লেখক যাকে... শেখভ, আপনি কি তার সঙ্গে দেখা করতে চাইবেন না? কিংবা ফয়েড, দস্তোয়েভস্কি? তখনো এমন কিছু ঘটতো না? আমি তোতলাতে লাগলাম এবং এক সময় চুপ হয়ে গেলাম। (চলবে) অনুবাদ : একরামুল হক শামীম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।