আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিটিং উইথ মি. নারায়ণ (পর্ব ৪)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

অনেক বছর আমি তার বইগুলোতে অভিনিবেশ করেছি। আমি তার মধ্যে আমার নিজের ইমেজকে তৈরি করে ফেলেছি, আমার নিজের প্রক্ষেপণে তাকে উঠিয়ে এনেছি। লিটারারি রোল মডেলের ক্ষেত্রে তিনি আমার জন্য একটি আবিষ্কার। তিনি আমার দিকে গভীর অভিব্যক্তি নিয়ে তাকালেন। আমাকে পরিপূর্ণভাবে পরীক্ষা করে নিলেন।

তারপর তিনি বললেন, না, তিনি হলে এ রকম সাক্ষাত পরিহার করতেন। যেহেতু শ্রদ্ধাভাজন লেখকটি দেখা করে আনন্দিত হবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। তিনি আবার হাসলেন এবং বললেন, লেখক হিসেবে আপনি আমার সম্পর্কে যা জানতে চান তা এরই মধ্যে লেখা হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি চারদিকে দেখে জেনে নিতে পারেন কিভাবে আপনার লেখায় আমাকে বর্ণনা করবেন। তিনি আমাকে বললেন, এখনো তার বইয়ের নতুন সংস্করণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারছেন, অকেশনাল রয়ালিটি পাচ্ছেন এবং লেখকের সৌজন্য কপি পাচ্ছেন।

তার নিজের পাবলিশিং হাউস, ইনডিয়ান থটের মাধ্যমে তিনি লিটারারি ক্যাটালগের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করছেন। একে আসলে ইনডিয়ান থটলেস ডাকা হতো কিন্তু পরে এটি সংক্ষিপ্ত হয়ে ইনডিয়ান থট হয়ে যায়। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতে তার কেমন লাগবে। না, আমার নোবেল পুরস্কারের দরকার নেই। আমি খুবই বৃদ্ধ।

আমি এটি দিয়ে কি করবো। তিনি বললেন এবং খুব তাড়াতাড়িই আলোচনার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করলেন, ঠিক কোন কোন সাউথ ইনডিয়ান খাবার আপনি এ পর্যন্ত খেয়েছেন? আমি বিভিন্ন খাদ্যের তালিকা দিলাম যেগুলো আমার পছন্দ হয়েছে। তাকে খুশি দেখা গেল যেহেতু আমি দোসা এবং ইদলি দুটোই খেয়েছি। কারণ এ ধরনের খাবার সুইডেনে পাওয়া যায় না। খাবারের সঠিক ফার্মেন্টেশনের জন্য সেখানকার তাপমাত্রা অ্যালাউ করে না।

তার বই সম্পর্কে আমরা যতোই কম বলি ততোই তিনি বেশি আলাপি হয়ে উঠেন। তিনি প্রায় সময়টাতে তীক্ষè দৃষ্টিতে তার পটিড প্ল্যান্টগুলোতে নিরীক্ষণ করছিলেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন, কিছু কিছু আদোতেই বেচে নেই তখন তাকে খুব বিমর্ষ মনে হতো। এটি প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। আমি মনে করি, সব জিনিসই এমনকি মানুষসহ তাদের জীবন শেষে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়।

তাই এটি খুবই প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। যা তিনি বলেছেন তা পরোক্ষভাবে তার নিজের ভঙ্গুর দেহকেই ইঙ্গিত করেছে। তারপরই তিনি সহমর্মিতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমার স্টাডি রুম দেখতে চান। আমার মনে হলো, তিনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের সাক্ষাতটি আমার কাছে প্রকৃতপক্ষে কি। আমি তার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম।

তিনি ক্র্যাচের ওপর ভর দিয়ে আস্তে আস্তে দাড়ালেন। তারপর আস্তে ধীরে ছোট একটি রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি তার বিছানা এবং লেখার ডেস্ক রেখেছেন। তিনি বসলেন এবং কাগজের স্তূপের ওপর তার হাত রাখলেন। আপনি কি এখন কোনো কিছু লিখছেন? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

না, এগুলো আমার চিঠিপত্র। আমার চিঠি লেখার জন্য সব সময়ই টাইপিস্ট আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিঠিগুলো এখানে রেখে দিই। এগুলো নষ্ট হওয়ার দিকে এগিয়ে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতির মতোই।

আমি মনে করি, আমি যদি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি তাহলে এগুলো এক সময় হারিয়ে যাবে। তিনি আমাকে তার কাছে মাঝে মধ্যে চিঠি লিখতে বললেন। তিনি চিঠি পাওয়ার বিষয়টি উপভোগ করেন। কিন্তু তারপরই যোগ করলেন, আপনি যদি তার উত্তর না পান, তবে কেন পেলেন না তা জেনে যাবেন। অনুবাদ : একরামুল হক শামীম


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।