আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যায়যায়দিনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একজন পাঠকের কিছু কথা (লিখেছেন-মিনার রশীদ)

গভীর কিছু শেখার আছে ....

ফান্ডের অপ্রতুলতায় আজকের কাগজ পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যায়যায়দিন সম্পাদক নিজের কাগজের ব্যাপারে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে এর পাঠক ও শুভাকাক্সক্ষীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের প্রিন্ট মিডিয়ার বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিই ফুটে উঠেছে। শফিক রেহমান এ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিটুকু হাতছাড়া করে তার এ সৃষ্টিটুকু বাচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় তিনি তার নিজের বেতনটাও তুলতে পারছেন না।

কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও কর্মচারীরাও তাদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। তারপরও এ মশালটিকে তারা জ্বালিয়ে রেখেছেন। অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সৈনিকরা দেখতে পান তাদের অস্ত্র বহনকারী বাহনটিই হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থা এর যোদ্ধাদের মনোবল সঙ্গত কারণেই ভেঙে দেবে। মিডিয়ার প্রভাব সম্পর্কে অনেকটা ঘুমন্ত এ সমাজকে জাগ্রত করার দায়িত্ব যারা কাধে নিয়েছেন তারাই আজ অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে পড়েছেন।

সবকিছু দেখে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। পর মুহূর্তেই কেমন একটি শক্তি অনুভব করি। যায়যায়দিনের কেন বেচে থাকা দরকারÑ সে আহ্বানটি জানানোর পর অসংখ্য চিঠি পেয়েছিলাম। যায়যায়দিনের প্রতি পাঠকদের ভালোবাসা আমাকে সত্যিই অবাক করেছে। নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারপরও প্রিয় এ পত্রিকাটি বাচিয়ে রাখার জন্য এক বোন নিজের সংসারের অতি প্রয়োজনীয় খরচ থেকে বাচিয়ে আমার প্রস্তাব মতো ছয় মাসের টাকা অগ্রিম পাঠিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন।

নিজে বেকার তারপরও কিভাবে এ পত্রিকাটি বাচিয়ে রাখা যায় তার চিন্তা-ভাবনা করছেন। এসব আবেগের খড়কুটো বাস্তবতার ঢেউয়ের সামনে যেন টিকে থাকতে পারছে না। তবুও আমার মনে হচ্ছে, এ খড়কুটোগুলো একসঙ্গে করতে পারলে বাস্তবতার এ ঢেউ তার উদ্ধত ফণাকে নামিয়ে আনতে বাধ্য হবে। সেহরি খাওয়ার পর ফজরের নামাজের আগের সময়টিতেই সাধারণত যায়যায়দিনের ইন্টারনেটের সংস্করণের ওপর প্রথম বারের মতো চোখটি বুলিয়ে নিই। তখন বাংলাদেশে সময় রাত ৩টার মতো হয়।

কাল রাতে ঘুমানোর আগে জানতে পারি রবিবারের ছুটির দিনটিতেও আমার জন্য অফিসে একটা কাজ তৈরি হয়ে আছে। কাজেই এ সপ্তাহে নিজের নিয়মিত লেখার (শুক্রবারে যেটি লিখে থাকি) জন্য বরাদ্দকৃত সময়ে এমনিতেই চাপ পড়ে গেছে। এদিকে ৮ অক্টোবর মালিক পক্ষের সঙ্গে যায়যায়দিনের সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের মিটিং হবে। তাতে পজিটিভ কিছু বেরিয়ে না এলে পত্রিকাটি আবারো সঙ্কটে পড়ে যাবে। একটি দৈনিকের জন্য একটি দিন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

কাজেই এ ব্যাপারে শিগগিরই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করছি। শফিক রেহমানকে ধন্যবাদ ঠিক সময়ে তিনি এ ব্যাপারটি তার পাঠকদের গোচরে এনেছেন। একটি দৈনিকের জন্মলগ্নে এ জাতীয় টানাপড়েন বা সমস্যার সৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়। একটা ভিশনকে সামনে নিয়ে এ দৈনিকটির যাত্রা। জন্মের আগেই এ পত্রিকাটির অপেক্ষায় প্রহর গুনেছে হাজার হাজার ভক্ত।

মিশনের এ দিক পরিবর্তন বা সাময়িক হোচট খাওয়া সুদৃঢ় কোনো ভিশনকে টলাতে পারে না। আমরা যদি মনে করি, এ কাগজটির বেচে থাকা দরকার। কেউ বা কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি একে গলা টিপে মারতে পারবে না। কাজেই এর পাঠক ও শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি প্রথম অনুরোধ, আমরা যেন হতাশ না হয়ে পড়ি। হাজার হাজার শুভাকাক্সক্ষীর পক্ষ থেকে বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, আপনারা যথাসম্ভব সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করুন এবং তা রেগুলার দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

এভাবে বেতন-ভাতা বাকি রেখে কারো পক্ষেই নিজের সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটির সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়। যে মিশন নিয়ে যায়যায়দিনের যাত্রা সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটিকে ব্যবহার করতে হবে। আপনারা এমন একটা ভিশনকে সাপোর্ট করছেন তার আনন্দ বা পরিতৃপ্তি মাপা যাবে না। অন্যান্য ব্যবসায়ের মতো এটা অর্থনৈতিকভাবে ততোটুকু লাভজনক না হলেও দেশ ও জাতির স্বার্থে এর অবদান অপরিসীম। আপনারা যদি এ ভিশনের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি না করেন অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে আপন ইচ্ছায় বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেন তবে এর পুরস্কারস্বরূপ ব্যবসায়িক সাফল্যও একদিন করায়ত্ত হবে।

তবে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ যা-ই হোক যায়যায়দিনের ওপর কিছু জাতীয় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। একে ঘিরে কিছু প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এ টানাপড়েন স্থায়ীভাবে দূর হওয়া প্রয়োজন। শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি অনুরোধ, আসুন আমরা অতি দ্রুত সবাই মিলে কিছু একটা করি। অনেক পাঠকের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল বন্ড বা শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে একটা ফান্ড সৃষ্টি করার।

এ বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে। যায়যায়দিনের সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের টাকা এ বন্ড বা শেয়ারের মধ্যে চলে আসতে পারে। তারপর পর্যাপ্ত ফান্ড হলে আপনারা ইচ্ছা করলে তা ভাঙিয়ে নিতে পারবেন। কাজেই যে কোনো পরিস্থিতিতে এ মিশনটুকুকে ধরে রাখুন। কারণ আপনারা মাথার ওপরে এ ভারটি কোনোভাবে ধরে রাখতে পারলেই তা দেখে অন্যরা এসে যোগ দিতে পারবে এবং তা হালকা করার সুযোগ নিতে পারবে।

কাজেই আপনারা এ পরিকল্পনার বাস্তব চেহারাটুকু তাড়াতাড়ি পাঠকদের সামনে হাজির করুন। যায়যায়দিনের ভক্ত সব ভাই ও বন্ধুদের অনুরোধ জানাবো, আপনারা কিছু করার জন্য প্রস্তুতি নিন। বিশেষ করে সব প্রবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা এগিয়ে আসুন। ৫ হাজার বা ১০ হাজার টাকার বন্ড বা শেয়ার নিজের সামর্থ্য মতো কিনে নিন। আমরা আগামী তিন বছরে সবাই মিলে এ বিনিয়োগ করবো।

আমরা যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে এখানে জড়িত করতে পারবো ততো ভালো হবে। যারা আর্থিকভাবে এ পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করতে পারবো না তারা যেন অন্য কাউকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করি। এর প্রচার ও প্রসারে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাই। এ প্রক্রিয়ায় ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি হিসেবে শফিক রেহমান ও তার পরিবারের কাছে কিছু মালিকানা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। তাতে তার ভেতর থেকে সর্বোচ্চ অবদানটি বের করে আনা সম্ভব হবে।

এর সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীরাও নিজেদের মালিকানার অধিকার অনুভব করবেন। এতে তারাও তাদের মেধা ও সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এতোগুলো মানুষ এ ভিশনে তাড়িত হয়ে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হলে দুনিয়ার কোনো শক্তিই তা থামিয়ে রাখতে পারবে না। পরবর্তী যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নিজের বাহনটি মেরামতের এ চ্যালেঞ্জটি আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আসুন সবাই মিলে তার মোকাবেলা করি।

কারণ এখান থেকে আমাদের পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। চায়না থেকে ০৭.১০.০৭ (যায়যায়দিনে গতকাল এই লেখাটি প্রকাশিত হবার পর পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে আমরা অভিভূত। তাই ব্লগার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলাম লেখাটি। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.