আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি যায়যায়দিনের কথা বলছি...

মুভি ক্রিটিক ব্লগ (প্রথম বাংলা মুভি ব্লগ) ★★★★★ © ২০০৭ - ২০১৩ ওয়েবসাইট: www.saifsamir.com

অনেকের কাছে মঙ্গলবার সপ্তাহের আর ছয়টি দিন থেকে ভিন্ন আমেজের। কারণ এটি একটি সাপ্তাহিক পাওয়া এবং পড়ার দিন। আবার ০৬-০৬-০৬ তারিখটা সবার কাছেই আশ্চর্য সুন্দর। কারণ ট্রিপল সিক্স তারিখটি শতাব্দীতে একবারই আসে। এমনই দিনে ভিন্ন সুন্দর নিয়ে পত্রিকাটি এসেছিল সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক রূপে।

৬ জুন ২০০৭ পালিত হলো দৈনিকটির প্রথম বর্ষপূর্তি। শুভ জন্মদিন - দৈনিক যায়যায়দিন! ২. একটি নতুন দৈনিকের আবির্ভাব বাংলাদেশে খুব একটা বিশেষ ঘটনা নয়। কারণ ফি বছর দু-চারটা নতুন দৈনিক এদেশে হামেশা বের হয়। কিন্তু সেসবের অনেকগুলোই প্রথম বছরের চৌকাঠ পেরুতে পারে না। তাই একটি দৈনিকের প্রথম বর্ষপূর্তি কিছুটা গুরুত্ববহ বৈকি! তথাপি যায়যায়দিনের কথা সম্পূর্ণই আলাদা।

দৈনিক যায়যায়দিনের জন্মদিন আর যায়যায়দিনের আত্মপ্রকাশ এক নয়। যায়যায়দিনের আত্মপ্রকাশ ১৯৮৪ সালের ৮ অক্টোবর সাপ্তাহিক রূপে হয়েছিল। নতুন চিন্তাধারা ও ভিন্ন স্বাদ এবং গণতন্ত্রের সপক্ষে ক্যামপেইনের প্রয়োজনে যায়যায়দিনের জন্ম। আবার পাঠকের আন্তরিক দাবির মুখে, সুশিক্ষিত - সচেতন পাঠকগোষ্ঠী তৈরি, পাঠকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন, শুদ্ধ ইংরেজির ব্যাপক বিস্তার, নারী ও শিশুর উন্নয়ন, তারুণ্যের আধুনিকতা, নতুন লেখক সৃষ্টি, চাকরি প্রার্থীদের সহযোগিতা, বিশ্বকে গভীরভাবে জানা, পাঠকের জীবনকে মিনিংফুল করার এবং অবশ্যই পজিটিভ বাংলাদেশ দেখার লক্ষ্যে দৈনিক যায়যায়দিনের আবির্ভাব। আর এখানেই যায়যায়দিনের স্বকীয়তা।

আর সবকয়টি দৈনিক সৃষ্টির লক্ষ্যের সঙ্গে যায়যায়দিনের তফাৎ। কেননা বাকি দৈনিকগুলোর কোনোটি রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থে, কোনোটি অন্য পত্রিকার অভ্যন্তরীণ ভাঙন বা বিরোধের ফলে, আবার কোনোটিবা বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত। ৩. আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি কোনো একটি ভালো কাজ করতে গেলেই নানারকম আপদ এসে হাজির হয়। অথচ নির্বিঘেœ কতো নাহক কাজই না করেছি। দৈনিক যায়যায়দিন কিছু ভালো কাজ করতে যাচ্ছে কিন্তু কোনো বাধা আসবে না তা কি হয়? এলোও বটে! তবে যাযাদির জন্য এটি কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়।

সাপ্তাহিক আমলে যাযাদি এর চেয়েও কঠিন বিপত্তিতে পড়েছিল। সেটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কার কথা। ক্ষমতার আসন শক্তিশালী করতে এরশাদ দেশের অধিকাংশ মিডিয়া তথা স্বনামধন্য সম্পাদকÑ বুদ্ধিজীবীদের তার অনুগত বানাতে সক্ষম হলেও লোভ দেখিয়ে কিংবা বল প্রয়োগে যাযাদিকে বশ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য এর জন্য যাযাদিকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছিল। ১৯৮৫ এবং ৮৬ সালে যাযাদি দুইবার নিষিদ্ধ হয়।

সম্পাদককে চারবার আটক করা হয়। লন্ডনে নির্বাসনে রাখা হয় ছয় বছর। যার দরুন সম্পাদক তার মায়ের মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এই ছোট্ট ইতিহাসটুকু হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন দৈনিক যায়যায়দিনের জনৈক পৃষ্ঠপোষক। তাই তো তিনি একটি অনৈতিক দাবি আদায় করতে চেয়েছিলেন যাযাদি থেকে।

কিন্তু যাযাদি অন্য পত্রিকার মতো সুবিধা লাভের বিপরীতে নীতিবিসর্জন দিতে রাজি হয়নি। এবারো চড়া দাম গুনতে হলো যাযাদিকে। বন্ধ হয়ে গেল পত্রিকার ফান্ড, বন্ধ হয়ে গেল কাগজ। এ অবস্থায় পত্রিকা চালু রাখা তেলÑ চাকাহীন গাড়ি চালানোর মতো। তাই বিভিন্ন বিকল্প পন্থা গ্রহণ আবশ্যক হয়ে পড়লো।

পত্রিকার খরচ কমাতে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলো। এর পরের কিছু বিব্রতকর ঘটনার কথা সবার জানা। সত্য-মিথ্যার বিভেদ না করেই এতোদিন তক্কে তক্কে থাকা মিডিয়া উগ্র অপপ্রচারের তূর্য বাজিয়ে দিল। আরো একবার উত্তম সাংবাদিকতার নিদর্শন দেখালো দেশীয় মিডিয়া। কেন যায়যায়দিনের সঙ্গে রেস্ট অফ মিডিয়ার বৈরী আচরণ? কেন যাযাদির পজিটিভ নিউজে তারা চরম অনাগ্রহী? এর প্রধান কারণ হতে পারে যাযাদি এবং অন্য পত্রিকাগুলোর জন্ম লক্ষ্যের ভিন্নতা।

দ্বিতীয়ত, যাযাদি তার কাজের মধ্য দিয়ে বাকিদের মুখোশ উন্মোচন করে দিচ্ছিল। তৃতীয়ত, পত্রিকাটির মৌলিক নতুনত্ব ও আধুনিক উৎকর্ষ অন্যদের ঈর্ষার বিষয়বস্তু হয়েছিল। কিন্তু মিডিয়ার সব আয়োজন বৃথা যায়। কেননা তারা জানতো না সম্ভবত যায়যায়দিন নিজেও জানতো নাÑ যায়যায়দিন কতোটা শক্তিশালী। পেশি নয়, অর্থ নয়, কূটনীতির নয়Ñ পাঠকের উন্মত্ত ভালোবাসাই যায়যায়দিনের শক্তি।

৪. পাঠক যায়যায়দিনকে ভালোবাসেÑ কারণ যাযাদি টিকে আছে পাঠকদের জন্য। পাঠক যায়যায়দিনে আস্থা রাখেÑ কারণ যাযাদি নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ। পাঠক যায়যায়দিন পড়েনÑ কারণ যাযাদি ভালোর প্রশংসা এবং মন্দের সমালোচনা করে। পাঠক যায়যায়দিনের পাশে আছেনÑ কারণ যাযাদি নিজস্ব মতামত স্পষ্ট করে। মিডিয়ার ভ্রান্ত স্রোতের বিরুদ্ধে যায়যায়দিন লড়তে জানে।

যায়যায়দিন পাঠকের ভিন্নমত প্রকাশ করেÑ কারণ যাযাদি পাঠককে শ্রদ্ধা করে। সর্বোপরি যায়যায়দিন পাঠকের পত্রিকাÑ কারণ পাঠক নিজেকে যায়যায়দিনের অংশ মনে করে। গর্বের ব্যাপার এতো ক্রেডিটের কোনোটিকে যায়যায়দিন কখনো প্রশ্রয় হিসেবে নেয়নি। অন্যায় কোনো সুযোগ গ্রহণ করেনি। কেননা যায়যায়দিন জানে রেস্ট অফ মিডিয়ার আদর্শ গ্রহণ তার পক্ষে সম্ভব নয়।

তাই আজকের দিনে দৃপ্ত কণ্ঠে বলা যায় সোনালি সুদূর ফেলে যায়যায়দিন এগিয়ে যাবে দূর... বহুদূর। ধন্যবাদ শফিক রেহমানÑবাঙালি পাঠকদের কি সুন্দর এক উপহার দিয়েছেন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.