তেরো চোদ্দ বছর বয়স তখন, প্রচন্ড বই পাগল আমার হাতে মা তুলে দিয়েছিলেন লুইজা মে অলকটের কালজয়ী উপন্যাস "লিটল উইমেন" বইটি!
এজীবনে পড়া যে ক'টি বই থেকে আজও মুক্তি মিলেনি, তার একটি 'লিটল উইমেন', আরেকটি হলো বিভূতিভুষনের 'পথের পাঁচালী'। আমার জীবনে বেশ কিছু বই সহ এই দুটি বইয়ের প্রভাব ব্যাপক...! লুইজা মে অলকটের অসাধারন লিখনীর কারনেই কিনা জানিনা, মনে হতো বাইরে তুষার ঝরা মানেই ফায়ার প্লেসে আগুন ধরিয়ে, রকিং চেয়ারে বসে গভীর মনোযোগে বই পড়া! তুষারের চেয়েও যে জিনিসটি বেশি স্পর্শ করে তা হলো বৃষ্টি।
চারদিক অন্ধকার করে যখন ঝুম বৃষ্টি নামে, অসম্ভব ভালো লাগায় মন ভরে যায়। ছোট বেলায় অবশ্য খুব মন খারাপ হয়ে যেতো, বিশেষ করে বাবা, মা, ভাই বোনদের কেউ সেসময় বাসায় না থাকলে! প্রচন্ড অস্থির বোধ করতাম। তারপর, এক সময় লক্ষ্য করলাম, এমন বৃষ্টির দিন, আর সেসময় যদি সমবয়সী কাজিনরা এক সাথে হই, তখন বড় কারো পাশে গুটিসুটি বসে গল্প শুনতে ভালো লাগছে।
বড় হয়ে এক সময় আবিস্কার করলাম, এমন আঁধার করে আসা বৃষ্টির সময় চমৎকার কোন ইন্সট্রুমেন্টাল অথবা মন ছুঁয়ে যাওয়া গজল ছেড়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বই পড়াতেই যতো ভালোলাগা। বাইরে অন্ধকার, বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ, ঘরে আলো আঁধারিতে বসে স্লো মিউজিকের তালে বইয়ের জগতে হারিয়ে যাওয়া! অসাধারন এক অনুভূতি! সেসময় ফোন এলেও ধরার প্রশ্ন আসে না, সেলফোনও বন্ধ! রাত হলে, বাইরে তাকিয়ে ল্যাম্প পোস্টের আলোয় চকচকে রাজপথ দেখা, অপূর্ব মায়াবী দৃশ্য!
বর্তমান কিছুটা ভিন্ন... বাইরের পৃথিবীকে শুভ্রতার হিমশীতল চাদরে মুড়িয়ে দিয়ে তুষারপাতের সময়, আলো আঁধারিতে বসে গান শোনা হয়। বই পড়ার সুযোগ কিভাবে যেন অনেক কমে গেছে। তবে ছুটির দিনে এমন আঁধার করে আসা বৃষ্টি মানে আমার জন্য অন্যরকম ভালোলাগা... বাসার পাশেই একটি আর বাসা থেকে ২০ মিনিট ড্রাইভ করে গেলে আরেকটি অপেক্ষাকৃত বড় বীচ.. সমুদ্র নয়, বিশাল লেকের তীর ঘেঁষে বীচ... ঝমঝম বর্ষায় লেকের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটার নাচ, এক অপার্থিব দৃশ্য! সেসময় বাতাসের বেগ বেশি হলে ঢেউগুলোও সব নেচে উঠে, যেন সাগরের রূপ ধারন করে! আমি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখি।
২০ মিনিট ড্রাইভ দূরের বীচটি বেশ বড়, তবে খুব দামি এলাকায়।
পথের এক পাশে লেক, অন্য পাশে সারি ধরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মূল্যের সব বিলাসবহুল কন্ডোমিনিয়াম। তেমন ঝড় বৃষ্টিতে লেকের ধারে কেঊ ঘুড়তে যায়না, তখন পেয়ে যাই আমার প্রাইভেট বীচ! বৃষ্টির সময় বীচ সম্পূর্ণ ফাঁকা হলেও ভয় নেই কারন কন্ডো থেকে অনেকেই লেক দেখেন। আমার সাথে যাঁরা যান, তাঁরা কয়েক বার গাড়ি থেকে নেমে, দ্রুত ফিরে যান সেখানে। রেইনকোট ভিজে না যাওয়া পর্যন্ত আমি বীচে ঘুড়ে বেড়াই আর ঢেউয়ের তালে বৃষ্টির নাচ উপভোগ করি।
চারদিক আঁধার ঘনিয়ে বৃষ্টি নামলেই মনে হয়, "এমনও দিনে তারে বলা যায়- দিন", তবে কবি কেন এভাবে বলেছেন জানিনা!! ঠিক যেমন জানিনা, এমন ঝুম বৃষ্টির দিনে চিত্রা সিং এর "আকাশ মেঘে ঢাকা, শাওন ধারা ঝরে.." গানটির আবেদন হাজার গুনে বেড়ে যায় কেন!! এমন দিনে তো কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা, শুধু বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে।
তা লেকের উদ্দাম ঢেউয়ের তালে বৃষ্টির নাচ হোক, অথবা বড় বড় গাছের পাতা বা বাসার বাগানে ছোট ছোট গাছ আর ঘাসে বাতাসের তালে বৃষ্টির খেলা!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।