আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"টেলিভিশন" চলচিত্র রিভিউ

মাসুদ দেখে এলাম মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীর “টেলিভিশন” ছবিটি। এক কথায় অসাধারন। যদি কেউ বলে যে, দৃশ্যায়ন, এঙ্গেল, চিত্রনাট্য, কাহিনী, শিক্ষা, শালীনতা, গল্পের বিশেষত্ব, নাটকীড় মোড় সৃষ্টি এগুলোয় ছবিটির মুল্যায়ন করতে, তবে, আমি এটিকে ১০০% দেব। ১. ছবিটির একটা মজার দিক হল, টেলিভিশনকে কেন্দ্র করে কাহিনী গড়াতে থাকলেও এর শেষ হয় চেয়ারম্যান সাহেবের হজ্বে যাওয়ার দু:খকে প্রকাশ করে, এক কথায়, এই প্রথম কোন ছবি, যেটায় ইসলামী আদর্শকে কেন্দ্র করে এতকিছু করা হল, ফারুকী সাহেব বিশাল চ্যালেন্জ নিয়েছেন, বলতে গেলে বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম কেউ সাহস করলেন ইসলামী একটি চিন্তাকে এত কঠিনভঅবে ফুটিয়ে তুলতে। ১. মুলত, সারা ছবিতেই আমরা দেখতে পাই চেয়ারম্যান সাহেব টিভি দেখাকে পাপ কাজ বলে মনে করায় এর বিরোধীতা করে আসতেন, কিন্তু ছবির শেষাঙশে দেখা যায়, দু:খজনকভাবে ঢাকায় তার হজ্ব এজেন্সী ধোকা দেয়ায় তিনি অত্যন্ত দু:খ পান।

বাড়ি কি বলে মুখ দেখাবেন সে চিন্তা আর হজ্বে না যেতে পারার দু:খ তাকে অসুস্থ করে ফেলে। হোটেলের রুমে তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ক্রমে অসুস্থ হয়ে যেতে থাকেন। এমন সময় একদিন তিনি এক বাড়ীর টিভিতে হজ্বের দৃশ্য দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং নিজেই তার রুমের টিভিতে হজ্ব দেখা শুরু করেন। যে টিভি নিয়ে সারা জীবন বিরোধীতা করেছেন, সেই টিভি দিয়েই অতৃপ্ত হজ্বের বাসনা পূরন করেন। ২. ফটোগ্রাফী বলতে যদি শুধু বাটনে টিপ দিয়ে ছবি তোলাকেই বোঝাত, তাহলে আর সমস্যা থাকত না।

কিন্তু, একটি স্বার্থক ফটোগ্রাফীতে ফটোগ্রাফার যানেন, তাকে অবজেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড রেশীও, আলো, এঙ্গেল এগুলোতে অবশ্যই জ্ঞান থাকা দরকার। ফারুকীর এবারের ছবিটিতে মনপুরার তুলনায় আরো ভালো ফটোগ্রাফীর কাজ করেছেন, যদিও সিনেমায় সিনেমাটোগ্রাফীই হয়ত বলে। অনেকগুলো দৃশ্যই আছে যেগুলো জটিল ধরনের দৃশ্যায়ন হয়েছে। আমি ভাবতাম বিদেশী মুভি থেকেই এ সম্পর্কে শেখার আছে, তবে, এবার ফারুকীর দৃশ্যায়ন দেখে তাকে অভিনন্দন না দিয়ে পারছিনা, তার ছবিতেও শেখার আছে। তবে, আফছোছ, খুলনার এই বাজে পর্দায় দৃশ্যগুলো এতটা বোঝা গেলনা, পুরো মজাটা তুলতে পারলাম না।

তবে এর ডিজিটাল কপি বের হলে তা অবশ্যই খুব মজার হবে। ৩. ছবিটি দেখে হাল আমলের অনেক হিন্দি সিনেমার চাইতে বহু গুন ভাল মনে হয়েছে, যার জন্যে অনেকেই পাগল হয়ে যান। এর ছবির অনেকগুলো মেসেজ আছে। ৪. তবে ছবিটির একটা প্রধান সমস্যা আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে। কিছু ক্ষেত্রে কথা বুঝতেই পারিনী।

আবার হলের সাউন্ড সিস্টেমও এতটা স্বচ্ছ নয়। তবে, কখনও কখনও আবার আঞ্চলিক ভাষার কারনে বেশ মজাও লেগেছে। ৫. একটা ব্যাপার হল, আপনাকে কিছু শর্ত দেয়া হবে, যেমন একটা গ্রাম ধরুন যেখানে বিদ্যুত আছে, কিন্তু গোড়া ধরনের চেয়ারম্যান ছবি তুলবে না, টিভি দেখবে না, সেখানে কি কি হতে পারে সেটার একটা চিত্র ছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। যদি কেউ এখন এই যুক্তি ওই যুক্তিতে সব কিছুই ধরে বসেন তাহলে আর বিনোদনে সিনেমা বাদ দেন। ভারতের দাবাং, তালাশ, জাপানীজ ওয়াইফ, টার্মিনেটর কোন কিছুই যুক্তিপূর্ন হবেনা।

কেননা, যুক্তি দিয়ে হয়ত কেউ কমেন্ট করে বসবে, টার্মিনেটর? লোহা-লক্করের গাজাখুরী গল্প একটা, ফাউল গল্প। বা রেসিডেণ্ট ইভিল? গাজাখুরী স্বপ্নে দেখা কাহিনী। কথা হল, আপনি কাহিনী ভাল না লাগলে দেখবেন না, কিন্তু একটা গল্পকে কারন ছাড়া নেতিবাচক হয়ত আপনার কাছে, সবার কাছে না। টার্মিনেটর/এলিয়েন আপনার না ভাল লাগতেই পারে, তারমানে সেটা ফালতু হয়ে গেল এটা মোটেই সঠিক না। তবে দৃশ্যায়নে অযুক্তি থাকলে সেটা একটা সমালোচনার বিষয়।

কাহিনীকে মিসম্যাচ থাকলে সেটা সমালোচনার বিষয়। ৬. মজার ব্যাপার হল, ছবিটি চালানোর সময় দেখলাম windows media player, my computer desktop ভেসে উঠল। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারিনী। পরে বুঝলাম, এ ছবিটির ফির্ম ভার্সন এখানে আনা হয়নি। ডিজিটাল ভার্সনটাই আনা হয়েছে, যেটি কম্পিউটার প্রজেক্টর এর সাহায্যে দেখান হয়েছে।

আমার ধারনা, এগুলো আমরা সচরাচর যে প্রজেক্টর দেখী সেগুলোই, তাই ছবি এতটা ভাল আসবেনা, তবে কিছু করার নেই। কারন জানি, একটা ভাল সিনেমা প্রজেক্টরের জন্য যে লক্ষাধিক টাকার ইনভেষ্ট লাগবে, তার বর্তমান সিনেমা মালিকদের পক্ষে কষ্টকর। সারা বছর কর্মচারীদের বেতন যোগাড়েই কষ্ট হয়। আবার সবাই ডিজিটাল ভার্সন হয়ত ছাড়েনও না, ফিল্ম ছাড়েন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।