আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যিকারের পরোপকারী...

... কি যেন বলতে চাচ্ছিলাম ...

আমাদের তখন হল ভ্যাকান্ট। হলে ঢোকার কোন উপায় নেই। অথচ আমার এটিএম এর পিন কোড ভুলে গেছি এবং হলে আমার লকারে রাখা আছে পিন কোডের কাগজটি। মোটামুটি মনে করার চেষ্টা করলাম নাম্বারটা। আমার স্মরনশক্তি কখনোই ভাল না।

ফ্লেক্সিলোড করতে গেলে নিজের মোবাইল নাম্বারই মনে করতে পারি না। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম মেশিনে কার্ডটা ঢুকিয়ে পিন নম্বর দিলাম । নাহ্ নাম্বারটা ভুল গেজ করেছি। আমি তখন জানতাম না যে ভুল পিন তিনবার দিলে মেশিনের ভিতরে কার্ড আটকে যায়! সুতরাং তার পর কি হল সেটা নিশ্চই খুব সহেজেই ধারনা করতে পারছেন..... কিন্তু না - তার পর যা ঘটল সেটা আপনারা কেন আমি নিজেও কখনও ভাবিনি আর এখনও মনে হয় ব্যাপারটা স্বপ্ন ছিল। হ্যাঁ, আমার কার্ড আটকে গিয়েছিল এটা সত্য।

আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ইয়ং স্মার্ট ভদ্রলোক। উনি পুরো ব্যাপারটাই দেখেছেন। আমাকে বললেন, "আমারও একবার খুব জরুরী কাজে টাকা তুলতে যেয়ে ভুল পিন দেওয়ায় কার্ড আটকে গিয়েছিল। আমি জানি আপনার এখন কতটা খারাপ লাগছে। " স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রথমে মনে হয়েছিল লোকটার মনে কি কোন অন্য মতলব আছে নাকি (?) আসলে চারিদিকে যে অবস্থা তাতে মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন।

আমাকে বললেন কত টাকা তোলা দরকার ছিল? আমি বলতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু ঐ সময় টাকাটা খুব দরকার ছিল। তাই একটু সংকোচের সাথেই বললাম, তিন হাজার। ততক্ষনে তার নিজের টাকা উঠানোর কাজ শেষ। আমার জন্য দ্বিতীয়বার আরও তিন হাজার টাকা উঠালেন। তারপর আমার হাতে টাকাটা দিয়ে বললেন যে কোন এক সময় ফেরত দিলেই হবে।

আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা মনে হচ্ছিল! ঢাকা শহরে এরকম মানুষও থাকতে পারে!!! আমাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিলেন উল্টা পাশে তার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নং লিখে দিলেন। উনার নাম মোস্তফা শাহরিয়ার তারেক, পেশায় এ্যাডভোকেট। আমার নাম আর কোথায় থাকি তা জানতে চাইলেন। আমি শুধু আমার নাম আর বুয়েটে কোন হলে থাকি তা বললাম। আমি অবাক হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম... তিনি আমার হলের রুম নং, মোবাইল নং কোন কিছুই জানতে চাইলেন না!!! ... ভেবেছিলাম একদিন তার অফিসে যাব, কিন্তু যাওয়া হয়নি।

পরে ব্যাংকে তার এ্যাকাউন্টে টাকাটা জমা দিয়ে দিয়েছি। তার ভিজিটিং কার্ডের নাম্বারে ফোন করে কয়েকরা কথাও বলেছি। জানি না এই লেখা তারেক ভাই কোনদিন পড়বেন কিনা... তবে যারা পড়বেন তাদের মধ্যেই অনেক তারেক ভাই আছেন যাদের জন্য সমাজটা এখনও টিকে আছে, এখনও মানুষ মানুষকে কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতে পারে.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।