আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সুশিক্ষিত কর্মজীবি নারী ও কি স্বাধীন ?

আমি মানুষ, শুধু নারী নই,এই বোধ জাগাতে চাই সব নারীর ভেতরে।

পল্লী কবি জসিমউদ্দীন এর - কবর কবিতার দুটি লাইন এ মূহুর্তে খুব বেশী মনে পড়ছে ” হাতে তে তাহারে মারিত না য়ে শত যে মারিত ঠোঁটে” এই সমাজের শিক্ষিত নারীরা যারা নিজের জীবন ধারনের জন্যে স্বামী নামক প্রভুর উপর নির্ভরশীল নয়, যারা আর দশটি গৃহবধুর মত শুধু মাত্র খেয়ে পড়ে জীবন ধারনের জন্যই স্বামী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনকে সহ্য করেন মুখ বুজে- তারাই কি শুধুমাত্র নির্যাতিত ? আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমান অনুপাতে কাজ করেও যারা মানসিক ভাবে নির্যাতিত হন প্রতি পদে পদে, তাদের অবস্থা আরও করুণ আরও যন্ত্রণাময়। মিসেস শায়লা রহমান একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ সম্পন্ন করেন। গায়ের রঙ কালো হওয়াতে সারা জীবন ধরেই এক ধরনের হিনমন্যতায় ভুগেছেন তিনি, যা তার উপর আরোপিত ছিলো। লোকজনের কথায় মনে হতো কালো হওয়ায় যেন তারই হাত ছিলো।

আর তাই এম এ পরীার ১০ দিন আগে যখন পাত্র পক্ষ বিয়ের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করলো তখন শায়লার বাড়ীর মানুষ আর দ্বিমত করেনি যদি পাত্র পক্ষ বিগড়ে যায়। ফাইনাল পরীক্ষার দশদিন আগে একটি মেয়ের যাত্রা শুরু অন্য জীবন যাপনে- মেয়েটি যেন মানুষ নয় সে মেয়ে মানুষ - তার কোন বক্তব্য থাকতে নেই। স্বামীর সংসারে এসে শায়লা শুধু শিখলো কমপ্রোমাইজ আর স্যাক্রিফাইস করতে - মনকে শাসন, দমন করতে করতে ভুলেই যেতে লাগলো যে সে একজন মানুষ। শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আনন্দে গদ গদ এই ভেবে যে, এমন মেয়েই তো খুঁজেছিলাম- যে ঢাকা শহরে বড় হয়েও পল্লী গ্রামে এসে মাটির চুলায় রান্না করে গ্রামের লোকের ভূঁড়িভোজ করাতে পারবে। বাপের বাড়ীর লোকেরা পুলকিত এই ভেবে যে ” আমার মেয়েটা ও বাড়ীর সাথে বানিয়ে নিতে পেরেছে” ।

এই যে মানিয়ে নেয়া- এই যে প্রতিদিন নিজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আবার গড়া। এ বড়ই কষ্টের- বড় যন্ত্রণার। বাইরের লোকের তা বুঝবার উপায় নেই-এ শুধু নিজের মধ্যে ক্ষরণ। সন্তান লালন পালনের কারনে শায়লার স্কুলের চাকুরীটা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো- অথচ রহমান সাহেব নিজের পৌরুষের কারণে আজকে মনে করেন শায়লার যোগ্যতার অভাব ছিলো। শায়লা তো তার সন্তানকে খালি বাড়ীতে রেখে রহমান সাহেবের মত তার চাকুরীটি কনটিনিউ করতে পারেননি কারণ তিনি তো নারী তার উপর মা।

সমস্ত জীবনে স্যাক্রিফাইস তো তাকেই করতে হবে। রহমান সাহেব তার বিবাহিত জীবনের ২০ বছরে বাড়ীতে স্থায়ী কোন কাজের মানুষ রাখেননি। স্ত্রীর উপর পূর্ণ অধিকার স্থাপন করে তিনি মনে করেন ’শায়লা এ কাজ করতে না পারলে আর কি করবে ? সংসার সামলানো তো কোন কঠিন কাজ নয়’। এই সংসার সামলাতে গিয়েই শায়লা পলে পলে অনুভব করেছে তার জীবন শুধু লোকের যোগান দেবার জন্য। প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকেছে কিন্তু কাউকে কাছে পায়নি তার মাথায় পানি ঢালার জন্য।

। অথচ স্বামী সন্তানের জন্য তাকেই অসস্থু শরীরে নিজের হাতে রান্না করতে হয়েছে। অথচ এই রহমান সাহেবের সামান্য জ্বর হলেই বালতি মগ নিয়ে বসে যেতে হয় শায়লা কে মাথায় পানি ঢালার জন্যে। মাঝে মাঝে ভাবে শায়লা আরেকটা জীবন কি পাবে সে, শুধু নিজের করে একেবারেই নিজের।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.