আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা বাউল গানের কিংবদন্তি বাউল সম্রাট আবদুল করিমের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই
বাংলা বাউল গানের কিংবদন্তি শিল্পী বাউল আবদুল করিম। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়,অবিচার,কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি আধ্যাত্নিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও শহরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় মাত্র কয়েক বছর আগে।

আজ এই কিংবদন্বি বাউল শিল্পীর ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুদিনে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহ আব্দুল করিম। আব্দুল করিমের বাবা ছিলেন ইব্রাহিম আলী, মায়ের নাম নাইয়রজান বিবি।

গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে মাত্র ৮দিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। দারিদ্রতা ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। যা কিছু শিখেছেন তা তার নিজের চেষ্টায়। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’।

শৈশব থেকেই একতারা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। সঙ্গীতের প্রতি তিনি এতটাই অনুরাগী ছিলেন যে তা ছেড়ে চাকরিতে জড়াননি তিনি। ফলে কাটেনি তাঁর দারিদ্র্য এবং বাধ্য হয়ে নিয়োজিত ছিলেন কৃষিশ্রমে। জীবন কেটেছে সাদাসিধেভাবে। তবে কোনও কিছুই তাঁর সঙ্গীতপ্রেম ঠেকাতে পারেনি।

বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহ আবদুল করিম বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নিতে থাকেন কমর উদ্দিন, সাধক রশিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহীম মোস্তান বকশ এর কাছ থেকে। দীর্ঘ এ সঙ্গীত জীবনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের পাশাপাশি ভাটিয়ালি গানেও বিচরণ ছিল তাঁর। লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহ এর দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন আব্দুল করিম।

কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। স্বল্পশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এ পর্যন্ত বাউল শাহ আবদুল করিমের ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোলমেলা।

শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গানঃ বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে ,আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ,গাড়ি চলে না,আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া,কোন মেস্তরি নাও বানাইছে ,কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, বসন্ত বাতাসে সইগো, আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু ,মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও,আমি তোমার কলের গাড়ি,সখী কুঞ্জ সাজাও গো,জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে,মানুষ হয়ে তালাশ করলে,আমি বাংলা মায়ের ছেলে । সাম্প্রতিককালে এ সময়ের বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। (প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদ,শাহ আব্দুল করিম ও অভিনেতা আবুল খায়ের ) ২০০০ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক পান। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা এবং 'অটোবি'র আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন আব্দুল করিম।

তাঁর পাওয়া অন্যান্য পদক ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে- রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পদক ২০০০, আইডিয়া সংবর্ধনা স্মারক ২০০২, লেবাক অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০০৪, অভিমত সম্মাননা ২০০৬, সিলেট সিটি কর্পোরেশন সম্মাননা ২০০৬ ইত্যাদি। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট, কিডনির জটিলতা, ফুসফুসে ইনফেকশন এবং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেও তা যথেষ্ঠ ছিল না। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তীঃ বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগের চিকি‍ৎসার জন্য তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।

গুরুতর অসুস্থ্য হলে ২০০৯ সালেল ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর থেকেই সিলেটের নুরজাহান পলি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আব্দুল করিমকে লাইফসাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়ে ছিল। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ইং শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শাহ আব্দুল করিমের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে উজান ধল গ্রামে স্ত্রী সরলা বিবির কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.