আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহজিয়া। কাজ আর অকাজ। এ্যাকশন এন্ড এ্যাক্টিভিটি

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

আমরা কাজেও ব্যস্ত থাকি, আবার অকাজেও। দুইটাই ক্রিয়া, কিছু করা হয় দুইটাতেই। প্রিয় মিস্টিক ওশো, যার উপরে সালাম, দুইটা আলাদা অথচ গুরুত্বপূর্ন শব্দ ব্যবহার করেছিলো এই কাজ আর অকাজরে চিহ্নিত করতে। ইংরেজীতে শব্দ দুটো, এ্যাকশন এবং এ্যাক্টিভিটি। আপাত দৃষ্টিতে দুটি ব্যাপার একই মনে হইলেও পার্থক্যটা ঐ কাজ আর অকাজের।

এ্যাকশন আর এ্যাক্টিভিটি এক না, বরং যোজন যোজন পার্থক্যের। এদের চরিত্র অনেকটা আকাশ আর পাতাল। action is when situation demands it, you act, you respond. Activity is when the situation doesn't matter, it is not a response; you are so restless within that the situation is just an excuse to be active. এ্যাকশন আর এ্যাক্টিভিটির ভিতের উপরের আপাত: সরল ব্যাখ্যাটা ওশোর দেওয়া। যদিও সরল কিন্তু আমাদের আধুনিক (!) এই স্ট্রেসফুল, দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ বা মানসিক চাপযুক্ত সময়ে, ক্রমবর্ধমান স্ট্রেসের কারন বোঝার জন্য এই এ্যাকশন আর এ্যাক্টিভিটি বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। সহজ মানুষের আচরন হওয়ার কথা সহজ।

অথচ তার বিপরীতে শহুরে জীবন হয়ে উঠছে দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ, নানান রকমের মানসিক চাপের বোঝায় জর্জরিত। এর পেছনের একটা বড় ভূমিকা যার তা হলো অতিরিক্ত এ্যাক্টিভিটি, অপ্রয়োজনীয় অকাজে জড়ানো। এ্যাকশনের অন্যতম শর্ত হলো রেলিভ্যান্স বা সম্পর্কযুক্ত হওয়া। যা করবেন তা অর্থবোধক হবে, ইট শুড মেইক সেন্স। নাই কাজ তো খইভাজ - টাইপ না।

সেটা এ্যাক্টিভিটি। এ কারনে এ্যাক্টিভিটির রেলিভ্যান্স থাকে না, যদিও আনমাইন্ডফুল, অসচেতন লাইফস্টাইলের বদঅভ্যাসে আমরা কোনটা রেলিভ্যান্ট আর কোনটা ইরেলিভ্যান্ট সেই সেন্সটা হারিয়ে ফেলছি এবং অনেকে পুরো হারিয়েও ফেলেছি। ঠিক প্রয়োজনে ফোন করা এ্যাকশন, বিনাপ্রয়োজনে ফোন করে বকবক করা এ্যাক্টিভিটি। দুইটাতেই আপনি সময় খরচ করেন যদিও। এ্যাকশনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মোমেন্ট টু মোমেন্ট।

প্রতিটা সময়ে যা দরকার তা করা, স্বত:স্ফুর্ত ও স্বাভাবিক। অন্যদিকে এ্যাক্টিভিটি সবসময় অতীতের সাথে জড়িত যা বর্তমান সময়ের রেসপন্স না; বরং রেস্টলেস মনের বহি:প্রকাশ যা মূলত অতীতের কোন অভিজ্ঞতা থেকে বহন করা। এ্যাকশন যেখানে ক্রিয়েটিভ, এ্যাক্টিভিটি সেখানে ডেস্ট্রাকটিভ। একজন ভালো লেখক যখন নিজের ভিতরে সত্যিকারের লেখার তাগিদে একটা ভালো লেখা নামিয়ে ফেলেন ঐ মুহুর্তের লেখক মনের ডাকে (স্পন্টেনিয়াস); সেখানে একজন ফালতু ব্লগার কি পোস্ট করবে, কি পোস্ট করবে ভাবতে ভাবতে ফ্লাডিং করতে শুরু করে- একটা জঘন্য ছবি, দুই লাইনের কথা দিয়ে পোস্ট করে। অথচ একটা ক্রিয়েটিভ যেখানে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়, অন্যটায় সময় ক্ষেপন ছাড়া আর কিছুই হয় না।

বরং অন্যের বিরক্তি তৈরী হয়। যখন একজন ক্ষুধার্ত সে খায়, সেটা হলো এ্যাকশন। আবার একজন ক্ষুধার্ত না অথচ ফাস্টফুডের দোকানে হল্লা করে মুরগী রান চিবোয়, ইয়া বড় বার্গার সাটায় বিনাক্ষুধায় - সেটা হলো এ্যাক্টিভিটি। এই দ্বিতীয় ধরনের খাওয়া হলো ধ্বংসাত্বক। ওশো বলেন: THis eating is like violence; you destroy food, you crush your teeth and destroy food; it gives you little release of your inner restlessness. You are eating not because of hunger, you are simply eating beacause of an inner need, an urge to be violent. এই যে শারীরিক প্রয়োজন তা ছাড়াই খাবার গ্রহন করা, এটা কেবলমাত্র প্রাণীকূলের ভিতরে মানুষই করে থাকে এবং অভ্যাসটা তুলনামূলকভাবে খুব নতুন।

অতি আধুনিকায়নের এক পাশ্বপ্রতিক্রিয়ামূলক বদঅভ্যাস। ফলাফল? হাজারটা অসুখ। অল্প বয়সে ডায়াবেটিস এবং আরো শত রোগ। কেবলমাত্র অপ্রয়োজনে হাবিজাবি খাওয়ার অভ্যাসে শরীরে যে মেদজমে তার কারনে সাডেন ডেথ (হার্ট এ্যাটাক ও অন্যান্য) অতি আধুনিক ফেনোমেনা যা খুব বেড়ে গেছে আমাদের সময়ে এবং বাড়তেই থাকবে। দরকার নেই তারপরেও একগাদা চিনি আর দুধ দিয়ে দিনের ভিতরে বারবার ১৪বার চা খাওয়া আরেকটা উদাহরন।

অনেক ধরনের অবসেশন মূলত: অকাজ বা এ্যাক্টিভিটি। টিভির পর্দার দিকে বিনা প্রয়োজনে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকা এবং তাবত চ্যানেলের রিমোট ঘুরানোর পরিচিত অভ্যাস থেকে শুরু করে চুইংগাম চিবানোর মতো অসংখ্য এ্যাক্টিভিটিতে আধুনিক মানুষ ডুবন্ত। ব্লগে হুদাই আসক্তিও অনুরূপ এক এ্যাক্টিভিটি। সিগারেট খাওয়াও অপ্রয়োজনীয় অকাজের উদাহরন যা নি:সন্দেহে একটা এ্যাক্টিভিটি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অহেতুক রেগে ওঠার বদঅভ্যাস অনেকের জন্য এ্যাক্টিভিটি।

কেউ অফিসে বসগিরি করতে এই এ্যাক্টিভিটিতে এনগেজ হয়ে মনে করে খুব ভালো ম্যানেজ করছেন তিনি। আসলে কচু! এ্যাক্টিভিটির জন্য মানুষ রিল্যাক্সড হতে পারে না, কারন রেস্টলেস মাইন্ড সব সময় কিছু না কিছু অকাজে ডুবতে চায়। ইগো প্রজেক্ট করে যেন সে খুব ব্যস্ত, আসলে সে এ্যাক্টিভিটি বা অকাজে এনগেজড। মোটেও প্রোডাক্টিভ বা ক্রিয়েটিভ না। ওশোর কথায়: Action is beautiful, actions comes as a spontaneous responsel; life needs response. You are hungry you seek food, you are sleepy you sleep. It is out of total situation that you act. এ্যাকশন আর এ্যাক্টিভিটির ভিতরে পার্থক্যটা জানতে ও বুঝতে পারার পরে একদিন ল্যাবে এক্সপেরিমেন্ট করছি।

হঠাত নিজে বোঝার আগেই দেখি অভ্যাশ বশত: আমি কফি খাওয়ার ভেন্ডিং মেশিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মাথায় কে যেন বলছে কফি খেতে যাওয়া উচিত। কিভাবে যেন তখন হঠাত মনে হলো এটা আসলে (কফি খাওয়ার নির্দোষ) প্রয়োজন থেকে যাওয়া নাকি স্রেফ অভ্যাসের জন্য? বুঝলাম অভ্যাস। কফি খাওয়া কোন রেসপন্স না, আমার ঘুমও পায়নি বা অন্যকিছু। আসলে অভ্যস্ততা (এ্যাক্টিভিট সবসময় অতীতের সাথে রিলেটেড যেমন বারবার করার ফলে তৈরী অভ্যাস)।

সাইকোলজীক্যালি অন্যভাবে দেখলে আসলে তখনকার ব্যস্ত এক্সপেরিমেন্ট থেকে সরে আসার অবচেতন মনও এর (এ্যাক্টিভিটি) পেছনে দায়ী। কাজ রেখে অকাজে ছোটা রেস্টলেস মনের একটা সহজাত প্রবণতা। কিন্তু এই কনসাসনেসটা বা সচেতনতাটা থাকলে কাজ থেকে অকাজের পার্থক্যটা বোঝা যায়। টাইম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সবগুলোই লালনের ভাষায় 'সহজ মানুষের' সহজিয়া উপায়ে করা সহজ হতে পারে কোনটা এ্যাকশন আর কোনটা এ্যাক্টিভিটি সেইটা বুঝতে শিখলে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.