আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@কুরআন পড় এবং জান্নাতের সিঁড়ি অতিক্রম করে উচ্চে ওঠ!

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

{{সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান এর ফযীলত}} ভূমিকা: মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, মানব জাতির দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন ও আখেরাতের অনন্ত জীবনের পরিপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কিতাব। এটি মূলত আমাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক ও মৃত্যু-পরবর্তী বিচার দিবসের মহাবিচারক আল্লাহ্ তা'আলার বাণী, যা তিনি তাঁর বান্দা হিসেবে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন তাঁর একান্ত বিশ্বস্ত রাসূলের (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাধ্যমে। আল্লাহ্ মানবজাতিকে অনেক নেয়ামত দান করেছেন, কিন্তু শুধুমাত্র কুরআনের নেয়ামতটাকেই পরিপূর্ণতা দিয়েছেন। তাই এই কুরআনের সবটুকুতেই রয়েছে ফযীলত এবং ফায়দা। কুরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করলেও পাওয়া যায় দশটি নেকী।

পরন্তু রয়েছে বুঝে-শুনে পড়ার এবং মেনে চলার জন্য অসামান্য প্রতিদান। দুনিয়ার জীবন প্রতিদানের নয়; বরং কর্মের, তাই আমরা উপলব্দি করতে সক্ষম হই না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, এই উপলব্দি ও উপলব্দিহীনতার মাধ্যমেই চলছে আমাদের পরীক্ষা; প্রকৃতপক্ষে যে কারণে আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহে কিছু দিনের বসবাস। কুরআনের দাবী: যে কথা ভূমিকায় অসমাপ্ত রয়ে গেছে; প্রতিটি বস্তু বা কথারই কিছু দাবী থাকে, আবেদন থাকে। মহান আল্লাহর বাণী-যা আমাদের জন্য দুনিয়া-আখেরাত নিয়ে এক মহাপরিপূর্ণ জীবন বিধান-তারও রয়েছে দাবী ও আবেদন।

আর আমাদের নিকট কুরআনের দাবী হলো তিনটি- এক) কুরআনকে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে হবে, দুই) এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে এবং তিন) সাধ্যানুযায়ী কুরআনের বিধান অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশকে পরিচালিত করতে হবে। এই তিনটি দাবী পূরণ করতে ব্যর্থ হলে কুরআন কেয়ামতের দিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে নালিশ করবে; যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ! অন্যদিকে এই তিন দাবী পূরণে সফল হলে কেয়ামতে ব্যক্তির জন্য কুরআন আল্লাহর আদালতে সুপারিশ করবে। সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফযীলত: কুরআনের ফযীলতের অসংখ্য দিক ও বিভাগের মধ্য হতে এই স্বল্প পরিসরে শুধু সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু দলীল তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "সূরা আল-বাকারা কুরআনের শীর্ষভাগে অবস্থিত সর্বোন্নত চূড়া। এর প্রত্যেকটি আয়াতের সাথে আশিজন ফিরিশ্তা অবতীর্ণ হয়েছে।

'আল্লাহু লাইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল কাইয়্যূম' –শীর্ষক আয়াতটি আরশের নীচ হতে বের করে সূরা আল-বাকারায় শামিল করা হয়েছে। সূরা ইয়াসীন কুরআনের হৃদয় সদৃশ। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের সুফল লাভের জন্য তা পাঠ করে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। মৃত্যুপথযাত্রীর নিকট সূরাটি (সূরা ইয়াসীন) তিলাওয়াত করো" [আহমাদ হতে ইবনে কাসীর] তিনি (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন: "তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয় যে গৃহে সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত হয়, সে গৃহে শয়তান প্রবেশ করে না।

" [মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ] ইমাম আহমাদ বলেন: আমাকে আবূ নাঈম, তাকে বাশার ইবনে মুহাজির, তাকে আব্দুল্লাহ্ ইবন্ বুরাইদ তার পিতা বুরাইদা এই বর্ণনা শুনিয়েছেন: "আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম। আমি শুনতে পেলাম তিনি বলছেন: "সূরা আল-বাকারা শিখ। তা গ্রহণে বরকত ও বর্জনে আক্ষেপ মিলে। তার (সূরার) উপর বাতিল শক্তির কোন ক্ষমতা চলে না। " বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।

অতঃপর বললেন: "সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে ইমরান শিখ। কারণ ওরা দু'টো আলোকপিণ্ড। কেয়ামতের দিন তাদের পাঠকমণ্ডলীকে শামিয়ানা, মেঘপুঞ্জ কিংবা পাখির ঝাঁকের মত মাথার উপর এসে ছায়া দান করবে। কেয়ামতের দিন কুরআন পাঠক কবর হতে উত্থানর সঙ্গে সঙ্গে কুরআন এক তরুণের বেশে তার সামনে হাজির হয়ে বলবে: আমাকে চিনেছ কি? সে বলবে: না, আমি তোমাকে চিনি না। তখন সেই তরুণ বলবে: আমি তোমার সহচর কুরআন।

আমি তোমাকে দিনের ক্ষুৎপিপাসা ও রাতের নিদ্রা হতে বঞ্চিত রেখেছিলাম। প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসার পেছনে লাগে। আজ সকল ব্যবসা তোমার পেছনে জড়ো হয়েছে। তারপর তার ডানে প্রশস্ত রাজ্য এবং বামে স্থায়ী নিকেতন জান্নাত প্রদত্ত হবে। তার মস্তকে মহামর্যাদার মুকুট স্থাপন করা হবে।

তার পিতা-মাতাকে এমন পোষাকে সজ্জিত ও অলংকৃত করা হবে পৃথিবীবাসী তাদের সামনে কখনো যা উপস্থিত করতে পারবে না। তারা সবিস্ময়ে প্রশ্ন করবে: আমাদেরকে কেন এসব পরানো হলো? জবাব আসবে: তোমাদের সন্তানের কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে জান্নাতের সিঁড়ির ধাপগুলো অতিক্রম করে উপরে উঠতে থাক। এভাবে যত উপরে গিয়ে তার তিলাওয়াত শেষ হবে, তত উপরেই তার নিবাস নির্ধারিত থাকবে। তিলাওয়াত ধীরে চলুক কি দ্রুত; ফলাফল একইরূপ পাবে।

" [ইমাম আহমাদ হতে ইবনের কাসীর] এছাড়া অন্যান্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারণ, তা পাঠকারীর জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। তোমরা দু'টি আলোকচ্ছটাময় সূরা আল-বাকারাহ্ ও সূরা আলে-ইমরান পড়; কেননা, এ দু'টি সূরা কেয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেন দু'টি মেঘখণ্ড অথবা দু'টি ছায়া অথবা দু'ঝাঁক পাখির মত। তারা এসে এ দু'সূরা পাঠকারীদের পক্ষ নেবে। ' [মুসলিমঃ ৮০৪] অন্য এক হাদীসে এসেছে, 'কেয়ামতের দিন কুরআন আসবে যারা কুরআনের উপর আমল করেছে, তাদের পক্ষ হয়ে।

তখন সূরা আল-বাকারাহ্ ও সূরা আলে-ইমরান থাকবে সবার অগ্রে। ' [মুসলিমঃ ৮০৫] আল্লাহ্ তৌফিক দিন আমাদেরকে দুনিয়াতে দানকৃত তাঁর এই পরিপূর্ণ নেয়ামত থেকে অঢেল অর্জনের জন্য। ১৪.০৮.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব। ছবি কৃতজ্ঞতা: King Fahd Qurancomplex, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।