আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চু রাজাকার ও জামায়াতে ইসলামী

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। অনেক অনেক প্রতীক্ষার পর প্রথম একটি আশার কলি ফুটে উঠল। প্রায় চল্লিশ বছরের পূর্বেকার মানবাধিকার বিরোধী অপরাধের বিচারের রায় হল। আল-হামদু লিল্লাহ, হাজার বার আল-হামদু লিল্লাহ।

একই সঙ্গে প্রত্যাশা হল বাকি সব যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার যথাসময়ে এবং যথানিয়মেই হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার মাঝে প্রথমে রায় হওয়ার কথা ছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার। কিন্তু মামলার রায়ের সময় ঘনিয়ে আসলে জামায়াত-শিবির তৎপর হয়ে ওঠে। এরা বেশ কৌশলে মামলার বিচারকের কম্পিউটার হ্যাক করে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার কথোপকথনকে চোরাই পথে কব্জা করে। পরে তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে এই মামলার গতিপথ রোধ করার চেষ্টা করে।

তাদের এই চোরাই কর্মের জন্য সাঈদীর মামলার পর্যালোচনা চলছে। আশা করা যায়, তা যথানিয়মে এবং যথাসময়েই প্রস্ফূটিত হয়ে ন্যায়ের ঘ্রাণ ছড়াবে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার এক সময় জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ছিল। পরে মতবিরোধ বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সে দল ত্যাগ করে বা দল থেকে বহি®কৃত হয়। যাই হোক, মোট কথা হল এক সময় সে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিল এবং তখনই সে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

আজ তার বিচারের রায় হল, সেই রায়ের ব্যাপারে জামায়াতিদের মনোভাব ইতিবাচক না হলেও খুব একটা নেতিবাচক নয়। তাই এরা এখানে তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নি। কিন্তু মৌনতা অবলম্বনের মাধ্যমে এরা যুদ্ধাপরাধের বিচারকেই মেনে নিল, এটাই হল এখনকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা। হ্যা, জামায়াত বাচ্চু রাজাকারের বিচারকে মেনে নিয়েছে। তা না হলে এদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ন্যূনতমপক্ষে একটি নেতিবাচক মন্তব্য বা বক্তব্য পাওয়া যেত।

তা পাওয়া যায় নি। তবে কোনো কোনো নেতা বলেছে যে, যেহেতু বাচ্চু রাজাকার এখন তাদের দলে সদস্য নয়, তাই তার ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। একজন ব্যক্তির ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া না থাকা এক জিনিশ, আবার তার বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচারের রায়ের বিষয়ে কিছু না বলা অন্য জিনিশ। তার বিরুদ্ধে রায়কে মেনে নেওয়া মানে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ন্যায্যতাকেই মেনে নেওয়া। একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, সে ন্যায়ই যখন জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতার বিরুদ্ধে যায়, তখনই মাত্র ওরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং সহিংস হয়ে ওঠে! জামায়াতে ইসলামীর সম্মতি না থাকলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত হবে না, তাদের সম্মতি-অসম্মতির ভিত্তিতে বিচার পরিচালিত হয় না, হবে না।

কিন্তু তাদের এই মৌনতা, মেনে নেওয়াটা বিচারের ন্যায্যাকেই তুলে ধরে। তাই আমরা সহজেই এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, যেহেতু সে-সময়ে জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নেতা বাচ্চু মাওলানা রাজাকার ছিল, তখন জামায়াতের অন্যান্য নেতারাও, যারা সে সময়ে নেতৃত্বের আসনে ছিল, সে সব নেতা-পাতি নেতারাও রাজাকার বা দেশবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। একই সঙ্গে আমরা আমাদের প্রত্যাশার জিহ্বাটাকে একেবারে লোলভাবে ঝুলিয়ে না দিয়েও বলতে পারি যে, জামায়াতসহ অন্যান্য দলে, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যারা আছে, তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যে-সব পাকিস্তানি সেনাসদস্য সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। তা সম্ভব না হলে অন্তত প্রতীকীভাবে আমাদের এই দেশের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতীকী মামলা হবে এবং প্রতীকী বিচার হবে।

বিচার করাটা কঠিন। কিন্তু বিবেকের পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন নয়। আমরা হয়ত পাকিস্তানিদের বিচার করতে পারব না, কিন্তু এমন রায় দিয়ে যাবো, যা বিশ্ব-ইতিহাসে সেই সব পাকিস্তানিকে অপরাধী হিসাবেই সাব্যস্ত করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন। আমিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।