আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিহ্ন ০০৫

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

রহমান নিঃশব্দে নিচু টেবিলটার ওপরে ট্রেটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কায়েস লক্ষ করলো, রহমান ভুলেও দিলনাজের মৃতদেহের দিকে তাকাচ্ছে না। কায়েসের চোখ চলে যায় মুস্তাফার দিকে, ছোকরা একেবারে হাঁ করে দেখছে দিলনাজের শরীরটাকে। শালা। কায়েস সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, সে মুস্তাফাকে পছন্দ করে না।

চেয়ারে বসে কায়েস একটু এলিয়ে দেয় শরীরটাকে। মনসুর ফৌজদার রহমানকে নিচু গলায় কী যেন বলেন, রহমান বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে। মালিক রুমাল বার করে নিজের মুখ মোছে আবারও। কায়েস চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে গোটা দিনটার কথা। মনসুর ফৌজদার আজ সবাইকে ডেকেছিলেন "জাহাজডুবি" নিয়ে কথা বলতে।

জাহাজডুবি একটা মাঝারি দৈর্ঘ্যের টেলিফিল্ম, যার কাহিনী কায়েসের কীবোর্ড দিয়েই বেরিয়েছে। মনসুর ফৌজদার এর আগেও বেশ কিছু টেলিফিল্মের পেছনে টাকা খরচ করেছেন, সম্প্রতি শারমিন তাঁকে রাজি করাতে পেরেছে এই জাহাজডুবির প্রযোজনায়। শারমিনের কথা মনে পড়তে কায়েস তাকালো দরজার দিকে। ওসিকে ফোন করতে এত দেরি হচ্ছে কেন ওর? কায়েস নিজের বান্ধবীর কথা ভাবতে গিয়ে মনে মনে হোঁচট খায়। আজকে ফেরার পথে শারমিন তাকে একগাদা কথা শোনাবে।

এভাবে দিলনাজ দুররানিকে দেখার মাশুল কায়েসকে গুনতেই হবে। শারমিন জাহাজডুবির পরিচালিকা, কিন্তু মাঝেমধ্যে সে কায়েসকেও পরিচালনার আওতায় নিয়ে আসতে চায়। পাশে দাঁড়ানো মুস্তাফার দিকে একবার বিতৃষ্ণ চোখে তাকালো কায়েস। এখনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দিলনাজকে দেখছে বেওয়াকুফটা। এই ব্যাটা হবে জাহাজডুবির নায়ক।

নায়িকা মিথিলার সাথে একটা ছোট্ট লাইফবোটে করে সাগরে ভেসে বেড়াবে সে গোটা সিনেমা জুড়ে। বাস্তব জীবনে এমন ঘটনা ঘটলে মিথিলার কপালে দুঃখই ছিলো। রহমান ঘরে ঢোকে একটা ভাঁজ করা সাদা চাদর নিয়ে। তারপর দ্রুত হাতে সেটা খুলে ঢেকে দেয় দিলনাজকে। মুস্তাফার কণ্ঠ থেকে একটা হতাশ ঘড়ঘড়ে শব্দ বেরিয়ে আসে।

মালিক ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার দেখে নেয় মুস্তাফাকে। কায়েস আবারও ঘটনাটার কথা ভাবে। সে আর শারমিন স্টাডিতে বসে কথা বলছিলো মনসুর ফৌজদারের সাথে, এমন সময় রহমান নক করে ঘরে ঢোকে। সোজা মনসুর ফৌজদারের পাশে গিয়ে কানে কানে একটা কিছু বলে। মনসুর ফৌজদার ভুরু কুঁচকে তাকান তার দিকে, তারপর শারমিনকে বলেন, "শারমিন, একটু এসো তো আমার সাথে।

" কায়েস শারমিনের দিকে তাকায় সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে। শারমিন উঠে বেরিয়ে যায় মনসুর ফৌজদারের সাথে। কায়েস স্টাডির নিঃশব্দ পরিবেশে মিনিটখানেক বসে থেকে সিদ্ধান্ত নেয়, বেরিয়ে গিয়ে ড্রয়িংরূমে একটু বসবে সে। স্টাডির দরজা খুলে সে বেরিয়ে আসে, তারপরে কী মনে করে ড্রয়িংরুমের দিকে না গিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে তখনও উঠছে রহমান, তার পেছন পেছন মনসুর ফৌজদার আর শারমিন।

কায়েস অনুসরণ করে তাদের। কায়েসকে দেখতে পেয়ে মনসুর ফৌজদার কিছু বলেন না, শারমিন শুধু একটু পিছিয়ে পড়ে কায়েসের সঙ্গ ধরে ফিসফিস করে বলে, "তুমি আবার আসছো কেন?" কায়েস গম্ভীর হয়ে বলে, "একমাত্র মূলধন নিয়ে আসছি। " শারমিন চুপ করে যায়। কায়েসের প্রিয় বুলি এটা। তার একমাত্র মূলধন নাকি কৌতূহল।

তবে ঘরে ঢুকে এ দৃশ্যটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। বিছানার ওপর নিঃসাড়ে পড়ে আছে দিলনাজ, আর সোফার উপর ঢলে পড়ে আছেন নিরুপমা ফৌজদার। কায়েসের মনে পড়ে, সে সাথে সাথেই তাকিয়েছিলো মনসুর ফৌজদারের দিকে। ভদ্রলোক প্রচন্ড চমকে উঠেছিলেন। কায়েস শারমিনের নার্ভের প্রশংসা না করে পারলো না।

শারমিন একটা অস্ফূট শব্দ করে উঠলেও এগিয়ে গিয়ে দিলনাজের গায়ে হাত রেখে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাক দিয়েছিলো, "দিলনাজ!" মনসুর ফৌজদার স্ত্রী নিরুপমার দিকে ঝুঁকে পড়ে তাকে মৃদু গলায় ডাকছিলেন, "নিরু! নিরু!" শারমিন দিলনাজের নাকের সামনে হাত ধরে বিবর্ণ মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, "শ্বাস পড়ছে না!" মনসুর ফৌজদার তখন শুধু বলেছিলেন, "ওহ নো!" শারমিন ফোন হাতে ঘরে ঢোকে। মনসুর ফৌজদারকে বলে, "স্যার, পুলিশ আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে। " মুস্তাফা ফ্যাকাসে মুখে বলে, "পুলিশ?" ... (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।