আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ার্ল্ড কাপ কৃকেট ও সাইড এফেক্ট

মুভি ক্রিটিক ব্লগ (প্রথম বাংলা মুভি ব্লগ) ★★★★★ © ২০০৭ - ২০১৩ ওয়েবসাইট: www.saifsamir.com

প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে- বিজ্ঞানী নিউটনের এ সূত্রটি ধর্মচর্চা থেকে শুরু করে ক্রীড়াচর্চা পর্যন্ত যেন এক আপ্তবাক্য। ওয়ার্ল্ড কাপ কৃকেটের মতো বড় মাপের আয়োজনও কিছু প্রতিক্রিয়া বহন করে। প্রথমেই বলবো 'ওয়ার্ল্ড কাপ' নামকরণ নিয়ে। ভেবে দেখুন- কয়েকশ' দেশের এই পৃথিবীর অঙ্গুলে গোনা ১৬টি দেশ নিয়ে যে কৃকেট প্রতিযোগিতা সেটা নাকি 'ওয়ার্ল্ড কাপ'! তাই বলা যায় প্রযুক্তির কল্যাণে নয় বরং কৃকেটের কল্যাণেই বিশ্ব এখন ছোট হয়ে আসছে! অবশ্য বৃটিশরা যদি একদা উপনিবেশ স্থাপন না করতো তবে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলুড়ে দেশের সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরো কমতো। বৃটিশদের হাতে বিকাশ ঘটেছে কৃকেটের।

কলোনিগুলোতে এ আবিষ্কার দান করে তারা দাসত্বের স্মৃতিটুকু জাগরুক রেখেছে। আমরা বলি কৃকেট ভদ্রলোকের খেলা। কারণ একদা ভদ্রলোক বলতে ইংরেজদেরই বোঝানো হতো। এই ভদ্রলোকগুলোই প্রচলন করেছেন ওয়ার্ল্ড কাপের। কিন্তু দুর্ভাগ্য তারা নিজেরাই এখনো 'বিশ্ব ভদ্রলোকের' স্বীকৃতিটুকু আদায় করতে পারেননি।

তবে তাদের এক সময়ের ভৃত্য ইনডিয়া-পাকিস্তান কিন্তু ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে গুরুর মান অর্জন করেছে। এদিকে বাংলাদেশ এ ভদ্রলোকদের আসরে প্রথম যোগ দেয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৭ সালে এসে কৃকেটকে কিন্তু আর নিরেট ভদ্রলোকের খেলা বলা যাচ্ছে না। কারণ ইতিমধ্যেই কৃকেটের এই 'ভদ্রলোক' তকমাটি নানা কেলেঙ্কারির কাছে হার মেনেছে। ঘুষ তথা পাতানো খেলা, ডোপ পাপ, খুনসুটি- আরো কতো কি চলছে।

এখন বাকি থাকে 'অনিশ্চয়তার খেলা' উপাধিটুকু। তবে বিজ্ঞানের জটিল কলাকৌশলের ফাদে পড়ে অনিশ্চয়তার মজাটুকুও কমতে শুরু করেছে। এক সময়ের ঘাড় নিচু কৃকেটাররা ব্যাট উচু করে খেলার সম্মান যেমন নষ্ট করেছেন, আবার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রযুক্তির অতি সাহায্য নিতে গিয়ে খেলার উত্তেজনাও কমিয়ে ফেলছেন। বলা যায় কৃকেটের ভেতরেও পলিটিক্স ঢুকে গেছে। কৃকেটকে যে রাজকীয় খেলা বলা হয় তা কি আর এমনি এমনি! ইদানীং অবশ্য খেলা আর খেলাই থাকছে না।

খেলা এখন বাণিজ্য- অনেক ক্ষেত্রে প্রেস্টিজ ইসু। পাকিস্তান-ইনডিয়ার খেলায় এক পক্ষের পরাজয় যেন অন্য পক্ষের পারমাণবিক বিজয়! এ দুটি দলের মধ্যে খেলা যেন দুটি দেশ কিংবা দুটি ধর্মের মধ্যে যুদ্ধ! অন্যদিকে বাংলাদেশ-ইনডিয়া খেলা চলাকালে কূটনৈতিক বৈঠকের আবহ সৃষ্টি হয়! কোল্ড ওয়ার, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণ-বৈষম্যের বোটকা গন্ধ কৃকেট থেকেও আসছে। এক সময় তো সাউথ আফৃকা বর্ণ-বৈষম্যের অভিযোগে ওয়ার্ল্ড কাপে নিষিদ্ধই ছিল। সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে টিমে বর্ণ-বৈষম্যের ধোয়া উঠেছে। ইনডিয়ার সাবেক মুসলিম অধিনায়ক আজহার উদ্দিনের সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে হার হলে গালমন্দের যে শোরগোল পড়তো, তা সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন ছিল।

আর ১৯৯৯ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়কে তো রীতিমতো 'একাওরের পুনরাবৃত্তি' বলে ধরে নেয়া হয়েছিল! সাংবাদিকদের একটি গোষ্ঠী অবশ্য অনেক কিছুকেই একাওরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। যেমন কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় একটি পত্রিকা লিখে ফেলে- এ নির্যাতন একাওরের বর্বরতাকে হার মানায়! বুঝুন অবস্থা! এ কথা ঠিক বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, কিন্তু সেই আবেগের বেগকে সংবরণ করতে না পারলে তা পাগলামিতে গড়াবে। আমাদের অসুস্থ মনমানসিকতার আরো কিছু নমুনা দেখুন। বাংলাদেশের পর যদি আপনি পাকিস্তানকে সাপোর্ট করেন তবে একটি গ্রুপ ধরে নেবে আপনি একজন ইনডিয়া বিরোধী, প্রকারান্তরে স্বাধীনতা বিরোধী! আপনাকে প্রশ্ন করা হবে কেন আপনি ইনডিয়াকে সাপোর্ট করছেন না যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছিল? এর সঙ্গে যুক্ত হবে ইনডিয়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ, পাকিস্তান আমাদের শত্রু ইত্যাদি। অন্যদিকে এমনও অভিযোগ আছে, যদি আপনি ইনডিয়াকে সাপোর্ট করেন বলা হবে আপনি ইনডিয়ান দালাল কিংবা পাকিস্তান তো মুসলিম কান্টৃ।

আমাদের উচিত তাদের সাপোর্ট করা! আসলে দুটি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় আমাদের মাথার মধ্যে এমন কিছু ভূত ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, আমরা খেলাকেও কলুষিত করে ফেলেছি। একজন বিখ্যাত লেখক আছেন যিনি পাকিস্তানকে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না। তার মতো একজন পন্ডিত ব্যক্তির কাছে এমন গোড়া আচরণ কাম্য হতে পারে না। অতি ভক্তি যেমন চোরের লক্ষণ তেমনি অতি বিরক্তি যে কিসের লক্ষণ কে জানে! এবারের ওয়ার্ল্ড কাপের সবচেয়ে বড় সাইড এফেক্ট পড়বে আমাদের ফুটবলের ওপর। সম্প্রতি বাংলাদেশের ফুটবলকে পুনরুজ্জীবিত করতে, দর্শকদের দৃষ্টি ফেরাতে এবং খেলাটাকে পেশায় রূপ দিতে বি. লিগ চালু হয়েছে।

কিন্তু এটি এমন এক সময়ে চালু হয়েছে যখন ওয়ার্ল্ড কাপ কৃকেটের পর্দা উঠতে মাত্র ১০ দিন বাকি। একদিকে বাংলাদেশি ফুটবলের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ, অন্যদিকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ওয়ার্ল্ড কাপ কৃকেট ক্রেইজ যে বি. লিগকে শুরুতেই কোণঠাসা করবে তা অনায়াসে বলা যায়। এর জন্য অবশ্য বাফুফের অদূরদর্শিতা কম দায়ী নয়। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এবার বাংলাদেশে খোদ ওয়ার্ল্ড কাপই 'সাইড এফেক্টের' শিকার হয়েছে। অস্থিতিশীল বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড কাপের আমেজ পুরোপুরি জমে উঠছে না।

দুর্নীতির রূপ-কথা, উচ্ছেদ কাহিনী, অনিশ্চিত নির্বাচন, সম্ভাব্য নির্বাসন, যৌথ বাহিনী ইত্যাদি দশ কথা ওয়ার্ল্ড কাপের আমেজে ভাগ বসাচ্ছে। এটা কেয়ারটেকার সরকারের সাইড এফেক্ট। কি আর করা- উঠোন ঝাড় দিতে গেলে ধুলো তো উড়বেই! এটাও একটা সাইড এফেক্ট বটে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.