আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্বল মায়ের আবেগী সন্তান

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

এতগুলো সন্তান আমার দেশ মায়ের। ষোল কোটি সন্তান। ষোল কোটি সন্তানের একটাই মা। মা দুই হাতে আগলে ধরে থাকতে চায় সবগুলো সন্তানকে।

কত আর পারে শ্যামল মায়াবতী দুর্বল মা একা একা? আমার নানুর এগারো সন্তান। এগারোটা সন্তানের প্রত্যেকে নানুকে সমান ভাবে পায় নি। প্রথমদিকের সন্তানের পেয়েছে অনেক বেশি। পরের দিকের সন্তানের বড় হয়েছে প্রথম দিকের সন্তানদের হাতে। বকা খেয়েছে আদর পেয়েছে বড় ভাই বোনের হাতে।

নানু জন্ম দিয়েই অনেকটা হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। এতগুলো সন্তানের ক্ষেত্রে তো এই হওয়া উচিত, প্রথম দিকের সন্তানের সবল হয়ে, মাকে ভালবেসে দায়িত্ব তুলে নিবে হাতে। পরের সন্তানদের বড় করবে। আমাদের অভাগী দেশ মায়ের ভাগ্যে সেটা জুটে নি। ষোল কোটি সন্তানদের দেখাশোনা করার মত দায়িত্ববান সাহায্যকারী সন্তান পায় নি কত কাল! একটু সফল সবল হতেই সবাই নিজেরটা নিজে বুঝে খাচ্ছে।

খুটে খাচ্ছে। পশু পাখিদের যেমন, মায়ের আদর বেশিদিন ভাগ্যে জুটে না, জান বাঁচানোর স্বার্থপরতায় খুব দ্রুত সংসার গুটিয়ে চলে যায় নিজ নিজ পথে, মাকে কখনও ফিরেও দেখে না, আমাদের মায়ের সন্তানদের অবস্থা এমন। সবাই তো আর একরকম হয় না, কেউ প্রতিভায় ঠাসা, কেউ একটু সরল সোজা। যারা প্রতিভায় ঠাসা, একটু খুঁজতেই সিঁড়ি পেয়ে যাচ্ছে, তারা তর তর করে উঠে যাচ্ছে। অবশ্য খুব উঁচুতে না কখনই।

অন্যরা হা ভাতের মন নিচেই আছে। পেটে ক্ষুধা, মনে ক্ষুধা। রক্তের টান বলে কথা, মনের ক্ষুধা মিটে কেবল একদম সিঁড়ির উঁচুতে কাউকে উঠতে দেখলেই হল, পুরো পরিবার বড় উদ্দেলিত হয়। জানে কিন্তু, একটা ক্রিকেট ম্যাচ জিতে যাওয়ায় মাস্টার্স পাশ করা বেকার রফিকের চাকরি হয়ে যাবে না। একটা নোবেল প্রাইজের জন্য কলিমুদ্দির পরিবারের সবাই পেট ভরে খাওয়া শুরু করবে না।

একটা তথাকথিত নেতা 'দুনর্ীতির' দায়ে জেলে ঢুকলেই এসিড ঝলসে যাওয়া রহিমা জীবন ফিরে পাবে না। তবু, তবু এক একটা সাফল্যে আমরা কাঙাল জাতি কি উদ্দেলিত হয়ে যাই! একটা নোবেল প্রাইজ প্রতিটা ঘরের আলোচনার খোরাক জোগায় ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এক জাদুকরী ছোঁয়ায় পুরো জাতিকে বদলে দেয়। ক্রিকেটে একটা বিজয় আমাদের দিশেহারা করে দেয়। আকাশের একটা চাঁদ না কেবল, যত গ্রহের যত কৃত্রিম, অকৃত্রিম উপগ্রহ, চাঁদ আছে, সবই যেন কেউ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।

বিষ্মিত, আনন্দিত, উত্তেজিত আমাদের ধারণ করার ক্ষমতা এক পৃথিবীর থাকে না। গত এক বছরে দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পালটে যাওয়া নাটক দেখছিলাম বিতৃষ্ণ, অনাগ্রাহী দর্শক হয়ে। কি সাজানো ঘটনা, দারুণ প্ল্যানড গেইম বা গেইম প্ল্যান। সাধারন আমাদের কি এসে যায় এসবে? তবু, মায়ের গুটি কতক হাতে গোণা সন্তানের সফলতা বিফলতা আলাপেই আমাদের আনন্দ, দু:খ, ক্ষোভ। বন্ধুত্ব, শত্রুতা।

এভাবে দেখে খুব মায়া লাগছে আমার দেশের জন্য, দেশের মানুষগুলোর জন্য। জাতিগত ভাবে 'আমাদের' জন্য। দুর্বল মা ও তাঁর আবেগী সন্তানদের জন্য ভালবাসা রইলো। --------------------------- ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা: [link|http://www.colorsofbangladesh.com/gallery/albums/pakhir_chokhey/bangladesh.jpg|GLv

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.