আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিগ্রি বেচার প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ (২)

জাদুনগরের কড়চা

!@@!531239 !@@!531240 বাংলাদেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমতি দেয়া হয় ১৯৯২ সালে। দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আসনসংখ্যার কথা চিন্তা করে অনুমতি দেয়া হয়, কিন্তু এই আইনের ফাঁক গলে যে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠবে, তা হয়তো ভাবা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক মনোভাবের উদাহরণ পত্রিকাতেই দেখা যায়। মোবাইল কোম্পানিরা যেমন বিভিন্ন প্যাকেজের কোন সেট কতো টাকা, তা নিয়ে আধা পাতার বিজ্ঞাপন দেয়, সেরকম অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অমুক ডিগ্রি এতো টাকা, এরকম বিজ্ঞাপন দিচ্ছে হরদম। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিন্দু মাত্র সমস্যা নাই।

বিশ্বের অনেক প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারী, এবং বেসরকারী বলেই অনেক প্রশাসনিক জটিলতা এড়িয়ে উন্নত মানের গবেষণা করতে পারছে। কিন্তু ন্যুনতম কিছু বিষয় না থাকলে বাসাবাড়ির সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে তৈরী হয়েছে, তাতে পুরা ব্যাপারটাই জঘন্য অবস্থায় চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এদের স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ধানমন্ডি বা গুলশানের ভাড়া বাসায় চালু হয়েছে। ধানমন্ডিতেই কেবল ১৯টি "বিশ্ববিদ্যালয়" আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনত্বের বিচারে দুনিয়ার মধ্যে ধানমন্ডি এলাকা যে ১ নাম্বার, তা বলাই বাহুল্য।

এবার আসি এদের শিক্ষক কিভাবে যোগাড় হয়, তাতে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক নেই। বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে দিয়ে ক্লাস নেয়ানো হয়। যারা ক্লাস নেন, তাদেরকে বলে দেয়া হয় ছাত্রদের বেশি বেশি নম্বর দিতে, নইলে আগামী বার ক্লাস দেয়া হবে না। আর বাপের নগদ টাকায় পড়ছে বলে এসব ছাত্রের জোশও বেশি থাকে, নম্বর কম পেলে রীতিমত এসে দাবী করে।

আমি গুলশানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টাইম ক্লাস নিয়েছিলাম। ওখানে এক ছেলেকে এ না দিয়ে বি দেয়াতে সে হতভম্ব হয়ে এসে বললো, আগে কোনো টিচার তাকে এরকম নম্বর দেয় নি। আর পরীক্ষাই দেয়নি এমন এক ছেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পরেও আমাকে ইমেইল করে অনেক ঝুলাঝুলি করেছে। তাও তো ভালো, যদি শিক্ষকরাও কিছুটা অন্তত গ্রহনযোগ্য হয়। অনেক কিপ্টা বিশ্ববিদ্যালয় আবার সেটাতেও দুই নাম্বারি করে থাকে।

বুয়েটে যখন আমরা শেষ বর্ষে পড়তাম, তখন অনেকেই প্রাইভেট টিউশনি করাতাম। এমন সময় এক বন্ধুকে দেখি, দিনের বেলাতে ঘন্টা দুয়েকের জন্য হন্ত দন্ত হয়ে সেজে গুজে কোথাও যাচ্ছে। অনেক চাপাচাপি করাতে সে বললো, ও একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে একটা বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছে!!! ঐ বিষয়টা আমরা বুয়েটে ২ সেমিস্টার আগে পড়েছিলাম মাত্র!!। ওকে নিজের পুরা পরিচয় দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পই পই করে মানা কেনো করেছিলো ও শুরুতে বুঝতে পারেনি। পরে বুঝেছে, ওকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েটের শিক্ষক হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিলো!! দেশের সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এরকম না।

ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, অ্যামা, এরকম কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক আছে, এবং ওখানে গবেষণার কাজও হয়ে থাকে। কিন্তু ৬০-৭০টি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা করে চলছে। পরের পর্বে থাকবে ফার্মগেটের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞতা। [চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.