আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটির আকুতি আমি বিচার চাই

অন্যায় এর প্রতিবাদ 'তারা কথা বলতে না বলছে। আমাকে ভয় দেখিয়ে বলছে, কাউকে কিছু বলবি না। বলবি, কাপড় ধোয়ার সময় পানি ধরার কারণে শরীরে ঘা হইছে'- ডুকরে কেঁদে উঠে মুখ খুলল কিশোরী। এর আগে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলতেই সাহস পাচ্ছিল না সে। নানা হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কগ্রস্ত।

গতকাল শনিবার দুপুরে কাপাসিয়ার বড়টেক গ্রামে পুলিশের কাছে এক সাজানো সাক্ষাৎকার দেয় সে। ওই একই বক্তব্য কালের কণ্ঠের কাছে দিতে চাইছিল নির্যাতিত কিশোরী। তবে অভয় পেয়ে সে অকপটে বলেছে স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠজন প্রভাবশালী সাইফুল হাকিম মোল্লা কাজল ওরফে কাজল মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রেখার নির্যাতনের কথা। কিশোরী কাঁদতে কাঁদতে বলে, 'মসলা বাটার পুতা দিয়ে আমার পা ছেঁচে (থেঁতলে) দিয়েছে। গরম তেলের মধ্যে হাত চাইপা ধরছে।

আমার বুকে আর গলায় খামচে দিছে। খালায় আমার বুকে কামড়ও দিছে। ' মেয়েটি জানায়, আড়াই মাস আগে রাজধানীর মিরপুরে কাপাসিয়ার এমপির কথিত এপিএস কাজলের বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার পর থেকেই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খৰ। মাঝেমধ্যেই তাকে মারধর করত কাজল ও তার স্ত্রী রেখা। ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেয়েটি বলে, 'ওই দিন খালা বাসায় আছিল না।

খালু বাথরুমে আমারে জোর করে ...। পরে এইটা খালা জাইনা আমারে আবার মারে। ' মেয়েটি জানায়, নির্যাতনের কারণে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাড়িচালককে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় রেখা। গাড়িচালক বাড়ির কাছে মেয়েটিকে ফেলে রেখে চলে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন লোক তার ঘরে এসে হুমকি দিচ্ছে।

যুবলীগের আসাদ ও রুহিতা মেম্বার মেয়েটিকে বলে, সাংবাদিকদের ঘটনা জানানোর কারণে তার ক্ষতি হয়েছে। তারা যা বলে তাই করলে ভালো হবে। তা না হলে বিপদ হবে। গত শুক্রবার সকালে রুহিতা তার বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে যায়। সেখানে দিনে ও রাতে কয়েকজন লোক আসে।

তারা কিশোরীকে ভয় দেখিয়ে বলে, 'তোর বাবা গরিব মানুষ। তোরা এসব কইরা কী পাবি? কথামতো চল। আমরা দেখব। ' মেয়েটি জানায়, গত বৃহস্পতিবার কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদে তাকে এসব কথা বলেই বিরত রাখে সবাই। সংবাদ সম্মেলনের আগে কাজল, আসাদ, রুহিতাসহ কয়েকজন একইভাবে ভয় দেখায় মেয়েটিকে।

গতকাল ওসি ও ইউএনও তাদের বাড়িতে আসবে শুনে রুহিতা মেয়েটিকে নিয়ে আসে। আনার সময় বলা হয়, সে যেন কোনো 'উল্টাপাল্টা কিছু' না বলে। এসব কারণে পুলিশের কাছে শেখানো বক্তব্য দিয়েছে মেয়েটি। গতকাল বিকেলে সে কালের কণ্ঠকে বলে, 'আমারে জোর কইরা ওই কথা বলাইছে। আমি এখন বুঝতে পারছি।

আমি বিচার চাই। আপনেরা আমারে সাহায্য করেন। গাজীপুরের কাপাসিয়ার এমপি সিমিন হোসেন রিমি’র এপিএস পরিচয়দানকারী কাজল মোল্লার কুকৃত্তি ঢাকতে মাঠে নেমেছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি গণমাধ্যমে কাজল মোল্লা তার এপিএস নন বলে জানালেও, কাজল মোল্লাকে রক্ষা করতে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগের জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এমপি কাজল মোল্লাকে ফেলে দিতে পারবেন না।

কারণ, সিমিন হোসেন রিমির নির্বাচনে তার বেশ ভালো ভূমিকা ছিল। এছাড়াও কাজল মোল্লা এমপির দূরসম্পর্কের মামা হন। এদিকে, কাজল মোল্লাকে বাঁচানোর জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন কাপাসিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. শহীদুল্লাহ। স্থানীয় ওই আওয়ামী লীগের সূত্রটি জানায়, ‘সিমিন হোসেন রিমির পরোক্ষ ইঙ্গিতে বিষয়টি মেকাপ করার জন্য মাঠে রয়েছেন মো. শহীদুল্লাহ। ’ এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালকের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট সোহেল রানা জানান, ‘ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচালিকাকে উদ্ধার, সু-চিকিৎসা, পুনর্বাসন, আইনি সহয়তা ও সত্য অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশি সহায়তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টায় কাপাসিয়া থানায় যাই।

’ এ সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন থানায় ছিলেন না। মেয়েটিকে উদ্ধারের কথা বলে কাপাসিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার রাহাত খান মেয়ের বাবা ও আমাকে থানায় বসিয়ে রাখেন। তিনি আমাদের জানান, মেয়েটি উদ্ধারের জন্য মহিলা মেম্বার কানিজ ফাতেমা বাড়িসহ কয়েটিস্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় তিনি রাত সাড়ে ৭টার দিকে দিকে সাধারণ ডায়েরির আবেদনটি রাহাত খানের কাছে জমা দেই।

তিনি বাথরুমে যাবার কথা বলে কক্ষ ত্যাগ করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাপাসিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. শহীদুল্লাহ আমার মোবাইলে ফোন করেন। এ সময় তিনি জানতে চান, ‘আমি জিডি করতে পারি কিনা। আমাকে থানা থেকে চলে যেতে বলেন। ফোন রাখার ১০-১৫ মিনিটের পর শহিদুল্লাহ বিপুল সংখ্যক সরকার দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে থানায় আসেন।

’ এর কয়েক মিনিট পর সেকেন্ড অফিসার রাহাত খান ফিরে আসেন। এ সময় নেতাকর্মীরাও বলেন, ‘সাধারণ ডায়েরি করার প্রয়োজন নাই। আপনারা চলে যান। তিন-চারদিন পর মেয়ের সাথে আমরা আপনাকে কথা বলিয়ে দিব। ’ পরে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ে আমি রাত ৯টার দিকে মেয়ের বাবাকে নিয়ে থানা থেকে চলে আসি।

সেকেন্ড অফিসার রাহাত খান এ সময় নিজের অসাহায়ত্ব প্রকাশ করেন। অ্যাডভোকেট সোহেল রানা বলেন, একটি কিশোরী নির্যাতনের ঘটনায় একজন সাবেক সংসদ সদস্য এভাবে দলবল নিয়ে থানায় আসতে পারেন আমার পূর্বে জানা ছিল না। এদিকে, এক প্রশ্নের জবাবে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, মেয়েটিকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে সাবেক এমপি শহিদুলাহ সাহেব থানায় এসেছিলেন। কাউকে হুমকি দিতে নয়। ওসি বলেন, শনিবার সকাল ১০টায় তিনি মেয়েটিকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবেন বলে জানিয়েছেন।

মেয়েটি উপস্থিত হলে তার কথা শুনে ব্যাবস্থা নিব। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য পদত্যাগকৃত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের বোন সিমিন হোসেন রিমির সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া হয়নি। http://www.sangbad24.net/?p=4761 এমপি’র ‘এপিএস’ কর্তৃক ধর্ষিত কিশোরীকে সোমবার হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশ নিজস্ব প্রতিবেদক, সংবাদ২৪.নেট, ঢাকা: গাজীপুরের কাপাসিয়ার সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির এপিএস পরিচয়দানকারী সাইফুল হাকিম মোল্লা কাজল ওরফে কাজল মোল্লার পাশাবিক নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকা কিশোরীকে সোমবার সকালে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শক, গাজীপুরের এসপি ও কাপাসিয়ার ওসিকে এ নির্দেশনা পালন করতে বলা হয়েছে।

আদালতের এ আদেশ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমানকে বলেছেন হাইকোর্ট। রোববার মহিলা আইনজীবী সমিতির করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অ্যাডভোকেট সালমা আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.মোখলেছুর রহমান। শুনানিতে আদালত আবেদনকারীদের কাছে জানতে চেয়েছেন মেয়েটি এখন কোথায় আছে? জবাবে সালমা আলী বলেন, ‘মেয়েটা কোথায় আছে সে ঘটনা জানতে আমরা কাপাসিয়ায় গিয়েছিলাম।

স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য পাইনি। এক পর্যায়ে থানায় গিয়েছি জিডি করার জন্য। আমাদের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট সোহেল রানা আকন্দ থানায় যান। থানায় বসে জিডিটি লেখা হয়। থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার জিডি তালিকাভূক্ত না করে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে আধাঘন্টা বসিয়ে রাখেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শহীদুল ইসলাম থানায় হাজির হন। এবং সোহেলকে ধমক দেন। শহীদুল ইসলাম সোহেলকে হুমকি দিয়ে বলেন, কার অনুমতি নিয়ে জিডি করতে আসেন। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে ভয়ে ফিরে আসেন সোহেল রানা। ’ তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে আমরা খুঁজে পাইনি।

তবে শনিবার রাতে চ্যানেলটুয়েন্টিফোর টিভি সংবাদ দিয়েছে যে, মেয়েটিকে অভিযুক্তরা একটি মোটরসাইকেলে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ এবং চিকিৎসার প্রয়োজন। ’ এরপর আদালত তাকে হাজির করার নির্দেশ দেন এবং রুল জারি করেন। Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.